বান্দরবন শহরের প্রবেশদ্বারে বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের পাশে এবং বান্দরবান জেলা শহরে প্রবেশের ৫ কি:মি: আগে অবস্থিত বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের আকর্ষনীয় পর্যটন স্পট মেঘলা। নাম মেঘলা হলেও মেঘের সাথে মেঘলা পর্যটন স্পটের কোন সর্ম্পক নেই। এ যেন ভুমিতেই বিছানো হয়েছে সুন্দরের গালিচা।
মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সের(Meghla Parjatan Complex) প্রধান ফটক থেকেই চোখে পড়বে বিশাল লেক। সেই লেকের স্বচ্ছ পানিতে রয়েছে নানান ডিজাইনের নৌকা। যেখানে খুবই স্বল্প খরচে মনের আয়েশে পানিতে ভেসে বেড়ানো যায়। মেঘলায় পানির শব্দ ছাড়া আর কিছুই আপনার কানে আসবে না। বর্ণিল সব নৌকা চলে ব্যাটারীতে। এ কারণে পানির ছলাৎ ছলাৎ শব্দ আপনাকে হিরন্ময় নিরবতার অনুভূতি যোগাবে।
বিশাল আকৃতির লেকের পরে তিন’শ ফুট উঁচু পাহাড়। যে কারণে বাইরে চলাচলকারি যানবাহনের শব্দ আপনার শ্রবণ ইন্দ্রিয়র প্রশান্তিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।
দূষনমুক্ত এই লেকে চলার সময় দেখতে পাবেন নানান জাতের জলজ পাখির খেলা। মাথার উপর গাছের ডাল পানি ছুঁই ছুঁই করছে। সে সব গাছে কাঠ বিড়ালীর তিড়িং বিড়িং খেলা ও বিভিন্ন পাখির কলতান সব মিলিয়ে মনমুগ্ধকর পরিবেশ।
যখন নৌকায় ঘুরছেন তখন মাথার উপর সাঁই সাঁই করে চলছে ক্যাবল কার। যাতায়াত মিলিয়ে ১৬০০ ফুট দৈঘ্যের এ কেবল কার এক পাহাড় থেকে লেকের উপর দিয়ে অন্য পাহাড় ছুঁয়ে আসা ভ্রমণকারীদের মনে রোমাঞ্চকর অনূভূতির সঞ্চার করতে সক্ষম।
পানির দু’শ ফুট উপরে দিয়ে ক্যাবল কারে যাতায়াতের সময় শূণ্যে ভেসে থাকার দারুন এক অনূভুতির সৃষ্টি করবে। কারো কারো মনে কিঞ্চিত ভীতিও সঞ্চার করতে সক্ষম ক্যাবল কার।
আয়তনের দিক থেকে মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স খুব বেশি বড় নয়, আবার ছোটও বলা যাবে না। তবে বেশ পরিপাটি। বেশ কয়েকটি ছোট বড় পাহাড় বেষ্টিত এই পর্যটন কেন্দ্রে নানামূখী বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে।
প্রধান ফটক থেকে কংক্রিটের ঢালু ওয়ার্কওয়ে দিয়ে নেমে গেলেই সামনে পড়বে পিকনিক স্পট। সেখানে রয়েছে উন্মুক্ত মঞ্চ। শব্দ দুষণ না করে চালিয়ে নিতে পারবেন শিক্ষা সফর অথবা পিকনিকের অনুষ্ঠানাদি।
পিকনিক স্পটের পাশেই রয়েছে শিশু পার্ক। যেখানে শিশুদের মাতিয়ে রাখার জন্য রয়েছে নানাবিধ বন্দোবস্ত। শিশু পার্ক সংলগ্ন লেকের উপর ঝুকে রয়েছে রেষ্ট হাউস। যার বারান্দায় বসে চুটিয়ে উপভোগ করতে পারবেন চাঁদনী অথবা অমাবশ্যার রাত।
তখন লেকের স্বচ্ছ জলের শীতল হাওয়া অন্যরকম ভালো লাগার পরশে জুড়িয়ে দিয়ে যাবে মন। যান্ত্রিকতা সেখানে কোন ভাবেই বাদ সাধবে না।
