কুমিল্লার ময়নামতিতে খননকৃত সব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মধ্যে শালবন বিহার(Shalban Vihara) অন্যতম প্রধান। কোটবাড়িতে বার্ডেরকাছে লালমাই পাহাড়ের মাঝামাঝি এলাকায় এ বিহারটির অবস্থান। বিহারটির আশপাশে এক সময় শাল-গজারির ঘন বন ছিল বলে এ বিহারটির নামকরণ হয়েছিল শালবন বিহার।
এর সন্নিহিত গ্রামটির নাম শালবনপুর। এখনো ছোট একটি বন আছে সেখানে। এ বিহারটি পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের মতো হলেও আকারে ছোট।ধারণা করা হয় যে খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর শেষ থেকে অষ্টম শতাব্দীর প্রথম ভাগে দেববংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেব এ বৌদ্ধ বিহারটি নির্মাণ করেন।
শালবন বিহারের ছয়টি নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ পর্বের কথা জানা যায়। খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীর মধ্যে তৃতীয় পর্যায়ে কেন্দ্রীয় মন্দিরটি নির্মাণ করা হয় ও বিহারটির সার্বিক সংস্কার হয় বলে অনুমান করা হয়। চতুর্থ ও পঞ্চম পর্যায়ের নির্মাণকাজ ও সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয় নবম-দশম শতাব্দীতে।
আকারে এটি চৌকো। শালবন বিহারের প্রতিটি বাহু ১৬৭.৭ মিটার দীর্ঘ। বিহারের চার দিকের দেয়াল পাঁচ মিটার পুরু। কক্ষগুলো বিহারের চার দিকের বেষ্টনী দেয়াল পিঠ করে নির্মিত। বিহারে ঢোকা বা বের হওয়ার মাত্র একটাই পথ ছিল। এ পথ বা দরজাটি উত্তর ব্লকের ঠিক মাঝামাঝি স্খানে রয়েছে। প্রতিটি কক্ষের মাঝে ১.৫ মিটার চওড়া দেয়াল রয়েছে।
বিহার অঙ্গনের ঠিক মাঝে ছিল কেন্দ্রীয় মন্দির।বিহারে সর্বমোট ১৫৫টি কক্ষ আছে। কক্ষের সামনে ৮.৫ ফুট চওড়া টানা বারান্দা ও তার শেষ প্রান্তে অনুচ্চ দেয়াল। প্রতিটি কক্ষের দেয়ালে তিনটি করে কুলুঙ্গি রয়েছে। কুলুঙ্গিতে দেবদেবী, তেলের প্রদীপ ইত্যাদি রাখা হতো। এই কক্ষগুলো ছিল বৌদ্ধ ভিক্ষুরা থাকতেন। সেখানে বিদ্যাশিক্ষা ও ধর্মচর্চা করতেন।
বিহারের বাইরে প্রবেশ দ্বারের পাশে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে একটি হলঘর রয়েছে। চার দিকের দেয়াল ও সামনে চারটি বিশাল গোলাকার স্তম্ভের ওপর নির্মিত সে হলঘরটি ভিক্ষুদের খাবার ঘর ছিল বলে ধারণা করা হয়। হলঘরের মাপ ১০ মিটার গুণন ২০ মিটার। হলঘরের চার দিকে ইটের চওড়া রাস্তা রয়েছে।
প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে বিহারটির ধ্বংসাবশেষ থেকে আটটি তাম্রলিপি, প্রায় ৪০০টি স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, অসংখ্য পোড়া মাটির ফলক বা টেরাকোটা, সিলমোহর, ব্রৌঞ্জ ও মাটির মূর্তি পাওয়া গেছে। এগুলো বাংলাদেশের প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহন করছে।
কুমিল্লা কিভাবে যাবেন –
ট্রেনে করে আসলেঃ কুমিল্লা স্টেশন আসতে পারবেন ঢাকা, সিলেট, চট্রগ্রাম, চাঁদপুর, নোয়াখালী ইত্যাদি স্থান থেকে, কুমিল্লা নেমে চলে আসবেন অটো-রিক্সা বা রিকশা করে কান্দিরপাড়, তার পর যাবেন নিচের বর্ণনা অনুসারে ভাড়া নিবে ১০ টাকা প্রতিজন। ট্রেন ভাড়া সম্পর্কে রেলওয়ে স্টেশনের নিজস্ব ওয়েব সাইট হতে জেনে নেবেন।
ঢাকা থেকে কুমিল্লা – ঢাকা যাত্রাবাড়ি থেকেএশিয়া ট্রান্সপোর্ট, এশিয়া লাইন বা তিশা ট্রান্সপোর্ট (এসি,নন-এসি দুটুই আছে), কমলাপুর থেকে রয়েল কোচ এয়ার কন্ডিশেন করে আসতে পারেন । রয়েল কোচ অনেক কমফোর্টেবল কিন্তু স্লো। যেকোনটিতে ঊঠে পড়ুন, আসার সময় দেখবেন বুড়িগঙ্গা ব্রিজ, মেঘনা ব্রিজ, দাউদকান্দি ব্রিজ আর দুপাশের রাস্তায় সকালের সুর্যিমামার আলোরশ্মি আপনাকে বিমহিত করবেই । আপনি প্রকৃতিপ্রেমি বিদায় নয়ন জুড়ানোর জন্য অন্য কিছু প্রয়োজন হবে না। দেখতে দেখতে চলে আসবেন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এসে নেমে যাবেন অথবা কোটবাড়ি বিশ্বরোডে ও নামতে পারেন। ভাড়া নেবে ২০০-২৫০ টাকা পর্যন্ত। ২থেকে ২.৫ ঘন্টা সময় লাগবে।
কোটবাড়ি বিশ্বরোডে থেকে কোটবাড়ি যেতে সি.এন.জিতে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ২০/৩০।
চট্রগ্রাম থেকে কুমিল্লা – সৌদিয়া ট্রান্সপোর্টে (এসি,নন-এসি) চড়ে আসবেন কুমিল্লার পাদুয়ার বাজার বিশ্বরোড দিয়ে জাঙ্গালিয়া নেমে যাবে, ভাড়া নেবে ২০০-২৫০ টাকা। ২.৫থেকে ৩ ঘন্টা সময় লাগবে। চট্রগ্রাম বাসীদের কুমিল্লা-চট্রগ্রামে রোডের আশে পাশের দৃশ্য বর্ণনা করে দিতে হবে না, অপূর্ব সুন্দর এই পথের দু দিক। যাই হওক, জাঙ্গালিয়া নেমে চলে আসবেন টমছমব্রিজ অটোতে করে ৫টাকা নিবে।
কুমিল্লা শহর থেকে কোটবাড়ি- কুমিল্লা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার এবং ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা বাইপাস নন্দনপুর থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে লালমাই আর শালবন পাহাড়ের পাদদেশে কোটবাড়ীর।
কুমিল্লা টমছমব্রিজ চৌমুহনী হতে পশ্চিম দিকের রাস্তায় দাঁড়ানো সিএনজি যোগে কোটবাড়ি যেতে পারবেন। ভাড়া ২০ টাকা। দৌলতপুর হয়ে যাবে।
সিএনজি থেকে নেমে অটোতে করে শালবন বিহাড় জনপ্রতি ভাড়া ৫/১০ টাকা।