ইনানী সমুদ্র সৈকত – কক্সবাজার

কক্সবাজার জেলার পর্যটন সেক্টরে ইমাজিং টাইগার হচ্ছে ইনানী সমুদ্র সৈকত(Inani Samodra Soikot)। কক্সবাজার শহর ও হিমছড়ি থেকে প্রায় যথাক্রমে  ২৫ ও ১৭ কিলোমিটার দক্ষিণে প্রবাল গঠিত সমুদ্র ইনানীর অবস্থান। অভাবনীয় সৌন্দর্যে ভরপুর এই সমুদ্র সৈকতটি কক্সবাজার থেকে মাত্র আধা ঘণ্টার দূরত্ব। পশ্চিমে সমুদ্র আর পূর্বে পাহাড়ের এক অপূর্ব সুন্দর, জায়গাটি বাংলাদেশের অন্যতম  পর্যটন আকর্ষণ। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত দীর্ঘ একশো বিশ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর,আকর্ষণীয় ও নয়নাভিরাম হচ্ছে ইনানী সৈকত। এককথায় ইনানীকে প্রকৃতির ভূস্বর্গ বলা চলে।

আপনি যদি টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ দিয়ে ইনানী সৈকতে যান তবে যাবার পথে আপনার দু চোখ জুড়িয়ে দেবে উঁচু উঁচু পাহাড় আর উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ। বোরিং তো প্রশ্নেই আসে না। শুধু চোখই জুড়বে না, বরং পুরো সময়টা আপনি থাকবেন এক ধরণের সিদ্ধান্তহীনতায়! এক পাশে পাহাড় আরেক পাশে সাগর। কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখবেন? মন যে দু দিকই দেখতে চাইবে।পাহাড়ে নানা রকম ঝোপঝাড়ের সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্র সৈকত পাড়ে দেখা যায় ঝাউ গাছের দীর্ঘ সারি। মাঝে মাঝে নারিকেল গাছের এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা সৌন্দর্যের ভিন্ন এক মাত্রা যোগ করে। সুপারি গাছের দীর্ঘ সারি ইনানীকে আরো মহিমান্বিত করে রেখেছে। জায়গায় জায়গায় দেখবেন পাহাড়ি ছোট ছোট ঝর্ণা। শুকনা মৌসুমে হয়তো সবটাতে পানি দেখবেন না। পথে গাড়ি থামিয়ে ঝরনার ইনানী সৈকতে পারে ঘুরে আসতে পারেন। রাস্তার অপর পাশে সাগর। মাঝে মাঝে দেখবেন জেলে নৌকা বালির উপর সারি করে রাখা আছে। ইনানী সমুদ্র সৈকত যাওয়ার পথে বন-বনানীতে পাহাড়ঘেরা পাখির কলকাকলী ও সাগর বেস্টিত সমুদ্রের গর্জন স্বকর্ণে শোনা ও শুভ্র রঙ্গের সাগরের ঊর্মি, সারি সারি ঝাউবাগান এবং কক্সাবাজার জেলার নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করার মজাই আলাদা।

যারা হৈ হুল্লোড় পছন্দ করেন, বন্ধুদের নিয়ে উল্লাস করতে ভালবাসেন তাদের জন্য খোলা ছাদের জিপ উত্তম বাহন ইনানী যাবার জন্য। ক্ষিপ্রগতিতে যখন জিপ ছুটে চলে খোলা জিপের উপর দাড়িয়ে দুপাশে তাকালে মনে হবে যেন স্বপ্নে দেশে ভেসে যাচ্ছেন। এটি হতে পারে আপনার জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা। পথে লাল রংয়ের স্কুল ড্রেস পরা ছেলে মেয়েদের দেখবেন। মেরিন ড্রাইভ  এই রাস্তাটি সেনা বাহিনীরা তৈরি করেন। যাবার পথে পার হতে হবে সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্প। ভাগ্য ভাল থাকলে নায়ক নায়িকাদের পথিমধ্যে শুটিং আপনার আনন্দকে দ্বিগুণ করে দেবে। সিনেমা ও নাট্য পরিচালকদের শুটিং করার জন্য এ ইনানী সমুদ্র সৈকতসহ আশে পাশে অনেক পিকনিক স্পট এখন অনেক লোভনীয় শুটিং স্পট।

