জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় – ঢাকা

ঢাকার অদূরে সাভার এলাকায় বাংলাদেশের সুপরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (Jahangirnagar Bishwabidyalay/University) ৷ প্রকৃতির কোলে গড়ে ওঠা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে নানা জীব বৈচিত্র্য৷ তবে সবকিছু ছাপিয়ে সবার দৃষ্টি কেড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজাপতি গার্ডেন (Butterfly Garden)৷

৩০০ একর জায়গার ওপর প্রজাপতির উপযোগী বন-বনানী, ফুলের বাগান ও প্রজাতির ঘর নিয়ে গড়ে উঠেছে এ প্রজাপতির বাগান৷  যেখানে ১১০ প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে৷ আর এর মধ্যে ৬১টি প্রজাতি বাংলাদেশে নতুন৷

প্রজাপতি গার্ডেনে যেমন প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র রয়েছে, তেমনি প্রাণী বিদ্যা বিভাগে মনোয়ার হোসেন গড়ে তুলেছেন কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র৷ সেই কেন্দ্রে জন্ম নেয়া প্রজাপতিও ছেড়ে দেয়া হয় বাগানে৷ এপর্যন্ত দুটি প্রজাতির শতাধিক প্রজাপতির জন্ম হয়েছে প্রজনন কেন্দ্রে৷

শুধু প্রজাপতি ই নয়। সবুজ এ ক্যাম্পাসে শীতকালে বসে  অতিথি পাখির মেলা। যেকানে পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠে পুরো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। লেকের লাল শাপলা আর অতিথি পাখির জলকেলী গড়ে তুলেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক রক্তকমল লীলাভূমি।

শীতের শুরুতেই প্রতি বছর শীতের অতিথি পাখিরা রক্তকমল শোভিত এই লেকগুলোতে ভিড় জমায় আর ক্যাম্পাসের লেকগুলোতে অতিথি পাখির জলকেলী সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে।এ মসয় নানা বয়সের অসংখ্য মানুষ এখানে এসে অতিথি পাখিদের দেখে অনাবিল আনন্দ উপভোগ করেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট বড় ১৬/১৭টি লেক থাকলেও মাত্র ৩টি লেক অর্থাৎ প্রশাসনিক ভবনের সামনের লেক, জাহানারা ইমাম ও প্রীতিলতা হল সংলগ্ন লেক এবং মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন লেকগুলোতে অতিথি পাখির পদচারণা বেশি থাকে। এ লেকগুলোকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক পর্যাবেক্ষণ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি বছর ২৪৪ প্রজাতির অতিথি পাখির মধ্যে ক্যাম্পাসে সাধারণত ১২/১৩ প্রজাতির অতিথি পাখি আসে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব পাখি আসে তার মধ্যে বেশির ভাগই হাঁস জাতীয়, যারা পানিতে বসবাস করে। এর মধ্যে সরালি, খঞ্জনা, পাতারিহাঁস, পাতিতারা, নোনাজোৎসা, গয়ার, ধুপানি, লালমুড়ি, বামুনিয়া হাঁস, সিন্ধু ঈগল, বাড়িঘোরা, হুড হুড ইত্যাদি প্রধান।

অতিথি পাখির নিরাপত্তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। লেকগুলো পরিষ্কার করা হয়। এ বছরেও পাখিদের নিরাপত্তার জন্য লেকগুলোতে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা এবং নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রয়েছে নিরাপত্তা কর্মীদের সতর্ক অবস্থান। পাখিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন জায়গায় লাগানো রয়েছে ব্যানার ও ফেস্টুন। সেখানেও আছে বিভিন্ন নির্দেশনা।

প্রতিবছর উত্তরের শীতপ্রধান সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, জিনজিয়াং ও ভারত থেকে হাজার হাজার অতিথি পাখি বাংলাদেশে আসে। মূলত অক্টোবরের শেষ ও নভেম্বরের প্রথম দিকেই এরা এদেশে আসে। আবার মার্চের শেষ দিকে তারা তাদের আপন ঠিকানায় ফিরে যায়।

কিভাবে যাবেন-

ঢাকার গুলিস্তান, ফার্মগেইট, কল্যাণপুর কিংবা গাবতলী থেকে নবীনগর, মানিকগঞ্জগামী যে কোনো বাসে চড়ে সহজেই নেমে যেতে পারবেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সামনে। ভাড়া ২৫ থেকে ৩৫ টাকা। ক্যাম্পাস ঘুরে দেখার জন্য সহজ বাহন রিকশা।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: ভ্রমণ পাগল,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি 9, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.