পাগলা দেওয়ান বধ্যভূমি(Pagla Dewan Bodhavumi) জয়পুরহাট সদর উপজেলার চকবরকত ইউনিয়নে সংঘটিত গনহত্যার অন্যতম নিদর্শন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ পাকিস্তান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন প্রায় দশ হাজার নিরিহ বাঙ্গালীকে নির্মমভাবে হত্যা করে গন কবর দেওয়া হয়েছে এই পাগলা দেওয়ান বধ্যভূমিতে।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর তৎকালীন রাজাকার বাহিনী এর প্ররোচনায় কোনরকম উস্কানী ছাড়াই পাক সেনারা ১২২ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। পাগলা দেওয়ানে ছিল পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ক্রাম্প ও বাঙ্কার । স্থানীয়ভবে হত্যা ও নির্যাতন ছাড়াও মুক্তি যুদ্ধ চলাকালীন বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও বিভিন্ন এলাকার মানুষ যারা প্রানের ভয়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয়ের জন্য এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন তাদেরকে ধরে লুটপাট করে নির্মমভাবে হত্য করা হয়েছিল এই বধ্যভুমিতে।
স্বাধীনতার পর প্রায় দুই তিন মাস পর্যন্ত পচা লাশের গন্ধে এই এলাকার মানুষ বসবাস করতে পারেনি। চাষের জমিতে কোপ দিলেই বেড়িয়ে আসলো অর্ধ গলিত লাশের হাড় গোড়। ১৯৯২ সালে স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রচেষ্টায় এই বধ্যভূমিটি সম্পর্কে দেশবাসী জানতে পারে। উক্ত স্থানে গণপূর্ত বিভাগের তত্তবাবধানে একটি স্মৃতিশৌধ নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রতিবছর ফাগুনমাসের চতুর্দশীতে শিবরাত্রি এ বারো শিবালয় কে ঘিরে পূজা অর্চনা আয়োজিত হয়। শিবরাত্র উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয় বিশাল মেলা। মেলায় মানত, শিবদর্শন, গীতা পাঠ, উলুধ্বণি আর ঐতিহ্যবাহী ঢাক ঢোলের বাজনায় সারা এলাকা মুখরিত হয়। এছারা মেলায় দেশের সুখ-সমৃদ্ধি ও মানব কল্যাণে শিবঠাকুর কে সন্তুষ্ঠ করতে আলো আধারির মাঝে কীর্তন গানের অনুষ্ঠান করা হয়। মেলায় শাখা-সিদূর, পৈতা, তিলক, পুতির মালা, কাঠের জালি, পুতুল, খেলনা, ঘর সাজানোর জিনিষপত্রসহ, বিভিন্ন প্রকার আসবাব-পত্র বেচা কেনা জমে উঠে।
পাগলা দেওয়ান বধ্যভূমি স্মৃতিশৌধ এর সর্বোচ্চ স্তম্ভটি কালো টাইলস বা টালি নির্মিত। স্তম্ভের বেদিটি লাল ইটের তৈরি। ইটের তৈরি একটি দেয়াল সম্পূর্ন স্তম্ভের সবচাইতে বড় অংশটি দখল করে আছে। দেয়ালটির দুদিক ভাঙা। এ ভগ্ন দেয়াল ঘটনার দুঃখ ও শোকের গভীরতা নির্দেশ করছে। দেয়ালের দক্ষিণ-পশ্চিম পার্শ্বে একটি জানালা আছে। এ জানালা দিয়ে পেছনের আকাশ দেখা যায়। জানালাটি দেয়ালের বিশালতাকে কমিয়ে আনে।
কিভাবে যাবেন
জয়পুরহাট শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার পশ্চিমে সদর উপজেলার ধলাহার ইউনিয়ন ও নাওগাঁ জেলার ধামুরহাট উপজেলার জাহানপুর ইউনিয়নের সমান্তবর্তী পাগলা দেওয়ান বধ্যভূমি অবস্থিত