কেওক্রাডং – বান্দরবান

কেওক্রাডং (Keokradong) পাহাড় বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলায় বাংলদেশ ও মায়ানমারের সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশের পঞ্চম উচ্চতম পর্বত। এর উচ্চতা ৯৮৬ মিটার (৩২৩৫ফুট প্রায়, জি পি এস রিডিং হতে প্রাপ্ত)। কেওক্রাডং শব্দটি মারমা ভাষা থেকে এসেছে। মারমা ভাষায় কেও মানে ‘পাথর’ ক্রা মানে ‘পাহাড়’ আর এবং ডং মানে ‘সবচেয়ে উঁচু’। অর্থাৎ কেওক্রাডং মানে সবচেয়ে উঁচু পাথরের পাহাড়।

বাংলাদেশের ট্র্যাকারদের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় রুটটি হচ্ছে বগা লেক-কেওক্রাডং-জাদিপাই। দু-তিন দিন হাতে সময় নিয়ে অসম্ভব সুন্দর কিছু মুহূর্ত আর দুর্দান্ত রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিয়ে আসতে পারবেন।

ছোট বড় পাহাড়, ঘন জঙ্গল, এবং নানা ধরনের পশুপাখিতে পরিপূর্ণ এই দুর্গম এলাকাটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। এই পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে আপনি অবাক হবেন। রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষদের কাছে কেওক্রাডং এক অন্যরকম আকর্ষণের নাম। শীতকালে অ্যাডভেনচারপ্রেমী বহু পর্যটক এই পাহাড়টি দেখতে আসেন। দূর থেকে কেওক্রাডাং এর চূড়া শূন্যে মিলিয়ে আছে বলে মনে হলেও চূড়ায় উঠলে পাহাড় মেঘের মিতালী আপনাকে আন্দোলিত করবে মায়াবী আকর্ষনে। এখানকার আকর্ষণের মধ্যে রয়েছেঃ সবুজ পাহাড়ের তাক লাগানো সৌন্দর্য, ঝর্ণাধারা, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ এবং পাহাড়ের উপর থেকে মেঘের লুকোচুরি।

কিভাবে যাবেনঃ

কেওক্রাডং যেতে হলে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে বান্দরবান। ঢাকা থেকে বা চট্টগ্রাম থেকে বাসে বান্দরবান যাওয়া যায়। বান্দরবান শহর থেকে চান্দের গাড়ি(ফোর হুইল ড্রাইভ), বাস, সি এন জি করে রুমা যাওয়া যায়। চান্দের গাড়ি/জীপ রিসার্ভ করলে প্রায় ৩০০০/৪০০০ টাকার মত ভাড়া পড়বে যা মৌসূম ও পর্যটকদের সমাগম ভেদে ভিন্ন হয়ে থেকে।

আর সার্ভিস এর বাসে করেও রুমা যেতে পারেন সে ক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ১০০ টাকা। বাসের সিট তেমন ভালো মানের নয়। বান্দরবান শহর থেকে রুমা যেতে সময় লাগবে কমবেশি ২ ঘণ্টার মত। রুমা নেমে সার্ভিস এর চান্দের গাড়ি করে যেতে হবে রুমা বাজার, ভাড়া ৩০ টাকা জনপ্রতি।

নিয়ম অনুযায়ী রুমা বাজার থেকে পাহাড়ে কোথাও বেড়াতে যেতে হলে আপনাকে গাইড নিতে হবে, দিনপ্রতি গাইড সার্ভিস চার্জ ৫০০ টাকা। বাজারে গাইড সমিতি আছে তাদের কাছে গেলেই গাইড পাবেন । গাইডকে সাথে নিয়ে আর্মি ক্যাম্পে গিয়ে নিয়ম অনুযায়ী নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর ইত্যাদি তথ্য নিবন্ধন করতে হবে। বড় দল গেলে আগে থেকে একটি কাগজে সবার নাম, ঠিকানা, পেশা, ফোন নম্বর ও বাসায় যোগাযোগের নম্বর সহ একটি তালিকা আগে থেকে প্রস্তুত করে নিয়ে যেতে পারেন।

যেহেতু পাহাড়ি পথে হাঁটতে(ট্রে্কিং)হবে তাই, বিশেষত বৃষ্টির দিনে আপনাকে অবশ্যই ট্রেকিং এর উপযুক্ত জুতা বা স্যান্ডাল সাথে রাখতে হবে। তেমন জুতা সাথে না থাকলে রুমা বাজার থেকে ট্রেকিং এর উপযুক্ত রাবার এর স্যান্ডেল কিনে নিতে পারেন। দোকানে গিয়ে পাহাড়ে ওঠার জন্য ভালো স্যান্ডেল বললেই তারা বের করে দেবে আপনাকে।