ইনানী সৈকতের প্রধান আকর্ষণ প্রবাল আর পাথর। ইনানী সৈকত থেকে শুরু করে টেকনাফ পর্যন্ত এর প্রাকৃতিক প্রবাল ও পাথর সমুদ্রের ভাঙ্গন থেকে সৈকতকে রক্ষা করছে।  আবার, এসব পাথর ইনানী সৈকতকে দিয়েছে বাড়তি সৌন্দর্য। সমুদ্র থেকে ভেসে এসে এখানকার বেলাভূমিতে জমা হয়েছে প্রচুর প্রবাল পাথর। প্রায় প্রতিটা পাথরই নানা আকার ও নানা ধরণের। কত বছরের পুরনো সে পাথর! আর তাতে মিশে আছে কত স্মৃতি! চমৎকার ছিমছাম, নিরিবিল প্রবালের উপর দাড়িয়ে সাগর দেখার মজাই আলাদা। সাগরের ঢেউগুলো প্রবালের গায়ে আঘাত লেগে পায়ের কাছে আছড়ে পড়ে। স্বচ্ছ জলের তলায় দেখা যায় বালুর স্তর এবং হরেক রকম মাছের ছুটাছুটি। এখানে বিস্তীর্ণ বালুকায় বিকাল বেলায় ছুটে বেড়ায় হাজারো লাল কাঁকড়ার দল।বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চিংড়ি পোনা উৎপাদনের অনেক হ্যাচারি রয়েছে ইনানীতে।এসব দৃশ্য দেখতে ভালোই লাগবে যেকোনো দর্শনার্থীর।

ইনানী সৈকতের পানি এতটা স্বচ্চ ও সুন্দর যে দেখলে মন চাইবে সাগরের পানিতে গোসল করতে। গোসল না করে ফিরতে ইচ্ছা করবে না।বনভোজন আর গোসলের জন্য চমৎকার স্থান এই সমুদ্র সৈকতটি।ইনানী যেতে হবে অবশ্যই জোয়ার ভাটার হিসেব করে। কেননা জোয়ারের সময় গেলে সৈকতের এসব প্রবাল পাথর দেখা যাবে না। তাই যেতে হবে কিন্তু ভাটার সময়। খুব সকাল সকাল যাওয়াই ভাল। তাতে সুযোগ হাত ছাড়া হবার সম্ভাবনা কম থাকবে এবং দুপুরের ভেতর ফিরে আসতে পারবেন।সাগরে নামতে না চাইলে বা সে রকম পরিকল্পনা না থাকলে ইনানী সৈকতে যেতে পারেন বিকেল বেলায়। পড়ন্ত বিকেলের শান্ত সাগর আপনার সামনে তুলে ধরবে তার বিশালতা। সূর্যাস্তটাও উপভোগ করে ফিরতে পারেন। বিকেলে জোয়ার থাকে বলে সাধারণত অন্য সময়ের তুলনায় সে সময়ে মানুষের উপচে পড়া ভিড় কিছুটা কম থাকে। সাগর যেখানে নিজের ভাষায় কথা বলছে সেখানে মানুষের কোলাহল কিছুটা কম থাকাই কাম্য!

ফেরার পথে হিমছড়ি দেখে ফিরুন। অথবা হাতে সময় থাকলে পরের দিন ভোর হবার আগেই চলে যান হিমছড়িতে। ৩০০ ফুট উঁচু ওই পাহাড়ের চূড়া থেকে সূর্যাস্ত দেখে জুড়িয়ে নিন চোখ দুটোকে আরো একবার। ওপরে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আপনার চোখে পড়তে শুরু করবে বিশাল পাহাড়ি বন আর উন্মুক্ত সাগর।

একেবারে চূড়ায় ওঠার পর আপনার উদাস চোখ ছুঁয়ে যাবে ঝাউ বন,গিয়ে পড়বে একেবারে সাগরে। সাগর যে কত জায়গায় কত রুপে ধরা পড়ে তা না হয় নিজের চোখেই দেখে এলেন! হিমছড়ির আরেক আকর্ষণ হলো ঝর্ণা। এর সৌন্দর্যও কিন্তু একেবারে কম নয়।

কোথায় থাকবেন ও খাবেন –

ইনানী সমুদ্র সৈকতে থাকা খাওয়ার তেমন সুব্যস্থা এখনো গড়ে উঠেনি তাই থাকা খাওয়ার জন্য কক্সবাজার উত্তম।

কীভাবে যাবেন :

ইনানী সৈকতে যাওয়ার জন্য প্রথমে যেতে হবে কক্সবাজার। আজকাল সব জায়গা থেকেই কক্সবাজার যাওয়া যায়। তবে ঢাকা থেকে যেতে চাইলে গাবতলী, শ্যামলী, ফকিরাপুল, সায়েদাবাদ থেকে বাস ধরতে পারেন। নির্দিষ্ট সময় পর পর বিভিন্ন কোম্পানির বাস কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। তাছাড়া ট্রেনে করে চট্টগ্রামে গিয়ে বাসে চলে যেতে পারেন কক্সবাজার। সরাসারি বিমানেও কক্সবাজার যেতে পারেন। ওখান থেকে অটোরিকশা, সিএনজি  বা গাড়ি ভাড়া করে চলে যান সাগরকন্যার অপরূপ সাজ দেখতে ইনানী সৈকতে ।

ইনানী সমুদ্র সৈকত দেখতে কক্সবাজার যাওয়ার বিস্তারিত দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

 

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: ভ্রমণ পাগল,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি 12, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.