ত্লাবং ঝর্ণা বা ডাবল ফলস বা ক্লিবুং ঝর্ণা – বান্দরবান

ত্লাবং ঝর্ণা বা ডাবল ফলস বা ক্লিবুং ঝর্ণা যে নামেই আপনি জানেন না’কেন এটি পাহাড়ের দেশ বান্দরবানের রুমা উপজেলায় সুংসাং পাড়ার নিচে অবস্থিত। স্থানীয় বম গ্রাম থেকে দক্ষিণ-পূর্বে এর দূরত্ব প্রায় ২.৫ কিলোমিটার। কেওক্রাডং থেকে প্রায় ২ ঘণ্টা হেটে সুংসাং পাড়া আর থাইক্ষাং পাড়ার মাঝের জঙ্গলের অত্যন্ত গভীরে এই ঝর্নাটি যেতে হয়।

অন্য ঝর্ণাগুলোর থেকে এর মৌলিক পার্থক্য হল, এটাতে ঝর্ণাধারা আছে দুটো।  দুটি প্রবাহ প্রানশা বা প্রাংশা (বামে) ও পাঙ্খিয়াং বা পাংখিয়াং (ডানে) ঝিরি মিলে দুটি আকর্ষনীয় জলপ্রপাত তৈরী হয়েছে। ২টা ঝর্ণা একসাথে থাকার কারণের একে ডাবল ফলস বলা হয়। বর্ষা ও শীত সবসময়ই এ ঝর্ণায়  কম – বেশি পানি থাকে।

কিভাবে যাবেনঃ

ত্লাবং ঝর্ণা (Tlabong Jhorna Double Falls) দেখতে হলে বান্দরবান আসতে হবে। ঢাকা থেকে বান্দরবান এই পথে চলাচল করে ডলফিন, শ্যামলী, এস আলম সার্ভিসসহ বেশ কয়েকটি পরিবহনের বাস। ভাড়া ৬০০-৭০০ টাকা। বান্দরবান থেকে বাস বা চান্দের গাড়িতে করে যেতে হবে রুমা সদর উপজেলা। বাস ভাড়া ১০০ টাকা। প্রতি এক ঘণ্টা পরপর একটি করে বাস বান্দরবান থেকে রুমা বাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। সেখান থেকে পরবর্তী গন্তব্য বগালেক। চান্দের গাড়িযোগে বগালেক ভাড়া ১৮০০-২৫০০ টাকা।

বগালেক থেকে পরের পথটুকু ট্রেক করে এগোতে হবে। ঘণ্টা তিনেক হাঁটলেই দার্জিলিংপাড়া হয়ে পৌঁছে যাবেন বাংলাদেশের পঞ্চম উচ্চতম শৃঙ্গ কেওক্রাডংয়ে। এরপর কিছুটা হাঁটলেই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ গ্রাম পাসিংপাড়া। পায়ের নিচেই মেঘ আর বৃষ্টির লুটোপুটি। আচমকা হাওয়ায় মেঘে ঢেকে যায় দেহ, ওহ্! চোখে না দেখলে কারও সাধ্য নেই অন্যকে বোঝানো। এবার নিচে নামার পালা, প্রায় এক হাজার ফুট নিচে সুংসাংপাড়া। পাথুরে রাস্তা, দিগন্ত ছোঁয়া বৃক্ষরাজি, অরণ্যের সাপ-ব্যাঙের লুকোচুরি অবলোকন করতে করতে সুংসাং পাড়ায় এসে হাজির হবেন। চারদিকে পাহাড়বেষ্টিত সুংসাংপাড়া পেছনে ফেলে গভীর অরণ্য আর ঝিরি মাড়িয়ে বীরদর্পে এগিয়ে যেতে হবে আপনাকে। দু-চারটি জোঁক মামা কখন যে রক্ত চুষে নিবে টেরই পাবেন না। প্রায় দু’ঘণ্টা হাঁটার পর অবারিত পানি পড়ার রিমঝিম শব্দ কানে ভেসে আসবে আপনার। বুঝবেন, এবার সময় হয়েছে ডাবল ফলসের স্বচ্ছ টলটলে হিমশীতল জলে নিজের ক্লান্ত শরীরটাকে একটু ভিজিয়ে নেওয়ার।

থাকা-খাওয়াঃ

ত্লাবং যাত্রাপথে প্রথম রাতটা কাটাতে পারেন বগালেক পাড়ায়। এখানে পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা আছে। সিয়াম দিদি কিংবা লারামের দোতলা কাঠের বাড়িগুলোতে থাকতে গুনতে হবে জনপ্রতি ২০০ টাকা। এখানে ডিম ভাজি-আলু ভর্তাসমেত খিচুড়ি মিলবে ১০০ টাকায়। পরের দিন ত্লাবং ঝর্ণা দেখে পরের রাতটা কাটাতে পারেন সুংসাংপাড়ায় রবার্ট বমের ঘরে। পাড়া থেকে চাল-তরকারি সংগ্রহ করে রান্না করতে হবে নিজেদেরই। ২০০ টাকায়ই থাকার বন্দোবস্ত হয়ে যাবে এখানে। পাহাড়ি মুরগির ঝোল দিয়ে ধোঁয়া ওঠা জুমের চালের ভাত খেতে পারবেন শ-খানেক টাকার বিনিময়েই। যে জায়গায়ই থাকুন না কেন, সকালে উঠে ঢুলুঢুলু চোখে পায়ের নিচে মেঘের সমুদ্র দেখাটা কিন্তু এককথায় নিশ্চিত।

খরচঃ ঢাকা থেকে চার-পাঁচজনের দলের যাওয়া-আসা, থাকা-খাওয়া আর গাইড খরচ মিলিয়ে জনপ্রতি তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা খরচ হবে।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: ভ্রমণ পাগল,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: এপ্রিল 22, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.