লালঘাট ঝর্ণাধারা – সুনামগঞ্জ

আদিবাসী পল্লীঘেঁষা মেঘালয় পাহাড় থেকে প্রবাহিত সুনামগঞ্জ সীমান্তের ‘লালঘাট ঝর্ণাধারা’(Lalghat Jharnadhara) প্রকৃতিপ্রেমী ভ্রমণ পিপাসু ও পর্যটকদের নিকট এখন নতুন ঠিকানা হয়ে ওঠছে।

তাহিরপুর উপজেলার শ্রী উত্তর ইউনিয়নের বালিয়াঘাট-চারাগাঁও সীমান্তের মধ্যবর্তী লালঘাট আদিবাসী পল্লীঘেঁষা মেঘালয় পাহাড় থেকে প্রবাহিত হয়ে নেমে আসা ‘লালঘাট ঝর্ণাধারার’ অবস্থান জেলা শহর সুনামগঞ্জ থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে তাহিরপুর উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার (নৌ-পথ) এবং ২২ কিলোমিটার (সড়কপথ) উপজেলার সোজা উত্তরমুখী শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের সীমান্ত সড়কের লাগোয়া আদিবাসী পল্লী।

সীমান্তের ১১৯৬ মেইন পিলারের ভারত-বাংলাদেশ জিরো পয়েন্ট দিয়ে ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের সবুজের বুক চিরে প্রবাহিত হয়ে এসে ‘লালঘাট ঝর্ণাধারা’ স্বচ্ছ সাদা পানি নামছে এপারের পাহাড়ি ছড়ার মুখে। পাহাড়ি ছড়ার পানির স্রোতধারা অবিরাম গতিতে নেমে এপারের লালঘাট গ্রামের পশ্চিম দিকের আঁকাবাঁকা ছড়া হয়ে মিশে যাচ্ছে সংসার হাওরের মিঠাপানির সাথে।

লালঘাট ঝর্ণা ধারার পূর্বঘেঁষা আদিবাসী পল্লীর হাজং সম্প্রদায়ের প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ টি ছোট ছোট পরিবারের বসবাস। এ গ্রামটিকে বলা হয় সবুজের গ্রাম। বসতির চারপাশে রয়েছে পাহাড়ি বনজ ফলজ ও ফুলের গাছগাছালি।

আদিবাসী পল্লী হলেও লালঘাটে রয়েছে দেড় শতাধিক স্থানীয় বাঙালি পরিবারের বসবাস। এখানে বাঙালি ও আদিবাসী দু’ধর্মের লোকজনের সহাবস্থান অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের আরেক খণ্ডচিত্র দেখা যাবে। উভয় ধর্মের উভয় সম্প্রদায়ের লোকজনই খুবই অতিথি পরায়ণ। গ্রামবাসীর সহযোগিতা নিয়ে দেখা যাবে প্রকৃতির আরেক দৃষ্টিনন্দন ‘লালঘাট ঝর্ণাধারা’ ও এর আশেপাশে থাকা সীমান্ত প্রকৃতির অপরূপ রূপ।

গ্রামের পাশে এপারে দাঁড়িয়ে দেখা যাবে ভারতীয় সীমানায় থাকা চুনাপাথরের পাহাড়, ভারতীয় লালঘাট বিএসএফ জোয়ানদের ক্যাম্প, মাইলের ও পর মাইল জুড়ে থাকা কাঁটাতারের প্রতিরক্ষা বেড়া, মেঘালয় রাজ্যের শিলং যাতায়াতের জন্য মহাসড়কে চলাচলকারী চারচাকার বাহনের ছোট-বড় বহর।

দেশ বিদেশের যে সব পর্যটক ও ভ্রমণ পিপাসুরা জেলা সদর কিংবা তাহিরপুর উপজেলা সদর হয়ে প্রকৃতি দর্শনে জাদুকাঁটা, বারেকটিলা ও টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্প, শহীদ সিরাজ বীর উত্তম লেক ও লাকমা ছাড়া বেড়াতে আসেন তারা টেকেরঘাট থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার পথ পশ্চিমে এগিয়ে গেলেই দেখা পাচ্ছেন লালঘাট আদিবাসী পল্লীর ‘লালঘাট ঝর্ণাধারা’।

উপজেলার লালঘাট আদিবাসী পল্লীর নারী নেত্রী শ্রী মতি অনুরাধা দেবী হাজং ও লালঘাট গ্রামের হাসান আলী জানান, কয়েক যুগ ধরে লোকচক্ষুর আড়ালেই ছিল ‘লালঘাট ঝর্ণাধারা’র অনন্য রূপ।

সুনামগঞ্জ-২৮ বর্ডারগার্ড ব্যাটালিয়নের বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ পিএসসি বললেন, লালঘাট ঝর্ণাধারা দৃষ্টিনন্দন। এর অবস্থান ভারত- বাংলাদেশ জিরো পয়েন্টে থাকায় সীমান্তের দায়িত্বপূর্ণ চারাগাঁও বিওপির বিজিবিকে অবহিত করে বাংলাদেশ সীমানায় অবস্থান করে যে কোন দর্শনার্থী কিংবা পর্যটক সেখানে যেতে কোন বাধা নেই, কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে কোন অবস্থানেই কেউ যেন ভারতীয় সীমানায় অনুপ্রবেশ না করেন।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: ভ্রমণ পাগল,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি 27, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.