হাকালুকি হাওর – সিলেট

হাকালুকি হাওরের(Hakaluki Haor) বিশাল জলরাশির মূল প্রবাহ হলো জুরী এবং পানাই নদী। এই জলরাশি হাওরের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত কুশিয়ারা নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়। বর্ষাকালে হাওর সংলগ্ন এলাকা প­াবিত হয়ে বিশাল রূপ ধারন করে। এই সময় পানির গভীরতা হয় ২-৬ মিটার।

হাকালুকি হাওরে প্রায় ২৩৮টি বিল রয়েছে। প্রায় সারাবছরই বিলগুলিতে পানি থাকে। উলে­খযোগ্য বিলসমূহ হলো: চাতলা বিল, চৌকিয়া বিল, ডুল­া বিল, পিংলার কোণা বিল, ফুটি বিল, তুরাল বিল, তেকুনি বিল, পাওল বিল, জুয়ালা বিল, কাইয়ারকোণা বিল, বালিজুড়ি বিল, কুকুরডুবি বিল, কাটুয়া বিল, বিরাই বিল, রাহিয়া বিল, চিনাউরা বিল, দুধাল বিল, মায়াজুরি বিল, বারজালা বিল, পারজালা বিল, মুছনা বিল, লাম্বা বিল, দিয়া বিল, ইত্যাদি।

হাকালুকি হাওরের নামকরণ নিয়ে নানা জনশ্রুতি রয়েছে। কথিত আছে, বহু বছর পূর্বে ত্রিপুরার মহারাজা ওমর মানিক্যের সেনাবাহিনীর ভয়ে বড়লেখার কুকি দলপতি হাঙ্গর সিং জঙ্গলপূর্ণ ও কর্দমাক্ত এক বিস্তীর্ণ এলাকায় ‘লুকি দেয়’ অর্থাৎ লুকিয়ে থাকে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কালক্রমে ওই এলাকার নাম হয় ‘হাঙ্গর লুকি বা হাকালুকি’। এও বলা হয় যে, প্রায় দুই হাজার বছর আগে প্রচন্ড এক ভূমিকম্পে ‘আকা’ নামে এক নৃপতি ও তাঁর রাজত্ব মাটির নিচে তলিয়ে যায়। কালক্রমে এই তলিয়ে যাওয়া নিম্নভূমির নাম হয় ‘আকালুকি বা হাকালুকি’।

আরও শোনা যায় যে, এক সময় বড়লেখা উপজেলার পশ্চিমাংশে হেংকেল নামে একটি উপজাতি বাস করত। হেংকেলদের বসবাস এলাকার নাম ছিল ‘হেংকেলুকি’। পরবর্তীতে এই হেংকেলুকিই ‘হাকালুকি’ নাম ধারন করে। অন্য একটি জনশ্রুতি মতে, এক সময় হাকালুকি হাওরের কাছাকাছি বসবাসরত কুকি ও নাগা উপজাতি তাদের ভাষায় এই হাওরের নামকরণ করে ‘হাকালুকি’। হাকালুকি অর্থ লুকানো সম্পদ।

হাকালুকি হাওরের আয়তন ১৮১.১৫ বর্গ কিমি। হাওরটি ৫টি উপজেলা ও ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে বিস্তৃত। হাওরের ৪০% বড়লেখা, ৩০% কুলাউড়া, ১৫% ফেঞ্চুগঞ্জ, ১০% গোলাপগঞ্জ এবং ৫% বিয়ানীবাজার উপজেলার অন্তর্গত।

বর্ষাকালে হাওর এলাকায় পলিমাটি পড়ায় বিলগুলি ক্রমশ ছোট হয়ে যাচ্ছে। বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর সেখানে কিছু কিছু জায়গায় ধান চাষ করা হয়। ফসল কাটার পর বিলগুলিতে হাজার হাজার গবাদি পশু বিচরণ করে। এই বিচরণ ভূমির কারণে বহুকাল আগে থেকেই হাওর এলাকায় গড়ে ওঠে বাথান পদ্ধতি। বছরের কয়েক মাস বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে হাওর এলাকায় বসবাসরত এক শ্রেণীর লোক অন্যের গরু-মহিষের তত্ত্বাবধান করে। বিনিময়ে প্রাপ্ত দুধ বিক্রি করে তারা জীবিকা নির্বাহ করে। নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে গরু-মহিষ মালিকের নিকট ফেরত পাঠায়। ঐতিহ্যগতভাবে হাকালুকি অঞ্চল দুধ ও দধির জন্য বিখ্যাত।

হাকালুকি হাওরে প্রচুর পরিমাণ মৎস্য সম্পদ রয়েছে। হাওরের বিলগুলি অনেক প্রজাতির দেশীয় মাছের প্রাকৃতিক আবাস। মৎস্যবিজ্ঞানীদের মতে, এই হাওর হলো মাদার ফিশারী। এখানে বিভিন্ন বিরল প্রজাতির মাছ রয়েছে। হাওর এলাকায় প্রধানত পেশাদার জেলে, মৌসুমি জেলে ও খোরাকি জেলেদের বসবাস রয়েছে।

কিভাবে যাবেন হাকালুকি হাওর সিলেট

ঢাকা থেকে বাস/ট্রেন এ করে সিলেট এসে, তারপর সিএনজি, লেগুনা করে ঘন্টার ভেতর চলে যেতে পারবেন হাকালুকি হাওর এ।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: সাফায়েত,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি 27, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.