ঢাকা থেকে প্রায় ৩৬ কিলোমিটার দূরত্বে পদ্মা, ইলিশ আর মিষ্টির জন্য বিখ্যাত মাওয়া ঘাট(Mawa Ghat)। ঢাকা থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ইলিশ খেতে যেত ঢাকাবাসীর প্রথম পছন্দ মাওয়া ফেরি ঘাট। প্রাচীন কাল থেকেই ইলিশের চাহিদা সর্বত্র বর্তমানে এর চাহিদা দেশ চাড়িয়ে বিদেশেও পৌছে গেছে, আর সেই ইলিশ যদি হয় মাওয়া ঘাটের পদ্মার রুপালী ইলিশ তাহলে তো জ্বিবে পানি আসার ই তো কথা ।
আর সে জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখানে ইলিশ খেতে আসেন ভোজন রসিকরা। এই বিশাল চাহিদা পূরণে মাওয়া ঘাটের পাড়ে গড়ে ওঠেছে ছোট-বড় হোটেল। রয়েছে মৌসুমি ফলসহ অন্যান্য পণ্যের বিশাল সমারোহের দোকান। এছাড়াও রয়েছে খণ্ড-খণ্ড মাছের বাজার। এ মাছের বাজার গুলোতে বিক্রি হচ্ছে পদ্মা নদীর তাজা ইলিশ সহ ছোট-বড় মাছ। দর্শনার্থী কিংবা ভোজন রশিক যাই বলেন তাদের কাছে নদীর তাজা মাছের চাহিদা ব্যাপক,আর এখানোও তার ব্যতিক্রম নয়।
ঢাকার খুব কাছে হওয়ার কারনে একদিনে ঘুরে আসতে পারবেন পদ্মার মাওয়া ঘাট থেকে আর দুপুরে পদ্মা ঘাটে বসে ধোয়া ওঠা গরম ভাতের সাথে পদ্মার ভাজা ইলিশ দিয়ে ভুড়ি ভোজ করুন।
মাওয়া ফেরিঘাটের উত্তর দিকে নদীর পাড়দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে যাওয়া যায় অনেক দূরে। নদীর পাড় দিয়ে হাঁটার সময় একপাশে থাকবে রূপালী পদ্মা আর অন্যপাশে থাকবে সবুজে ঘেঁড়া গ্রাম। ইচ্ছে করলেই ঢুকে পরা যায় গ্রামের ভেতরে। ছায়া সুনিভির গাছগাছালিতে ঢাকা চমৎকার একটি গ্রাম দেখে নেয়া যাবে ঘন্টাখানেক পাঁয়ে হেঁটেই। নিশ্চয়াতা দিয়ে বলতে পারি গ্রামকে গ্রাম হিসেবেই পাবেন এখানে। শহরের কোলাহল আর যান্ত্রিকতা মুক্ত এই গ্রাম অবশ্যই সবার ভালো লাগবে।
দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যার আগে পর্যন্ত নদীতে থাকবে সূর্যের রূপালী ঝিলিক। মৃদু বাতাসে নদীর জলে ছোট ছোট রূপালী ঢেউ ঝলকে দেয় চোখ। দুপুর পেরিয়ে বিকেল গড়িয়ে সূর্য যখন পাটে বসতে চলে তখন ম্লান সূর্যের সোনালী ছায়া পরে নদীর বুকে। চমৎকার সেই মূহুর্ত। নদীর জলে যেন তরল সোনা মিশিয়ে দিয়েছে প্রকৃতি। নদীর উপর দিয়ে একলা নিঃসঙ্গ কোনা বক বা এক ঝাঁক গাংচিল উড়ে যায় তার রাতের আশ্রয়ের দিকে।
