মুহুরি প্রজেক্ট – ফেনী

মুহুরী প্রকল্প বা মুহুরী প্রজেক্ট (ইংরেজি: Muhuri Project মুহুরী প্ৰজেক্ট) হলো বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেচ প্রকল্প। এছাড়াও দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি এখানে অবস্থিত। দেশের সবচেয়ে বড় মৎস্য জোন হিসেবেও মুহুরী প্রকল্প পরিচিতি পেয়েছে। ফলে এটি বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান ও পর্যটন কেন্দ্ৰ হিসেবে গড়ে উঠেছে।

ফেনীর সোনাগাজী মুহুরী প্রজেক্টের অপরূপ দৃশ্য দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবেন। একবার গেলে বারবার মন ছুটে যাবে মুহুরীতে। আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য যেসব রূপ বৈচিত্র ও বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার তার সব কটিই আছে এখানে।মুহুরী প্রজেক্টে আরো আগে থেকেই দূরদুরান্তের মানুষ ভিড় করতো প্রতিনিয়ত। ক্যামেরায় ধরে রাখার মত হাজারো দৃশ্য এখানে নিয়মিত দেখা যায়। জোয়ারের পানি যখন উথলে ওঠে তটরেখায় তখন আছড়ে পড়ে ছোট বড় ঢেউ, তখন এক অপরূপ সৌন্দর্য বিকশিত হয় মুহুরী প্রজেক্টে।জোয়ারের পানিতে গলে পড়ে ঝুরঝুরে বালি আর লোনা পানিতে ঘন সবুজ অরণ্যের সবুজ ছাউনি। নীল আকাশের বিশালতার নিচে সবুজের সমারোহ, এ যেন প্রকৃতির লীলাখেলা। অনেক ছেলে-বুড়ো নৌকা নিয়ে বসে থাকে সারিসারি হয়ে। দর্শনার্থী দেখলেই প্রতিযোগিতার মত ছুটে আসে নৌকা নিয়ে। এক ঘণ্টা নৌকায় চড়িয়ে প্রকৃতির সব সৌন্দর্য্য দেখিয়ে আনন্দ দেয়ার মূল্য নেয়া হয় ৮০ টাকা। ব্যক্তি ভেদে আরো বেশিও নেয়া হয়। সারা প্রকল্প ঘুরে ঘুরে দেখার সাথে বাড়তি আনন্দ দেয় ঢেউয়ের তালে তালে দুলতে থাকা জেলে নৌকায় বিভিন্ন ধরনের জাল ফেলে নানা প্রজাতির মাছ ধরার দৃশ্য। দুপাশে গড়ে ওঠা বনাঞ্চলের দিকে তাকালে হয়তো সহজেই দেখা যাবে নানা প্রজাতির প্রাণী। দেখা যাবে সমুদ্রগামী হাজারো জেলের জীবন সংগ্রামের দৃশ্য।

সেচ প্রকল্পঃ

১৯৭৭-৭৮ অর্থ বছরে মুহুরী সেচ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় এবং ১৯৮৫-৮৬ অর্থ বছরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম[১] এই সেচ প্রকল্পের নির্মান কাজ শেষ হয়। ফেনী নদী, মুহুরী নদী এবং কালিদাস পাহালিয়া নদীর সম্মিলিত প্রবাহকে আড়ি বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ৪০ ফোক্ট বিশিষ্ট একটি বৃহদাকার পানি নিয়ন্ত্রণ কাঠামো তৈরী করে ফেনী জেলার ফেনী সদর, ছাগলনাইয়া, পরশুরাম, ফুলগাজী, সোনাগাজী এবং চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার কিয়দংশ এলাকায় বর্ষা মৌসুমে বন্যার প্রকোপ কমানো ও আমন ফসলে অতিরিক্ত সেচ সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিল মুহুরী সেচ প্রকল্প।সিডা, ইইসি , বিশ্বব্যাংক অর্থ সহায়তায় জাপানের সিমুজু কোম্পানী ১৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেচ প্রকল্প নির্মাণ করে। এর ফলে ২০,১৯৪ হেক্টর এলাকায় সেচ সুবিধা এবং ২৭,১২৫ হেক্টর এলাকা সম্পুরক সেচ সুবিধার আওতায় আসে।

বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পঃ

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নযন বোর্ড (পিডিবি) ২০০৪-০৫ অর্থ বছরে প্রায় সাত কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি ২২৫ কিলোওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন দেশের প্রথম বায়ু শক্তি চালিত বিদ্যুৎ ইউনিট স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। প্রকল্পের স্থান নির্বাচন করা হয় সোনাগাজী উপজেলার ফেনী নদীর ওপর নির্মিত ফেনী রেগুলেটরের (মুহুরী সেচ প্রকল্প হিসেবে পরিচিত) প্রায় ৫০০ গজ দূরে থাক খোয়াজের লামছি গ্রামে। প্রকল্প এলাকার পাশ দিয়ে ফেনী নদী বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। দক্ষিণে বিস্তীর্ন মাঠ এবং বন বিভাগের সবুজ বেষ্টনী। ২০০৪ সালে ভারতের নেভ্যুলা টেকনো সোল্যুশনস লিমিটেডের সাথে এ প্রকল্প নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের রাজস্ব খাত থেকে এ প্রকল্পের ব্যয় নির্বাহ করা হয়।

২০০৬ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে পরীক্ষা মূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় এবং ২০০৬-২০০৭ অর্থ বছরে অল্প কিছুদিন চলার পর নানা অজুহাতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়।

 

মৎস্য জোনঃ

বর্তমানে মৎস্য চাষে বিপ্লব ঘটিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় মৎস্য জোন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে এ মুহুরী প্রকল্প এলাকা। এখানে দেশের অনেক নামিদামি প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে মৎস্য প্রকল্প গড়ে তুলেছে। বসুন্দরা গ্রুপ, মেরিডিয়ান গ্রুপ, ক্লিফটন গ্রুপ, আবুল খায়ের কোম্পানি, মেহের গ্রুপ অব কোম্পানি, মামুন গ্রুপ, সততা ফিস প্রকল্প, রিংকু ফিস প্রকল্পসহ দুই হাজার মৎস্য প্রকল্প রয়েছে।

পর্যটন কেন্দ্রঃ

মুহুরী সেচ প্রকল্পকে ঘিরে গত আড়াই দশকে গড়ে ওঠে বিনোদন ও পিকনিক স্পট।শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে ভ্রমণ পিপাসু লোক এবং পর্যটক বেড়াতে আসে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর মুহুরী রেগুলেটরের চারদিকে বাঁধ দিয়ে ঘেরা কৃত্রিম জলরাশি, বনায়ন, মাছের অভয়ারণ্য, পাখির কলকাকলি, বাঁধের দুপাশে নীচে খেকে পাথর দিয়ে বাঁধানো এবং উপরদিকে দুর্বা ঘাসের পরিপাটি বিছানা। মুহুরী জলরাশিতে নৌভ্রমণের সময় খুব কাছ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস এবং প্রায় ৫০ জাতের হাজার হাজার পাখির দেখা পাওয়া যায়।

 

অবস্থানঃ

মুহুরী প্রকল্প বা মুহুরী সেচ প্রকল্প বাংলাদেশের ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলায় অবস্থিত। ফেনী সদর হতে সোনাগাজী উপজেলা পর্যন্ত দূরত্ব ২০ কি.মি. এবং সোনাগাজী উপজেলা হতে এর দূরত্ব ২০কি.মি.। অর্থাৎ ফেনী সদর হতে মুহুরী প্রকল্পের দূরত্ব সর্বমোট ৪০কি.মি.। এর কিছু অংশ চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার মধ্যেও পড়েছে।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: সাফায়েত,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: এপ্রিল 21, 2017

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.