পিকনিক স্পটের দুইদিকে রয়েছে দু’টি ঝুলন্ত বীজ। একটি দিয়ে পার হয়ে ওই পারের টিলায় অবস্থিত মিনি সাফারী পার্ক, চিড়িয়াখানা ঘুরে আরেকটি সেতু দিয়ে পার হয়ে আসা যায়।
নান্দনিক এসব ঝুলন্ত ব্রীজ খুবই উপভোগ্য। দোলনার মতো দুলুনী আপনার মনকেও দোলা দিয়ে যাবে। ঠিক মাঝামাঝি পৌছে গেলে মনে হবে এই বুঝি টুপ করে খসে পড়বে পানিতে। কিন্তু না, কিছুটা ভয় ধরিয়ে দিলেও দুই দিকের শক্ত বাঁধন ঠিকই আগলে রাখবে আপনাকে।
টিলাগুলো বাহারী বৃক্ষে আচ্ছাদিত। পর্যটন কেন্দ্রটির আরেকটি উপভোগ্য বিষয় রয়েছে তা হচ্ছে তাজা ফলের দোকান। যেখানে পেপে, কলা, জাম্বুরা, পেয়ারা, আনারস, মাল্টা পাবেন একেবারে টাটকা। সামনে বেঞ্চ পাতা তাতে বসে স্বল্পমূল্যে পাহাড়ী সতেজ ফলে উদরপুর্তি করতে পারেন।
মেঘলার প্রবেশ ফি
মাত্র ২০/- টাকা
মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স কীভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে বান্দরবানের বেশ কয়েকটি বাস আছে যেমন শ্যামলি, হানিফ, ইউনিক, এস আলম, ডলফিন। রাত ১০ টায় অথবা সাড়ে ১১টার দিকে কলাবাগান, সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে এসব বাস বান্দরবানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। নন এসি বাসে জন প্রতি ভাড়া ৫৫০ টাকা। এসি ৯৫০ টাকা।
চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান যেতে পারেন। বদ্দারহাট থেকে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে পূবালী ও পূর্বানী পরিবহনের বাস যায়। এসব বাসে জনপ্রতি ভাড়া ২২০ টাকা।
এরপর বান্দরবান বাস ষ্টেশন থেকে মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স যেতে লোকাল বাসে জনপ্রতি ১০-১২ টাকা এবং টেক্সি রিজার্ভ ১০০-১২০ টাকা এবং ল্যান্ড ক্রুজার, ল্যান্ড রোভার ও চাঁদের গাড়ী ৪৫০-৫০০ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে।
কোথায় থাকবেন
বান্দরবনে পর্যটন কর্পোরেশনের একটি হোটেল আছে মেঘলাতে। এখানে থাকতে পারেন। ভাড়া ৭৫০ হইতে ২০০০টাকা পর্যন্ত। বুকিং এর জন্য ফোন করতে পারেনঃ ০৩৬১-৬২৭৪১ এবং ০৩৬১-৬২৭৪২
হোটেল ফোর স্টারঃ এটি বান্দরবান বাজারে অবস্থিত। ভাড়া সিঙ্গেল-৩০০ টাকা, ডাবল- ৬০০, এসি-১২০০ টাকা। বুকিং ফোন:-০৩৬১-৬৩৫৬৬, ০১৮১৩২৭৮৭৩১,০১৫৫৩৪২১০৮৯।
হোটেল থ্রী স্টারঃ এটি বান্দরবান বাস স্টপের পাশে অবস্থিত। নীলগিরির গাড়ী এই হোটেলের সামনে থেকে ছাড়ে। এটি ৮/১০ জন থাকতে পারে ৪ বেডের এমন একটি ফ্ল্যাট। ভাড়া নন এসি ফ্ল্যাট-২৫০০ টাকা, এসি-৩০০০ টাকা। বুকিং ফোনঃ ০১৫৫৩৪২১০৮৯।
হোটেল প্লাজা বান্দরবান: এটি বাজারের কাছে অবস্থিত। ভাড়া সিঙ্গেল-৪০০ টাকা, ডাবল- ৮৫০, এসি-১২০০ টাকা। বুকিং ফোন:- ০৩৬১-৬৩২৫২।