শাহ পরী টেকনাফের সর্ব দক্ষিণে ভূ-ভাগের খুবই নিকটবর্তী একটি দ্বীপ। শাহ পরীর দ্বীপের বাম পাশে নাফ নদী। নদীর ঐ পারে বার্মা বা মায়ানমার সীমান্ত। পাহাড়-সমুদ্রের অনিন্দ্য সৌন্দর্যের এক বিস্তীর্ণ দ্বীপ শাহপরীর দ্বীপ(Shapuree Dbip) ।এটি মূলত সাবরাং ইউনিয়নের একটি গ্রাম। এক সময় এটি দ্বীপ থাকলেও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কিছুকাল আগে এটি মূল ভূ-খণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। টেকনাফ উপজেলা শহর থেকে শাহপরীর দ্বীপের দূরত্ব প্রায় পনের কিলোমিটার।
জনশ্রুতি আছে শাহসুজার স্ত্রী পরীবানুর ‘পরী’ ও শাহসুজার ‘শাহ’ মিলে এ দ্বীপের নামকরণ শাহপরীর দ্বীপ করা হয়েছে। আবার ভিন্ন একটি মতও রয়েছে যে, শাহ ফরিদ আউলিয়ার নামেই এ দ্বীপের নামকরণ করা হয়। শাহপরীর দ্বীপের নামকরণের এরকম আরও অনেক ইতিহাস প্রচলিত আছে স্থানীয়দের কাছে।
শাহপরীর দ্বীপের তিনটি সৈকতে গিয়ে দেখতে পাবেন সমুদ্রের রূপ। নির্জন দ্বীপ গোলার চরে দেখতে পারেন জোসনার লুকোচুরি। এখান থেকে দেখা যায় মায়ানমারের মঙডু প্রদেশ। আরকানের পাহাড়গুলো আর জনমানবহীন গ্রামে বার্মিজ সেনা চৌকি গুলো। একসময় ওসব গ্রামে প্রাণ প্রবাহ থাকলেও এখন নেই। একটু সামনে থেকে দেখা যায় সেন্টমার্টিন দ্বীপ। এখানে আছে বিডিআর চৌকি ও ওয়াচ টাওয়ার।
জেলেপাড়ায় ছোট ছোট কুঁড়েঘরে জেলের জীবন যাপন আপনাকে যতটা না ভাবাবে, তারচেয়ে বেশী প্রেরণা জোগাবে বেঁচে থাকার এবং সাহস নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবার। সাগরের এতকাছে থেকেই লোকগুলোর কোনো ভয় নেই, শংকা নেই, টেনশন নেই। কেমন সে জীবন ছোট কুড়েঘর একটু ধাক্কা দিলেই যেটা পড়ে যাবে অথচ সেখানে থেকে লোকগুলো প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছে সাগরের সাথে। সেই যুদ্ধে বেশীরভাগ সময়ই এই জীর্ণশীর্ণ লোকগুলোরই জয় হয়। সাগর হারমানে তাদের কাছে। তাদের জীবিকার প্রয়োজনের কাছে।নান্দনিক সৌন্দর্যের চিরায়ত রূপ বহমান এ দ্বীপের প্রাকৃতি সৌন্দর্যের ভিতরে।
এ সৈকতগুলোতে কোনো রকম লাইফ গার্ডের ব্যবস্থা নেই। তাই জোয়ার-ভাটার সাংকেতিক কোন চিহ্নও থাকে না। একারণে যদি আপনি সমুদ্রে গোসল করতে চান তবে সৈকতে নামার আগে থেকেই নিজ দায়িত্বে জোয়ার-ভাটা সম্পর্কে জেনে নিন। কোনো অবস্থাতেই ভাটার সময় সমুদ্রে নামবেন না।জোয়ারের পানি যখন রাস্তায় এসে ধাক্কা দেয়। আর রাস্তার পাশে থাকা গাছগুলো আধাআধি ডুবে যায় নোনাপানিতে। এই দৃশ্য যতক্ষন দেখবেন ততক্ষন ভালো লাগবে।
জেলেপাড়ার পাশেই লবণক্ষেত। দিগন্তজোড়া লবণপ্রান্তর। দূরে বহুদূরে জলসীমার শেষপ্রান্তে শিল্পীর আঁকা তুলির আঁচড়ের মতো গ্রামগুলো যেন লেপ্টে আছে আকাশের গায়ে। তার উপর চক চক করছে সমুদ্রের রূপালী আকাশ। এখানে লবণ ক্ষেতের পাশেই ছোট ছোট আঁকা বাঁকা নদী যেগুলো দিয়ে জোয়ারের সময় সমুদ্র থেকে উঠে আসে নোনা জল। আর সেখানে ছোট ছোট মাছ খোঁজার জন্য দলে দলে ভিড় করছে গাঙচিল, সারস কিংবা অতিথি পাখিরা।
যাওয়ার পথে টেকনাফে দেখে যেতে পারেন আদিবাসী পাড়া, রোহিঙ্গা বস্তি, পাহাড়ী গুহা আর মাথিনের কুপ। চাইলে ট্রলারে চড়ে বা বোট ভাড়া করে ঘুরে আসতে পারেন সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকেও।
কোথায় থাকবেনঃ
টেকনাফে থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা হলো বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল নে টং ( ফোন :০৩৪২৬-৭৫১০৪, এসি দ্বৈত কক্ষ ১৯০০ টাকা, এসি স্যুইট ৩১০০ টাকা এবং সাধারণ দ্বৈত কক্ষ ১৩০০ টাকা)। পর্যটনের এ মোটেলটি টেকনাফ শহরের বাইরে। টেকনাফ শহরেও কিছু সাধারণ মানের হোটেল আছে। এসব হোটেলে ৩০০-১৫০০ টাকায় কক্ষ পাওয়া যাবে। এ ছাড়া আপনি চাইলে শাহপরীর দ্বীপ এ তাবু টানিয়ে থাকতে পারবেন।
শাহপরীর দ্বীপ কীভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে সরাসরি টেকনাফ যায় সেন্টমার্টিন সার্ভিসের ( ০১৭১১৩২১১৪৩, ০১৮২৩০০৪৪৮৮) হিনো এসি বাস। ভাড়া ১১৫০ টাকা। এছাড়াও ঢাকা থেকে শ্যামলি, এস আলম, সৌদিয়া, হানিফ ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাস যায় টেকনাফ। ভাড়া ৬৫০-৮০০ টাকা। ঢাকা থেকে যেকোনো বাসে কক্সবাজার এসে সেখান থেকেও সহজেই আসা যায় টেকনাফ।
কক্সবাজার শহর থেকে লোকাল মাইক্রোবাসসহ বেশকিছু বাস যায় টেকনাফ। ভাড়া ১২০-২৫০ টাকা। কক্সবাজার থেকে টেকনাফের বাস ছাড়ে আন্ত:জেলা বাস টার্মিনাল থেকে আর মাইক্রোবাসগুলো ছাড়ে শহরের কলাতলী এবং টেকনাফ বাইপাস মোড় থেকে।
টেকনাফ শহর থেকে জীপে বা সিএনজিতে চড়ে যেতে হয় শাহপরীর দ্বীপ এ।