মায়াদ্বীপ, মায় দিয়ে শুরু হওয়া এই দ্বীপটি হলো মেঘনা নদীর বুকে ভেসে ওঠা একটি দারুন সুন্দর চর এর নাম। মায়াদ্বীপ (Maya Dwip) নারায়ানগঞ্জে জেলার সোনারগাঁও উপজেলার বারদী ইউনিয়নের অন্তর্গত।
মায়াদ্বীপের আসল নাম নুনেরটেক। মায়াদ্বীপ মেঘনা নদী দ্বারা সোনারগাঁয়ের মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। নদীপথে সোনারগাঁ থেকে দূরত্ব প্রায় চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার।
ত্রিভুজ আকৃতির নুনেরটেকের কোল ঘেঁষেই প্রায় ৩৫-৩৬ বছর আগে জেগে ওঠে আরও একটি চর, যার তিনটি অংশ রয়েছে এবং তিনটি অংশের তিনটি নাম হল গুচ্ছগ্রাম, সবুজবাগ আর রঘুনার চর। এ গুচ্ছ গ্রামের সামনে বিশাল অংশই হল মায়াদ্বীপ।
অপরূপ সৌন্দর্যের একটি চর এই মায়াদ্বীপ। মায়াদ্বীপ খুব বড় না হলেও চারিপাশে শুধু সবুজ আর সবুজ। এ যেন একটি সবুজ প্রান্তরের গ্রাম। বালুকাময় অনিন্দ্যসুন্দর রূপের এই দ্বীপটি একেক ঋতুকে একেক সৌন্দর্যের পসরা নিয়ে হাজির হয়।
বর্ষায় বিশাল জলরাশি যেন মেঘনার রূপকে সাগরের আকার ধরা দেয়, এসময় নৌকা নিয়ে হারাতে মন চায় মেঘনার বুকে। আবার শরতে সারি সারি কাশবনের সমাহারে যেন হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে প্রকৃতির মাঝে। কিংবা হালকা শীতে মিষ্টি রোদে বালুকাময় তটভূমির ওপর দিয়ে সকাল কিংবা অস্তগামী সূর্যের আলোয় নিজেকে রাঙাতে বড় ভালো লাগে। আর গ্রীষ্মের ধু ধু বালি যেন অন্যরূপে ধরা দেয় এ চরে।
জ্যোৎস্না রাতে, ভরা চাঁদের হাসিতে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করবে অসীমের মাঝে। এ দ্বীপ চমৎকার একটি স্থান ঘুরে বেড়ানোর জন্য । বর্ষায় এই দ্বীপ পানির নিচে থাকলেও শুকনো মৌসুমে বিরাট অঞ্চল নিয়ে তা দৃষ্টিগোচর হয়।
মায়াদ্বীপ এর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনার শাখা নদীর নীল জল দেখলে লাফিয়ে পরতে ইচ্ছে করবে। এই জলে মনের আনন্দে সাঁতার কাটতে পারবেন। এই সবুজ দ্বীপের মাথায় দাঁড়িয়ে আকাশ পানে চোখ বন্ধ করে দুই হাত মেলে দিয়ে পাখি হয়ে উড়ে যেতে ইচ্ছে হবে। নদী থেকে উঠে আসা সতেজ-নির্মল বাতাস আর সবুজের অপার সৌন্দর্য আপনার প্রাণকে করে তুলবে নির্মল আর আনন্দময়।
একটানা বয়ে চলা বাতাসে নিজেকে সকল ক্লান্তি থেকে ভারমুক্ত মনে হবে। তাই যে কোন এক বন্ধের দিন চলে যান পরিবারসহ কিছুটা সময় কাটিয়ে আসুন প্রকৃতির এই অপার মাধুর্যে।
মায়াদ্বীপ যেভাবে যাবেন:
রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান থেকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কয়েক মিনিট পরপর বিভিন্ন বাস ছেড়ে যায় ভাড়া ৪০ হতে ৫০ টাকা। বাসে গিয়ে সোজা নামতে হবে সোনারগাঁওয়ে/ মোগরাপাড়া। তারপর সেখান ( মোগরাপাড়া) থেকে ইজি বাইকে বৈদ্যের বাজার নেমে নৌকা ভাড়া করে যেতে হবে। সময় লাগবে ৪০ মিনিটের মত। সারাদিনের জন্য নৌকা ভাড়া পড়বে ১০০০-১২০০ টাকা পর্যন্ত।
যেখানে থাকবেন:
ঢাকার কাছেই হবার কারণে আপনি দিনে যেয়ে দিনেই ফিরতে পারবেন, তাই ওখানে থাকার প্রয়োজন পড়বেনা। এরপরও যদি আপনি নারায়ণগঞ্জে রাত্রিযাপন করতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে নারায়ণগঞ্জ সদরে এসে হোটেলে থাকতে হবে। নারায়ণগঞ্জে থাকার জন্য বিভিন্ন হোটেল রয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্ট।
একটা কথা মনে রাখবেন, সন্ধ্যার পর ওখানে থাকা চলবে না। নৌকা এমনভাবে ছাড়বেন যাতে সন্ধ্যার আগে বৈদ্যের বাজার এসে পৌছায়। বন্দর এলাকা বৈদ্যের বাজারে প্রয়োজনীয় সকল কিছু কিনতে পাওয়া যায়।