পাকুটিয়ার জমিদাবাড়ী – টাঙ্গাইল

জমিদাবাড়ী নামটা শুনতেই কেমন জমিদার জমিদার ভাব আসে, একটা সময় বাংলাদেশে অনেক জমিদার বসবাস করতেন, কালের বিবর্তনে বর্তমানে জমিদারদের জমিদারি না থাকলেও এখনো তাদের তৈরি জমিদার বাড়ি গুলো ইতিহাসের সাক্ষি হয়ে দাড়িয়ে আছে বছরের পর বছর। টাঙ্গাইল জেলার জমিদাবাড়ী গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি জমিদাবাড়ী হচ্ছে নাগরপুর উপজেলা প্রাচীন লৌহজং নদীর তীরে পাকুটিয়া জমিদার বাড়ী (Pakutia Zamidar Bari)।

ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ইংরেজদের কাছ থেকে ক্রয় সূত্রে মালিক হয়ে রামকৃষ্ণ সাহা মন্ডল পাকুটিয়ায় জমিদারী শুরু করেন। তাঁর ছিল দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধা গোবিন্দ। রাধা গোবিন্দ ছিলেন নিঃসন্তান এবং বৃন্দাবন চন্দ্রের ছিল তিন ছেলে। এরা হলেন- ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন। বৃন্দাবনের মেজছেলে উপেন্দ্রকে তাঁর কাকা নিঃসন্তান রাধা গোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র মোহন দত্তক সন্তান হিসাবে কাকার জমিদারীর পুরো সম্পদের অংশটুকু লাভ করেন।

১৯১৫ সালের ১৫ই এপ্রিল প্রায় ১৫ একর এলাকা জুড়ে তিন ভাইয়ের নামে উদ্ভোদন করা হয় একই নকশার পর পর তিনটি প্যালেস বা অট্টালিকা। পাকুটিয়া জমিদার বাড়িটি তিন মহলা বা তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। প্রতিটি মহলের রয়েছে নিজস্ব সৌন্দর্য, লতাপাতার চমৎকার কারুকাজ গুলো মুগ্ধ করার মতো। প্রতিটি জমিদার বাড়ীর মাঝ বরাবর মুকুট হিসাবে লতা ও ফুলের অলংকরণে কারুকার্য মন্ডিত পূর্ণাঙ্গ দুই সুন্দরী নারী মূর্ত্তি এবং সাথে এক মূয়ূর সম্ভাষণ জানাচ্ছে অথিতিকে। এছাড়া দ্বিতীয় তলার রেলিং টপ বা কার্নিশের উপর রয়েছে পাঁচ ফুট পর পর বিভিন্ন ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকা অসংখ্য সুন্দর সুন্দর ছোট আকৃতির নারী মূর্ত্তি। এই তিনটি স্থাপনাই অপূর্ব শিল্প সুষমামণ্ডিত।

পাশ্চত্তীয় শিল্প সংস্কৃতি সমৃদ্ধ মনের মাধুরী মিশিয়ে স্থাপত্য মূল্যের এক অনন্য সৃষ্টি তাদের এই অট্টালিকা গুলো। তিনটি বাড়ীর সামনেই রয়েছে তিনটি নাট মন্দির। বড় তরফের পূজা মন্ডপের শিল্পিত কারুকাজ শতবছর পর এখনও পর্যটককে মুগ্ধ করে। জমিদার বাড়ির সামনে বিশাল মাঠ আর মাঠের মাঝখানে রয়েছে দ্বিতল নাচঘর। প্রতিটি জমিদার বাড়ির রয়েছে নিজস্ব পাতকূয়া। জমিদার বাড়ির কাছাকাছি পশ্চিমে আছে উপেন্দ্র সরোবর নামে বিশাল একটি আট ঘাটলা পুকুর।

কিভাবে যাওয়া যায়:

যদিও এটি টাঙ্গাইল জেলার মধ্যে অবস্থিত, তবে আপনি যদি সাটুরিয়া এর মাধ্যমে সেখানে যান তবে এটি আপনার পক্ষে সহজ হবে। আপনি গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে সাটুরিয়া বাস পেতে পারেন। বাস ভাড়া 60 টাকার মত প্রতি ব্যক্তি।

যারা ঢাকা টাঙ্গাইল হয়ে যেতে চান তারা টাংগাইল শহর হতে দক্ষিনে দেলদুয়ার হয়ে লাউহাটি এবং লাউহাটি হতে পাকুটিয়া জমিদার বাড়ী।

পাকুটিয়া বি.সি.আর.জি.ডিগ্রী কলেজটি পাকুটিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে জমিদারবাড়ীতে অবস্থিত।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: আবদুর রহমান,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি 6, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.