পদ্মায় ভেসে ঘোরার মতো মাঝি ও নৌকা দুর্লভ। এপার হতে ওপারে যাওয়ার জন্য আছে লঞ্চ আর স্পীড-বোট। ফেরীতেও পারাপার হতে পারেন। স্পীড বোটে এপার হতে ওপারে যেতে ২০-২৫ মিনিটের মতো লাগে; ভাড়া ১৫০ টাকা। যারা একটু ভীতু এবং সাঁতার জানেন না, তাদের স্পীড-বোটে না চড়াই ভালো। দ্রুতগতির এই স্পীড-বোট পদ্মার বুকে অনেক সময় লাফিয়ে লাফিয়ে চলে যা রোমাঞ্চকর এবং মজাদার বটে, কিন্তু ভয় পেলে তাতে না চড়াই ভালো। লঞ্চ পারাপারে সময় একটু বেশী লাগে, আশেপাশের প্রকৃতিও দেখা যায় বেশী। ভাড়া ৩০ টাকা (লোকাল) এবং ৪০ টাকা (ডাইরেক্ট)। ওখানেও ভালো কিছু খাবার হোটেল হয়েছে। সন্ধ্যার পরে ফেরিতে ফিরতে পারেন। ফেরির তিন তলা থেকে রাতের পদ্মা সৌন্দর্য কখনো ভোলার নয়।
যদি জেলেদের কাছ থেকে তাজা মাছ কিনে খেতে চান তবে আপনাকে অন্তত এক দিনের জন্য সকালের কাঁচা ঘুম ত্যাগ করে মাওয়া পৌঁছাতে হবে সকাল ৯ তার মধ্যে। ওয়া ঘাটে ইলিশ খেতে গেলে দরদাম করতে হবে। কয়েকজন মিলে গেলে আস্ত ইলিশ কিনে নিন। তারপর ভেজে দিতে বলুন। কম মানুষ থাকলে পিস হিসেবে কিনে খেতে পারেন। এক পিস ইলিশের দাম পড়বে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। আস্ত ইলিশ কিনলে আকৃতি অনুযায়ী দাম ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত পড়তে পারে। সঙ্গে ইলিশ মাছের ডিম ও ইলিশ মাছের লেজ ভর্তা খেতে ভুলবেন না!
মাওয়া মানেই কি শুধু ইলিশ ?? ইলিশ ছাড়াও সেখানে বড় বড় চর্বিযুক্ত পাঙ্গাস মাছের পেটির স্বাদ নিতে পারেন অনায়াসে। শিং , চিংড়ি ছাড়াও আছে নদীর বেশি কিছু দেশি মাছের সমারোহ। যাদের মাছের প্রতি কিঞ্চিৎ বিরক্ত বিশেষ করে কাঁটা বা স্বাদের কারণে তাদের জন্য আছে মুরগি ও মাংসের ব্যবস্থা।যদি ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্তি অনুভব করেন তবে চিন্তার কিছু নাই এখানে খুব সহজেই পাবেন নদী পার হয়ে আশা বরিশালের আমড়া আর খুলনার বড় বড় ডাব।
আর শুধু ইলিশ খেয়ে চলে আসা নেহায়েত বোকামি হবে যদি নদীর পাড়ে বসে পদ্মার বিশাল জলের একটু উন্মাদনা না দেখেন। তার জন্য বেস্ট প্ল্যান হবে, মাওয়া ঘাট থেকে জন প্রতি ২৫/= টাকা করে ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সায় লোহজং যেতে পারেন। সম্পূর্ণ অটো রিক্সায় রিজার্ভ নিলে ১৫০/= টাকা নিবে। সেখান থেকে নৌকায় যাবেন পদ্মা রিসোর্ট। রিসোর্ট ও দেখা হবে নৌকা ভ্রমণ ও হয়ে যাবে। ইচ্ছা করলে সারা দিন অথবা রাত দিন থাকার ব্যবস্থা আছে রিসোর্ট এ। না থাকতে চাইলেও অসুবিধা নেই শুধু এক্সট্রা ৫০ টাকা দিলেই ঘুরে দেখা যাবে সম্পূর্ণ রিসোর্ট।
যেভাবে যাবেন মাওয়া ফেরি ঘাট :
ঢাকার মিরপুর ১০, ফার্মগেট, শাহবাগ থেকে স্বাধীন পরিবহনে ভাড়া নিবে ১০০ টাকা। এ ছাড়াও ঢাকার গুলিস্তান থেকে সারাদিনই পাবেন মাওয়া যাওয়ার বাস। ইলিশ, গাঙচিল পরিবহন এবং বিআরটিসির এসি বাস সার্ভিস আছে মাওয়া যাওয়ার জন্য। ইলিশ আর গাঙচিল পরিবহনে ভাড়া নেবে গুলিস্তান থেকে মাওয়া ৭০ টাকা।