রাজবাড়ি – দিনাজপুর

দিনাজপুর রাজবাড়ি(Rajbari) বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের দিনাজপুর জেলার সদর উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত। রাজারামপুর গ্রামের সন্নিকটে এই স্থানটি “রাজ বাটিকা” নামে বিশেষভাবে পরিচিত।দিনাজপুর রাজবাড়ি রাজা দিনাজ স্থাপন করেন। কিন্তু অনেকের মতামত পঞ্চদশ শতকের প্রথমার্ধে ইলিয়াস শাহীর শাসনামলে সুপরিচিত “রাজা গণেশ” এই বাড়ির স্থপতি। সপ্তদশ শতাব্দীর শেষের দিকে শ্রীমন্ত দত্ত চৌধুরী দিনাজপুরের জমিদার হন। কিন্তু শ্রীমন্ত দত্ত চৌধুরীর ছেলের অকাল মৃত্যুর হওয়াতে, তার ভাগ্নে “সুখদেব ঘোষ” তার সম্পত্তির উত্তরাধিকার হন।

দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাসাদটি এখন শুধুই পরিত্যক্ত ইটের সমাহার। ভবনগুলি ভেঙ্গে খন্ড খন্ড হয়ে যাওয়ার শেষ পর্যায়ে উপনীত। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজা ও জমিদার রাজবাড়ির বিভিন্ন অংশ নির্মাণ করলেও মূল প্রাসাদ ভবনটি তিনটি প্রধান মহলে (ব্লক) বিন্যস্ত। এগুলি আয়না মহল, রানী মহল ও ঠাকুরবাড়ি মহল হিসেবে পরিচিত। প্রাসাদ এলাকায় বেশ কয়েকটি মন্দির, রেস্ট হাউস, দাতব্য চিকিৎসালয়, দিঘি এবং বিভিন্ন কর্মচারী ও পোষ্যদের আবাসস্থল নির্মাণ করা হয়েছিল।

এ সকল দালান-কোঠা এবং পূর্ব ও দক্ষিণের দুটি বৃহৎ দিঘি, পরিখা, বাগান, একটি বিলুপ্ত চিড়িয়াখানা, একটি টেনিস কোর্ট, কাচারি ও কুমার হাউসসহ রাজবাড়িটি প্রায় ১৬.৪১ একর এলাকা নিয়ে বিস্তৃত। মূল মহল ও এর সংলগ্ন পরিখা সম্ভবত আঠারো শতকে মহারাজা প্রাণনাথ ও তাঁর পোষ্যপুত্র রামনাথ নির্মাণ করেছিলেন। প্রাসাদটি নির্মিত হয়েছিল ইউরোপীয়, মুসলিম ও হিন্দু রীতির এক অদ্ভুত সংমিশ্রণে, যা খুব একটা দৃষ্টিনন্দন হয় নি। রামডাঙ্গা নামক দুটি সমান্তরাল পরিখা প্রাসাদটি ঘিরে ছিল। পরিখাটি সম্ভবত আলীবর্দী খান এর শাসনামলে রংপুরের ফৌজদার সৈয়দ আহমেদ খানের আক্রমণের পরই রামনাথ খনন করিয়েছিলেন।

 

গঠনশৈলীঃ

আসলে বর্তমানে দিনাজপুর রাজবাড়ি বলতে এর অবশিষ্টাংশকে বুঝায়। এর বেশিরভাগ অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। শুধু গুটিকয়েক স্থাপনা এখন বিদ্যমান। রাজবাড়ির প্রবেশ পথে পশ্চিমমুখী একটি মিনার আকৃতির বিশাল তৌরণ আছে। রাজবাড়ির সীমানার মধ্যে তৌরণের কিছু দূরে বামদিকে একটি উজ্জ্বল রঙ করা কৃষ্ণ মন্দির এবং ডানদিকে রাজবাড়ির বহিঃমহলের কিছু ধ্বংসাবশেষ আছে। রাজবাড়ির সীমানার ভেতরে আরকটি তৌরণ আছে, যার মাধ্যমে রাজবাড়ির প্রধান বর্গাকার অংশে প্রবেশ করা হয়। রাজবাড়ির প্রধান অংশের পূর্বদিকে আরেকটি সমতল ছাদবিশিষ্ট মন্দির আছে। যার মধ্যে অনেক হিন্দু দেবতার প্রতিমা বিদ্যমান।

