কালভৈরব মূর্তি – কুমিল্লা

কালভৈরব মন্দির বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলায় অবস্থিত অন্যতম ঐতিহাসিক এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। মূলত এটি শ্রীশ্রী কালভৈরবের মূর্তি(Kalavirob Murti)। শ্রী শ্রী কালভৈরব হচ্ছে হিন্দু দেবতাবিশেষ। শিবের অংশ থেকে বা দেহ থেকে জাত ভৈরববিশেষ। ধারণা করা হয় যে, ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে উঁচু মূর্তি বা বিগ্রহ হিসেবে শ্রীশ্রী কালভৈরবের অবস্থান। হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান তীর্থক্ষেত্র হিসেবে মূর্তিটির অবস্থান ব্রাহ্মণবাড়ীয়া শহরের অদূরে মেড্ডা এলাকায়। তিতাস নদীর কূল ঘেঁষে অবস্থিত কালভৈরব একটি ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী মন্দির হিসেবে বিখ্যাত। মন্দিরটির প্রধান আকর্ষণই হচ্ছে কালভৈরব বা শিব মূর্তি। সুবিশাল মূর্তিটির উচ্চতা ২৮ ফুট। বিশাল আকৃতিবিশিষ্ট ও চোখ ধাঁধানো মূর্তিটি ১৯০৫ সালে তৈরী করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই প্রথম দর্শনে যে কেউই ভয় পেয়ে যেতে পারেন বিরাট আকারের মূর্তি দেখে। মূর্তিটির ডান পাশে রয়েছে একটি কালী মূর্তি এবং বাম পাশে পার্বতী দেবী।

কথিত আছে যে, কাশীশ্বর দেবাদিদেব মহাদেব একদিন নিজ শরীরের অংশ থেকে কালভৈরবের সৃষ্টি করেন এবং তার প্রতি কাশীধাম রক্ষার ভার প্রদান করে বলেন,

বৎস! যে দুষ্কৃতকারী এ স্থানে সমাগত হবে তুমি তার সমুচিত দণ্ড বিধান করবে।

পূর্বে ব্রহ্মার পাঁচটি মুখ ছিল। তিনি নিজ কন্যাভিগমন পাপে লিপ্ত হয়ে শিব-তত্ত্ব-জ্ঞান-লাভার্থে কাশীধামে সমাগত হলে কালভৈরব মহাদেবের নির্দেশ অনুসারে নিজ বাম হাতের নখের অংশ দিয়ে ব্রহ্মার এক মুখ ছেদন করেন। সেই হতে ব্রহ্মা চতুর্মুখ হলেন এবং যে স্থানে তাঁর মুণ্ড পতিত হয়েছিল তা কপালমোচনতীর্থ নামে খ্যাত হয়।

কালীশ্বর শ্রীশ্রী কালভৈরবের আবির্ভাবের পর স্বপ্নে আদেশ পেয়ে স্থানীয় দূর্গাচরণ আচার্য মাটি দিয়ে নির্মাণ করেন এই অতি বিরাটাকার কালভৈরবের বিগ্রহ। তিনি ছিলেন ফুলবাড়িয়া গ্রামের স্থায়ী অধিবাসী এবং প্রখ্যাত মৃন্ময়মূর্তি প্রস্তুতকারক শিল্পী। এছাড়াও, তিনি মূর্তির পাশে নির্মাণ করেন শিবের স্ত্রী পার্বতীর মূর্তি। দূর্গাচরণ প্রথমে তিতাস পঞ্চবঢী মূলে মূতিটি স্থাপন করে পুজার্চনার ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি স্থানীয় ভক্তবৃন্দের আন্তরিক সহায়তায় পূজা-অর্চনা শুরু করেন তখন থেকেই, যা নিয়মিতভাবে প্রচলিত হয়ে আসছিল ১৯৭১ সাল পর্যন্ত।

বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কালভৈরবের বিগ্রহটি পাক হানাদার বাহিনীর নজরে এলে তারা বৈদ্যুতিক ডিনামাইটের আঘাতে শিব ও পার্বতী মূর্তির অনেকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত করে। পরে বিশ্ববরেণ্য দার্শনিক ড. মহানামব্রত ব্রহ্মচারী মহারাজের অনুপ্রেরণায় ও স্থানীয় কর্মীদের নিরলস কঠোর প্রচেষ্টা এবং সর্বস্তরের জনগণের সাহায্য ও সক্রিয় সহযোগিতায় সূদীর্ঘ চার বছর কাজের পর আবারো ২৪ ফুট উঁচুবিশিষ্ট উপমহাদেশের বিশালতম এই কালীশ্বর শ্রীশ্রী কালভৈরবের বিগ্রহ ও মন্দির পুণরায় প্রতিষ্ঠিত হয়।

শ্রীশ্রী কালভৈরব মূর্তিটির পাশে ছিল শ্রীশ্রী কৈলাশ্বেশ্বর শিবলিঙ্গ, যা ১০৫ বছরের পুরনো। এটি ১১ কেজি ওজনের কষ্টি পাথরের মূর্তি। মন্দিরের বাম পাশে এই শিবলিঙ্গ মন্দিরটি আলাদা ভবনে অবস্থিত। ১২ জুন, ২০০৯ইং তারিখে মন্দিরের তালা ভেঙে ভোররাতে শত বছরের পুরনো শিবলিঙ্গটি কে বা কারা চুরি করে নিয়ে যায়। ১৯ অক্টোবর, ২০০৯ইং তারিখে কষ্টি পাথরের শিবলিঙ্গটি তিন মাস পর উদ্বার করে র‌্যাব-৯ এর সদস্যরা। ব্রাহ্মণবাড়ীয়া শহরের পুনিয়াউট এলাকা থেকে শিবলিঙ্গটি উদ্বার করা হয়। পাচারের অভিযোগে করা হয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ক্রেতা সেজে র‌্যাব এর একটি চৌকস দল তাদের কাছে কষ্টি পাথরটি কিনতে যায় ও মূর্তিটি ২ কোটি টাকা মূল্য দিয়ে কেনার আগ্রহ প্রকাশ করলে ২ জনকে গ্রেফতার করে সদর থানায় সোপর্দ করে।

কিভাবে যাবেন

ব্রাহ্মণবাড়ীয়া শহর প্রতিষ্ঠার পূর্বে মেড্ডা ছিল তিতাস তীরবর্তী বাজার।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: আবদুর রহমান,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি 12, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.