বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হচ্ছে বিল চলন বিল (Chalan Bill)। এই বিল উত্তর বঙ্গের নাটোর, সিরাজগঞ্জ এবং পাবনা জেলার মধ্যে আবস্থিত। দেশের সর্ববৃহৎ এই বিলটি বিভিন্ন খাল দ্বারা সংযুক্ত অনেকগুলো ছোট ছোট বিলের সমষ্টি নিয়ে গঠিত।ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে কোন ঋতুতেই হতাশ করবে না এই বিল। শীতেকালে অতিথি পাখির দেখা, বসন্তে চারিদিকে সবুজ গ্রাম আর সুনীল আকাশের প্রতিবিম্ব, বর্ষায় আকাশ আর বিল যেন মিলে মিশে একাকার, শরতে বিলের পার ধরে ফোটে কাশবন। তবে ভরা বর্ষাতেই যৌবনপ্রাপ্ত ও অপরুপ সাজে সজ্জিত হয় চলন বিল। বর্ষায় একাকার হয়ে যায় প্রায় ৩৬৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা। তখন দর্শনার্থীর সংখ্যাও থাকে ভরপুর।
চলন বিল গঠনকারী ছোট ছোট বিলগুলো হলো- পিপরূল, পূর্ব মধ্যনগর, লারোর, ডাঙাপাড়া, তাজপুর, নিয়ালা, চলন, মাঝগাঁও, ব্রিয়াশো, চোনমোহন, শাতাইল, খরদহ, দারিকুশি, কাজীপাড়া, গজনা, বড়বিল, সোনাপাতিলা, ঘুঘুদহ, কুরলিয়া, গুরকা, দিক্ষিবিল এবং চিরল। চলন বিলের মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে বেশ কয়েকটি নদী। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- করতোয়া, আত্রাই, গুড়, বড়াল, মরা বড়াল, তুলসী, ভাদাই, চিকনাই, বরোনজা, তেলকুপি ইত্যাদি।
চলন বিল দেখার পরে দেখে নিতে পারেন চলনবিল জাদুঘরটিও। গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজিপুর গ্রামে এ জাদুঘর। স্থানীয় শিক্ষক আব্দুল হামিদ ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় নিজ বাড়িতে ১৯৭৮ সালে গড়ে তুলেছেন ব্যতিক্রমী এ সংগ্রশালা। চলনবিলে প্রাপ্ত নানান নিদর্শন, মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম ছাড়াও এখানে আছে অনেক দুর্লভ সংগ্রহ। নাটোর থেকে বাসে গুরুদাসপুর উপজেলায় এসে সেখান থেকে নদী পার হয়ে রিকশায় আসা যাবে খুবজিপুর গ্রামের এই জাদুঘরে।
কীভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে রাজশাহীর গাড়িতে সিরাজগঞ্জ অথবা নাটোরের কাছিকাটা নামবেন। ঢাকার মহাখালী থেকে সৌরভ পরিবহন, এস আই এন্টারপ্রাইজ, গাবতলী থেকে ইউনিক বাস যায়। সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ভাড়া ১৭০ টাকা। কাছিকাটা নামলে ৮ কি.মি দুরে চাচকৈর বাজার। চাচকৈর বাজার থেকে ৫-৬ কি. মি. দূরে চলনবিলের প্রান্ত ঘেষে খুবজীপুর গ্রামে দেখা মিলবে চলনবিল জাদুঘরের আর চলনবিল জাদুঘরের পরেই পাবেন সেই কাঙ্খিত চলনবিল।
ট্রেনে যেতে হলে কমলাপুর থেকে খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস, রাজশাহীগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস, পদ্মা ও লালমনি এক্সপ্রেস এ উঠতে হবে। নামতে হবে সদানন্দপুর স্টেশনে। এখান থেকে সাত কিলোমিটার দূরে সিরাজগঞ্জ শহর। ভাড়া ১১০-১২৫ টাকা মাত্র।
চলনবিলে ঘুরে বেড়াতে পারেন নৌকায় করে। সাধারণ নৌকা আর ইঞ্জিন নৌকা দুই-ই পাবেন। দরদাম করে ভাড়া ঠিক করে নিতে হবে। সাঁতার না জানলে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে নেবেন।