রুমা বাজার থেকে কেওক্রাডং যাবার পথ হলো রুমাবাজার>বগা লেক>কেওক্রাডং। সাধারনত ২ ভাবে রুমা বাজার থেকে বগা লেক যায় লোকে। ১)চান্দের গাড়ী করে ২)ঝিরি পথে হেঁটে ।

রুমা বাজার থেকে সার্ভিস এর কিংবা রিজার্ভ চান্দের গাড়ী করে যেতে হবে বগা লেক বা বগা লেক এর কাছাকাছি যতদুর গাড়ী যায়। শীতকালে চান্দের গাড়ী বগালেক পর্যন্তই যায়, বর্ষায় চান্দের গাড়ীর শেষ গন্তব্য থাকে কমলা বাজার পর্যন্ত। বাকি পথটুকু পায়ে হেঁটে যেতে হয়, পিচ্ছিল পাহাড়ি খাড়া পথে ঐ সময়ে গাড়ী চালিয়ে উঠা সম্ভব হয় না বলে। চান্দের গাড়ী রিসার্ভ করলে ভাড়া নিতে পারে ২২০০-২৫০০ টাকা আর সার্ভিসের গাড়ীতে ১৫০-২০০ টাকা জনপ্রতি।প্রায় ঘণ্টা দেড় গাড়ী যাত্রার পর কমলা বাজার এসে পোঁছাবেন।

এর পর আপনাকে পায়ে হেঁটে (ট্রেক করে) বগালেক উঠতে হবে। এই ঊঠাটা প্রথম যারা পাহাড়ে উঠছেন তাদের জন্য একটু কষ্টের হ্যে থাকে , কিন্তু তা কেওক্রাডং এর পথে ট্রেক করার প্রাক প্রস্তুতী ও হয়ে যায় বটে। আধাঘন্টা(ধীরে হাঁটলে ১ ঘন্টা) ট্রেক করে পৌছে যাবেন পাহাড়ের উপরের অনিন্দ্য সুন্দর বগালেক এ । সাধারনত এ যাত্রায় পর্যটকগন বগালেকে রাত্রীযাপন করে থাকেন।

গাইড ই আপনার জন্য কটেজ ঠিক করে দিবে। ভাড়া জনপ্রতি ১২০-১৫০ টাকা। বিভিন্ন কটেজ আছে এখানে একতলা দু তলা। তবে সিয়াম দিদির কটেজের ভালো নাম ডাক আছে। পরদিন সকালে খুব ভোরে শুরু হবে আপনার ফাইনাল মিশন। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে গাইড সহ রওয়ানা দিবেন কেওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে। খুব হেলেদুলে হেটে গেলেও সময় লাগবে তিন থেকে সারে তিন ঘণ্টার মত।

কোথায় থাকবেনঃ

আপনি বগালেক এ রাত্রি যাপন করবেন। গাইড ই আপনার জন্য কটেজ ঠিক করে দিবে। ভাড়া জনপ্রতি ১২০-১৫০ টাকা। বিভিন্ন কটেজ আছে এখানে একতলা দু তলা। তবে সিয়াম দিদির কটেজের ভালো নাম ডাক আছে। আর যদি কেওক্রাডং রাত যাপন করতে চান তাহলে কেওক্রাডং চুড়ায় উঠার আগেই একটা রেস্টুরেন্ট পাবেন উনাদের কটেজ আছে বললে ব্যবস্থা করে দিবে। ভাড়ার হিসাব বগালেকের মতই।

কোথায় খাবেনঃ

আপনি যে কটেজে থাকবেন সেখানেই খেতে পারেন। অথবা গাইড কে বললে মুরগীর ব্যবস্থা করে দিবে চাইলে নিজেরাও রান্না করতে পারেন। খাবার জনপ্রতি তারা নেই ১০০-১২০ টাকা। তবে গরু বা খাসি বলে কোন গোশত খাওয়াতে চাইলে মুসলিম রা না খাওয়াই ভালো। আমার মতে সবচেয়ে ভালো নিরামিষ খাবার খাওয়া অথবা মুরগি এনে নিজেরা জবেহ করে পাক করতে দেওয়া।বগালেক ছাড়াও আপনি কেওক্রাডং এ দুপুরে খেতে পারবেন খাবারের নিয়ম মান দাম একই বগালেকের মত। এছাড়া বগালেক থেকে কেওক্রাডং যাবার পথে কয়েকটা পাড়া পাবেন সেখানেও কিছু খাবারের দোকান পাবেন যেমন চা , কলা, রুটি ও পাহাড়ি ফল পেপে,কমলা খেতে পারবেন।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: ভ্রমণ পাগল,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: এপ্রিল 13, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.