পুরানো ঢাকার প্রায় সাড়ে ৩০০ বছরের পুরনো একটি ঐতিহাসিক স্থান ও শিয়া উপাসনালয় হচ্ছে হোসেনী দালান(Hussaini Dalan)। এ স্থাপনা মোগল আমলের ঐতিহ্যের নিদর্শন। আনুমানিক ১৭শ শতকে শাহ সুজার শাসনকালে জনৈক সৈয়দ মুরাদ প্রথম এ ইমারত নির্মাণ করেন বলে মনে করা হয়। পরবর্তিতে বিভিন্ন শাসনামলের বিভিন্ন সময় অনেকেই হোসেনী দালানের সংস্কার ও পরিবর্ধন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে ইরান সরকারের উদ্যাগে হোসেনী দালানের ব্যাপক সংস্কার সাধন করা হয়।
ইরান সরকার এতে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করে। ইরানের স্থপতিবিদ ও শিল্পীরা এতে অংশগ্রহণ করেন। ফলে ইরানের ধর্মীয় স্থাপনার বাহ্যিক রূপ ও নান্দনিকতা এ সংস্কার কাজে প্রতিফলিত হয়েছে। মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সংস্কারের আগে ভেতরে রং-বেরঙের নকশা করা কাচের মাধ্যমে যে সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল, তা পরিবর্তন করে বিভিন্ন আয়াত ও মুদ্রা লিখিত নীল রঙের টাইলস লাগানো হয়েছে। একইভাবে এর পূর্বদিকের ফটকে এবং উত্তর দিকের চৌকোনা থামগুলোয় আয়াত ও সুরা লিখিত নীল রঙের টাইলস লাগানো হয়েছে। টাইলসগুলো ইরান থেকে আমদানি করা এবং এতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ইরানের ধর্মীয় শিল্পকলা ক্যালিগ্রাফি। ইরানের বেশ কিছু ধর্মীয় স্থাপনায় এ ধরনের টাইলস রয়েছে বলে জানা যায়।
এই হোসেনী দালান একটি উঁচু মঞ্চের উপর স্থাপিত। পূর্বদিকের একটি সিঁড়ির সাহায্যে এই মঞ্চে উঠতে হয়। মূল ইমারতটি পাশাপাশি সংস্থাপিত দুটি হলকক্ষ নিয়ে গঠিত। দক্ষিণমুখী ‘শিরনি’ হলটি হোসেনের মৃত্যুর জন্য দুঃখ ও শোক প্রকাশের উদ্দেশ্যে কালো রঙ করা হয়েছিল। অন্যদিকে উত্তরমুখী খুতবা হলে রয়েছে সাতধাপবিশিষ্ট একটি কাঠের তৈরি মিম্বর। শেষের হলটিতে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতীক ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। দক্ষিণ দিকের সম্মুখভাগের দুপ্রান্তে দুটি তিনতলা বহুভুজ ফাঁপা বুরুজ রয়েছে। বুরুজগুলির শীর্ষে রয়েছে গম্বুজ।
ইমারতটির প্যারাপেটে রয়েছে রঙিন পদ্ম-পাঁপড়ির নকশা, আর এর চার কোণের শীর্ষে রয়েছে চারটি ছত্রী। সামগ্রিকভাবে ইমারতটিকে দেখতে একটি আধুনিক ইমারত বলেই মনে হয়, তবে এর কোথাও কোথাও পুরানো আমলের স্থাপত্যের চিহ্ন দেখা যায়।
মুহররমের ১ থেকে ১০ তারিখে হোসেনী দালান ঢাকা শহরের মূল আকর্ষণে পরিণত হয়। মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকেরা এখানে সমবেত হয়ে ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ বলে মাতম করতে থাকে। আশুরার দিনে (অর্থাৎ ১০ মুহররম) এখান থেকে বিশাল একটি তাজিয়া মিছিল বের করা হয়, প্রধান প্রধান সড়কগুলি প্রদক্ষিণ করে নগরীর পশ্চিম প্রান্তে প্রতীকীভাবে কারবালা নাম দেওয়া একটি স্থানে গিয়ে তা শেষ হয়।
ইমামবাড়া হোসাইনী দালানে প্রবেশের জন্য কোন টিকেট কাটতে হয় না। এটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। প্রতিদিন সকাল ৭.০০ টা থেকে রাত ১০.০০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
কীভাবে যাবেনঃ
ঢাকা শহরের অন্যতম প্রবেশদ্বার সায়দাবাদ অথবা ঢাকা শহরের কেন্দ্র বিন্দ্র গুলিস্থান থেকে রিক্সায় করে চানখাঁরপুল এলাকার হোসেনী দালান বা ইমামবাড়া যাওয়া যায়।