রূপমুহুরী ঝর্ণা – বান্দরবান

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের আলীকদম উপজেলাকে সবুজ পর্বতরাজি, পাহাড়ী ঝর্ণা ও নানা নান্দনিক দৃশ্য ঘিরে রেখেছে। এখানে রয়েছে পর্যটন সম্ভাবনাময় ঐতিহাসিক আলীর সুড়ঙ্গ, রূপমুহুরী ঝর্ণা, ডিম পাহাড়, মারাংইংতং জেদী ও তামাংঝিরি জলপ্রপাত।

আলীকদম উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দুরে পোয়ামুহুরী এলাকায় মাতামুহুরী নদীর কুলঘেঁষে রূপমুহুরী ঝর্ণার (Rupmuhhuri Waterfalls) অবস্থান। এ প্রাকৃতিক এ ঝর্ণাটি দেখতে হলে পোয়ামুহুরী বাজার থেকে ৫ মিনিটের পথ হাঁটতে হয়। পোয়ামুহুরীতে ২টি ঝর্ণা রয়েছে। সাধারণত পোয়ামুহুরী বাজার সংলগ্ন ঝর্ণাটিকে ‘রূপমুহুরী’ এবং পোয়ামুহুরী ঝিরিমুখ সামনের ঝর্ণা ‘পোয়ামুহুরী ঝর্ণা’ নামে পরিচিতি। পোয়ামুহুরী ঝর্ণা ও রূপমুহুরী ঝর্ণার দুরত্ব এক-দেড়কিলোমিটার। তবে রূপমুহুরী র্ঝণার সৌন্দর্য বেশী। ঝম্ ঝম্ কল্ কল্ রবে প্রায় দুইশ’ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে ছুটে পড়ছে ‘রূপমুহুরী ঝর্ণা’র স্বচ্ছ পানির ধারা। আর প্রায় দেড়শ’ ফুট উঁচু থেকে ফেনা তুলে নাচতে নাচতে উপছে পড়ছে ‘পোয়ামুহুরী ঝর্ণা’র পানি।

রূপমুহুরী ঝর্ণার পানি সবুজের আস্তর কেটে গড়িয়ে পড়ছে পাথুরে ভূমিতে। সুউচ্চ পাহাড় থেকে ঝরে পড়া পানি পাথরের আঘাতে কুন্ডলী পাকিয়ে প্রতিনিয়ত এক মনোমুগ্ধকর শৈল্পিক জলবিন্দু সৃষ্টি করে থাকে। বৃত্তকারে পাথরে ঘেরা পাহাড়ের বুকে এক ঝর্ণাদেবী যেন চঞ্চল প্রবাহে নিজের বীরত্ব প্রকাশ করছে অহর্নিশ। সৃষ্টি করছে চারিপাশে জলের ধোঁয়াশা। সূর্যের কিরণ যখন ঝর্ণার বাষ্পীয় জলে পড়ে তখন তৈরী হয় রংধনু। এ যেন দুর্দান্ত এক অমলনি দৃশ্য। নিজের চোখে না দেখলে যা বিশ্বাস করা যায় না। এক পাহাড়ি রাণী যেন অবিরাম কেঁদে স্বচ্ছ নীরে ভাসছে অনন্ত কোন বিরহ বেদনায়! রূপমুহুরীর ঝর্ণার বিরহের জলে গোসল করে পর্যটকরা আনন্দ লাভ করে থাকে। দুর্গম পাহাড়ি জনপদে অবস্থিত এ ঝর্ণা দর্শনই একটা বিরাট এডভেঞ্চার। সবুজ পাহাড়ের কোলে লোকচক্ষুর আড়ালে এ ঝর্ণাটি পর্যটকদের কাছে এখনো অপরিচিতই থেকে গেছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু কিছু পর্যটক ছুটে আসছেন এই প্রাকৃতিক ঝর্ণার অপরূপ শোভা দেখতে।

যেভাবে যাবেন

রূপমুহুরী ঝর্ণা দেখতে হলে প্রথমে বান্দরবান জেলার উপজেলা শহর আলীকদমে আসতে হবে। ঢাকা থেকে আসলে আপনাকে প্রথমে চট্রগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের চকরিয়া বাস টার্মিনালে নামতে হবে। চট্রগ্রাম থেকেও বাসে চকরিয়া আসতে পারেন। চকরিয়া থেকে আলীকদম চাঁদের গাড়ীতে (জীপ) আসতে পারবেন। লোকাল ভাড়া জন প্রতি ৬৫ টাকা। রিজার্ভ ভাড়া এক পথ ১০০০-১২০০ টাকা।

বাসে আসলে সময় লাগবে দুই ঘণ্টা। আর চাঁদের গাড়িতে গেলে ৩০ মিনিট বা ৪০ মিনিট কম লাগবে। দুয়ের মাঝে ভাড়ার তফাৎ মাত্র ১০ টাকা। বাস স্টেশন থেকে টমটম বা রিক্সায় করে মাতামুহুরী ব্রীজ ঘাট।  সেখান থেকে বোটে (ইঞ্জিনচালিত নৌকা) করে পোয়ামুহুরী বাজার ঘাটে নামতে হবে। বর্ষায় ইঞ্জিন বোট ভাড়া জনপ্রতি দু’শ টাকা ও শুষ্ক মৌসুমে স্পীড বোট ভাড়া ৪/৫ শ’ টাকা। রিজার্ভ ইঞ্জিন বোট কিংবা স্পীড বোটে ভাড়া ৫/৬ হাজার টাকা পড়বে। নদীতে পানি বেশী থাকলে প্রতিবোটে ১৪/১৫ জনও যেতে পারে।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: ভ্রমণ পাগল,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: এপ্রিল 13, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.