সোনারং জোড়া মঠ – মুন্সীগঞ্জ

সোনারং গ্রামে এক সময় হিন্দু সম্প্রদায়ের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। মন্দিরের একটি নামফলক থেকে জানা যায় রূপচন্দ্র নামে এক হিন্দু বণিক জোড়া মঠের নির্মাতা। স্থাপনা দুটি মঠ নামে পরিচিতি পেলেও আসলে এগুলো হিন্দু মন্দির। কথিত আছে শ্রী রূপচন্দ্রের অন্ত্যষ্টিক্রিয়া এখানেই সমাপ্ত হয়েছে।
সোনারং জোড়া মঠ(Sonarang Jura Moth) বাংলাদেশের অষ্টাদশ শতাব্দীর এই প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন। এটি মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ী উপজেলার সোনারং গ্রামে অবস্থিত। কথিত ইতিহাসে জোড়া মঠ হিসাবে পরিচিত লাভ করলেও মুলত এটি জোড়া মন্দির। মন্দিরের একটি প্রস্তর লিপি থেকে জানা যায় এলাকার রূপচন্দ্র নামে হিন্দু লোক বড় কালীমন্দিরটি ১৮৪৩ সালে ও ছোট মন্দিরটি ১৮৮৬ সালে নির্মাণ করেন। ছোট মন্দিরটি মুলত শিবমন্দির। বড় মন্দিরটির উচ্চতা প্রায় ১৫ মিটার।

মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার শ্রীনগর বাজারের পশ্চিম দিকে শ্যামসিদ্ধি গ্রামে অবস্থিত এ মঠ। এর দক্ষিণ দিকের প্রবেশ পথের উপরে রয়েছে বাংলা শিলালিপি। সেটা থেকে জানা যায় ১৮৩৬ সালে বিক্রমপুরের জনৈক ধনাঢ্য ব্যক্তি শম্ভুনাথ মজুমদার এটি নির্মাণ করেন। জনশ্রুতি আছে সম্ভুনাথ স্বপ্নে তার স্বর্গীয় পিতার চিতার উপরে মঠ নির্মাণের নির্দেশ পান। তারপর তিনি এই স্থাপনা তৈরি করেন।

প্রায় ২৪১ ফুট উঁচু এই মঠ দিল্লীর কুতুব মিনারের চেয়েও পাঁচ ফুট উঁচু। তাই এটি ভারত উপমহাদেশের সর্বোচ্চ মঠ। অষ্টভুজ আকৃতির এ মঠের দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে ২১ ফুট। চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি মঠের দেয়াল বেশ পুরু।

প্রাচীন স্থাপনাটি দেখতে এখনো প্রতিদিন অনেক মানুষ ভিড় করে শ্যামসিদ্ধিতে। মঠের উপরের দিকে বাইরের দেয়াল জুড়ে অনেক খোড়ল। এগুলোতে বাসা বেঁধেছে শত শত সবুজ টিয়া, ঝুটি শালিক। তাই মঠটি সবসময়ই পাখির কলকাকলিতে মুখর থাকে।
একেবারেই অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে মহামূল্যবান এ স্থাপনা। মঠের গায়ের মূল্যবান পাথর, পিতলের কলস খোয়া গেছে বহু আগে। সবশেষে ১৯৯৫ সালে চুরি হয়ে যায় মঠের ভেতরে রাখা তিন ফুট উঁচু কষ্টি পাথরের শিবলিঙ্গ। মঠের বহু পুরানো নকশা করা কাঠের দরজা জানালাও খোয়া গেছে অনেক আগে। এতকিছু চলে গেলেও প্রাচীন এই মঠের সৌন্দর্যে সামান্য ভাটা পড়েনি।

তবে এর সৌন্দর্যে অনেকটাই ব্যাঘাত ঘটিয়েছে প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর। সংস্কার কাজের জন্য মঠের বাইরের দিকে কয়েক বছর ধরে বাঁশ বেধে রাখা হলেও সংস্কারের নাম নেই। শুধুমাত্র মঠের বাইরের দিকে সতর্কবাণী সংবলিত একটি সাইনবোর্ড লাগিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে দেশের প্রাচীন স্থাপনা দেখভাল করার সরকারী এ সংস্থা।

কিভাবে যাবেনঃ

রাজধানীর গুলিস্তান থেকে শ্রীনগরের বাস ছাড়ে।শ্রীনগর থেকে সহজেই রিকশায় করে শ্যামসিদ্ধি গ্রামে যাওয়া যায়।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: সাফায়েত,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: এপ্রিল 7, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.