রাজবাড়ি প্রধানত তিনটি মহল বা ব্লকের সমন্বয়ে গঠিত, যথাক্রমেঃ আয়না মহল, রাণি মহল ও ঠাকুরবাটি মহল। এর পাশাপাশি আরো কিছু অপ্রধান কিছু স্থাপনা আছে। যা জমিদার পরিবারের বিভিন্ন রাজা ও উত্তরাধিকার কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠিত। এই রাজবাড়ির সীমানায় আরো কিছু মন্দির, বিশ্রামাগার, দাতব্য চিকিৎসালয়, পানির ট্যাঙ্ক ও আমলাদের বাসস্থান স্থাপিত হয়। দিনাজপুর রাজবাড়ির ভূমির মোট আয়তন ১৬.৪১ একর যার মধ্যে পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ২ বৃহৎ পানির চৌবাচ্চা/ট্যাঙ্ক, মঠ, বাগান, কাঁচারী ঘর, টেনিস কোর্ট ও কুমারের বাড়ি অন্তর্ভুক্ত।

এই বিশাল রাজবাড়িটি একটি আকর্ষণীয় ঐতিহাসিক ঐতিহ্য। এই রাজবাড়িটি বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক কর্তৃক স্বীকৃত নয়। তাই এই বিশাল স্থাপনাটি অযত্নে অবহেলায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। জনগণ সাধারণত এই স্থানে আবর্জনা ফেলায় এর বিদ্যামান অংশও ধ্বংসপ্রায়।

কিভাবে যাবেনঃ

ট্রেনঃ

ট্রেনে যাওয়া সবচাইতে আরামদায়ক ও বুদ্ধিমানের কাজ। ঢাকার কমলাপুর থেকে ২টি আন্তঃনগর ট্রেন দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। দ্রুতযান এক্সপ্রেস কমলাপুর থেকে সন্ধ্যা ৭.৫০ মিনিটে ছেড়ে যায় এবং দিনাজপুর গিয়ে পৌছায় সকাল ৫.১০ মিনিটে। অপরদিকে একতা এক্সপ্রেস সকাল ৯.৫০ মিনিটে কমলাপুর থেকে ছেড়ে সন্ধ্যা ৭.২০ মিনিটে দিনাজপুর গিয়ে েপৗছায়।

দ্রুতযান এক্সপ্রেস > বুধবার > ঢাকা থেকে ছাড়ে ১৯:৫০ মি. > দিনাজপুর েপৗছায় ০৫:১০ মিনিটে
দ্রুতযান এক্সপ্রেস > বুধবার > দিনাজপুর থেকে ছাড়ে ০৮:২০ মি. > ঢাকায় েপৗছায় ১৮:১৫ মিনিটে

একতা এক্সপ্রেস > মঙ্গলবার > ঢাকা থেকে ছাড়ে ০৯:৫০ মি. > দিনাজপুর েপৗছায় ১৯:২০ মিনিটে
একতা এক্সপ্রেস > েসামবার > দিনাজপুর থেকে ছাড়ে ২২:০০ মি. > ঢাকায় েপৗছায় ০৭:৩৫ মিনিটে

 

বাসঃ

ঢাকা-দিনাজপুর বাস সার্ভিস ও খুব ভাল। রাস্তা ভাল হওয়ায় বাসে যেতে েকান প্রকার সমস্যা হয়না। ঢাকার গাবতলী হতে নাবিল পরিবহন, হানিফ পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন সহ বেশ কয়েকটি বাস সার্ভিস রয়েছে। তাছাড়া উত্তরা হতেও কিছূ পরিবহন দিনাজপুর যায়।

 

কোথায় থাকতে পারেনঃ

দিনাজপুর শহরে থাকার জন্য বাংলাদেশ পর্যটন কপোর্রেশন এর মোটেল সহ অনেকগুলো ব্যাক্তিমালিকানাধীন হোটেল রয়েছে। আপনি চাইতে এখানে থাকতে পারেন। হোটেল ডায়মন্ড, পূর্নভবা, েহাটেল আল রশিদ উল্লেখযোগ্য।

েহাটেল বুকিং এর জন্য নিচের নাম্বারে েযাগােযাগ করতে পারেনঃ

পর্যটর েমাটেল ঃ ০৫৩১- ৬৪৭১৮
েহাটেল তিলত্তমা ঃ ০৫৩১- ৬১২৭৯
েহাটেল আল রশিদ ঃ ০৫৩১-৬৫৬৫৮, ৬৪২৫১
েহাটেল েগাল্ডেন টাওয়ান ঃ ০৫৩১- ৬৫৯২০
েহাটেল ইউনিক ঃ ০৫৩১-৫২২০৩, ০১৭৩৬৩৩৫২৬৪।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: সাফায়েত,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি 22, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.