বিবিচিনি মসজিদ – বরগুনা

বাংলাদেশে মোগল স্থাপত্যের নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম বরগুনার বিবিচিনি শাহি মসজিদ (Bibicini Shahi Mosque / Mosjid )। প্রায় সাড়ে তিন শ বছর পুরোনো এই মসজিদটির স্থাপত্যরীতিতে মোগল ভাবধারার ছাপও সুস্পষ্ট।

বরগুনার বেতাগী উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বিবিচিনি ইউনিয়নে এই মসজিদটি অবস্থিত। স্থানীয় লোকজন জানান, মসজিদটি দেখতে বছরজুড়ে এখানে আসেন পর্যটক ও দর্শনার্থীরা। তবে পর্যটকদের আকর্ষণ ধরে রাখা বা ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে টিকে থাকা এই স্থাপনাটি সংরক্ষণে নেই তেমন কোনো উদ্যোগ।

মসজিদটির অবস্থান প্রায় ৪০ ফুট সুউচ্চ টিলার ওপর। বর্গাকার মসজিদটির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ৪০ ফুট করে। চারপাশের দেয়াল ছয় ফুট আট ইঞ্চি চওড়া। উত্তর ও দক্ষিণ পাশে রয়েছে খিলান আকৃতির প্রবেশপথ। মসজিদের ইট ধূসর বর্ণের। এই ইটের দৈর্ঘ্য ১২ ইঞ্চি, প্রস্থ ১০ ইঞ্চি এবং চওড়া ২ ইঞ্চি। বর্তমান যুগের ইটের চেয়ে এর আকৃতি একেবারেই আলাদা। দর্শনার্থী ও নামাজিদের ওঠানামার জন্য মসজিদের দক্ষিণ পাশে ৪৮ ফুট দীর্ঘ ও পূর্ব পাশে ৪৬ ফুট দীর্ঘ সিঁড়ি রয়েছে।

বিভিন্ন বইপত্র ঘেঁটে জানা যায়, ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি সুদূর পারস্য থেকে ধর্ম প্রচারের জন্য দিল্লিতে আসেন হজরত শাহ নেয়ামত উল্লাহ নামের এক সাধক। ওই সময় মোগল সম্রাট শাহজাহানের ছেলে বঙ্গ দেশের সুবাদার শাহ সুজা এই মহান সাধকের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। দিল্লিতে আসার তিন থেকে চার বছরের মাথায় ১৬৫৯ সালে শাহ সুজার আগ্রহে কয়েকজন শিষ্যকে সঙ্গে নিয়ে নেয়ামত উল্লাহ আসেন বেতাগীর এই গ্রামে। তখন এই গ্রামের নাম বিবিচিনি ছিল না। পরে শাহ সুজার অনুরোধে এই গ্রামেই তিনি এক গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদ নির্মাণ করেন।

জানা যায়, শাহ নেয়ামত উল্লাহর মেয়ে চিনিবিবির নামানুসারে এই গ্রামের নামকরণ করা হয় বিবিচিনি। সেই নাম অনুসারে মসজিদটি বিবিচিনি মসজিদ নামে পরিচিতি পায়। ওই সময়ে শাহ নেয়ামত উল্লাহর অনেক অলৌকিক কীর্তি দেখে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা তাঁর কাছে ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নেন।

বিবিচিনি মসজিদের পাশে রয়েছে তিনটি কবর। এলাকার লোকজনের মতে, এখানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন শাহ নেয়ামত উল্লাহ, তাঁর দুই মেয়ে চিনিবিবি ও ইছাবিবি। সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে ১৭০০ সালে শাহ নেয়ামত উল্লাহ ইন্তেকাল করেন।

ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে টিকে থাকা এই শৈল্পিক স্থাপনার শরীরজুড়ে এখন শুধুই অযত্ন আর অবহেলার ছাপ। মসজিদটির দেয়ালের কিছু কিছু অংশের পলেস্তারা ধসে গেলে ১৯৮৫ সালে উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে মেরামত করা হয়। এরপর ১৯৯২ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের দায়িত্ব নেয় এবং ঐতিহাসিক নিদর্শনের তালিকাভুক্ত করে। মসজিদটি দেখাশোনার জন্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ একজন অস্থায়ী তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করে।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে যেতে হলে আপনাকে বরগুনার বাসে করে আগে বরগুনা সদরে যেতে হবে। ভাড়া ৩০০/- টাকা থেকে ৫০০/- টাকার মধ্যে।

অথবা আপনি সরাসরি বেতাগীর / বরগুনার লঞ্চে করে বেতাগী / বরগুনা যেতে পারেন। প্রতিদিন ঢাকার সদরঘাট থেকে বিকেল ৫-৬টার মধ্যে এসব লঞ্চ ছেড়ে যায়।

বরগুনা পৌছানোর পরে বাসযোগে বেতাগি যাওয়ার পর মোটরসাইকেল অথবা রিক্সাযোগে গন্তব্যস্থলে পৌছে যেতে পারবেন। এমনকি বরিশাল হতে বাস যোগে সরাসরি এই দর্শনীয় স্থানে যেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেনঃ

বেতাগীতে থাকার কোন ভাল ব্যবস্থা নাই। বরগুনা সদরে থাকার জন্য বেশকিছু আবাসিক হোটেল ও রেস্ট হাউজ রয়েছে।

১। জেলা পরিষদ রেস্ট হাউজ (ফোনঃ ০৪৪৮-৬৪১০)
২। খামারবাড়ি রেস্ট হাউজ (ফোনঃ ০৪৪৮-৬৪৪৯)
৩। পানি উন্নয়ন বোর্ড রেস্ট হাউজ (ফোনঃ ০৪৪৮-৬৫৫১)
৪। এভাগ্র সার্ভিস সেন্টার (ফোনঃ ০৪৪৮-৬৭০৮)
৫। গণপূর্ত অধিদফতর (ফোনঃ ০৪৪৮-৬৫০৫)
৬। ইলাজি ডি রেস্ট হাউজ (ফোনঃ ০৪৪৮-৬০৫৪)
৭। সিয়ারাপি রেস্ট হাউজ (ফোনঃ ০৪৪৮-৬০৫১)
৮। হোটেল আলম, ফোনঃ ০৪৪৮-৬২২৩৪
৯। বরগুনা রেস্ট হাউজ, ফোনঃ ০১৭১৮৫৮৮৮৫৬
১০। হোটেল তাজবিন, ফোনঃ ০৪৪৮-৬২৫০৩

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: আবদুর রহমান,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: মার্চ 9, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.