বাংলাদেশ নেভাল একাডেমি – চট্টগ্রাম

বাংলাদেশ নেভাল একাডেমি (BNA) একটি প্রশিক্ষণ ও সামরিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ​​বাংলাদেশ নেভাল একাডেমি(Bangladesh Naval Academy) হচ্ছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর মধ্যে কর্মকর্তা হতে প্রস্তুতদের এ প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এটি বন্দর নগরী চট্টগ্রামে অবস্থিত।

১৪ জন ক্যাডেট নিয়ে চট্টগ্রামের জলদিয়াস্থ মেরিন একাডেমী চত্বরে অস্থায়ীভাবে নৌবাহিনীর অফিসারদের প্রশিক্ষণের জন্য বাংলাদেশ নেভাল একাডেমী প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রামে প্রধান নৌঘাঁটি বানৌজা ঈসাখানে এই একাডেমী স্থানান্তরিত হয়। ১৯৮৮ সালের ২ জুন এই একাডেমী আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি লাভ করে এবং কর্ণফুলী নদীর মোহনায় পতেঙ্গাতে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমী স্বাধীনভাবে তার কার্যক্রম শুরু করে। ‘আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর’ এই মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে দীর্ঘ ৩ দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশি ও বিদেশি নৌবাহিনী অফিসারদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অত্র একাডেমী বাংলাদেশের জাতীয় অঙ্গনে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখে চলেছে। ১৯৯৮ সালের জুলাই মাস থেকে বিদেশী নৌবাহিনী ক্যাডেটদের প্রথম ব্যাচ বাংলাদেশ নেভাল একাডেমীতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ শুরু করে। ২০০৯ সাল পর্যন্ত বন্ধুপ্রতিম দেশ প্যালেস্টাইন, মালদ্বীপ এবং কাতার থেকে মোট ৩৬ জন বিদেশী ক্যাডেট এখান থেকে কমিশন লাভ করেছেন। প্রথমবারের মতো ২০০০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ১৬ জন মহিলা ক্যাডেট একাডেমীতে প্রশিক্ষণ শুরু করে। এ যাবত মোট ৫৪ জন মহিলা অফিসার বাংলাদেশ নেভাল একাডেমী থেকে কমিশন লাভ করে।

নেভাল একাডেমীতে অফিসার ক্যাডেট (উচ্চমাধ্যমিক পাশ) ও সরাসরি ভর্তিকৃত অফিসারদের (স্নাতক/স্নাতকোত্তর ডিগ্রি) মৌলিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। মূলত নূতন যোগদানকৃত ক্যাডেটদের মধ্যে দেশপ্রেম, সততা, নেতৃত্বের গুণাবলীর সমন্বয় ঘটিয়ে এবং তাদের শারীরিক ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেশাগতভাবে একজন দক্ষ ও চৌকষ নেভাল অফিসার হিসাবে গড়ে তোলাই নেভাল একাডেমীর মূল লক্ষ্য। ক্যাডেটরা অত্র একাডেমীতে প্রতি টার্মে ৬ মাস করে ৩ টার্মে মোট ১৮ মাসের প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে। একাডেমীর প্রশিক্ষণ শেষে মিডশীপম্যান হিসেবে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে তারা ৬ মাসের জন্য জাহাজে গমন করে। কমিশন লাভের পাশাপাশি বিএনএ ক্যাডেটগণ বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস থেকে বিএসসি (পাস) ডিগ্রিও লাভ করে আসছে। মূলত প্রথমদিকে বিএসসি ডিগ্রীর জন্য বিএনএ ১৯৮৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত হয়। এরপর ১৯৯৫ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং সর্বশেষ ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস থেকে অফিসারগণ বিএসসি (পাস) ডিগ্রি লাভ করছেন। প্রকৌশল ও বিদ্যুৎ প্রকৌশল শাখার অফিসারগণ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়/মিলিটারী ইনস্টিটিউট অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণ করেন।

ক্যাডেট প্রশিক্ষণ ছাড়াও অত্র একাডেমীতে জুনিয়র স্টাফ কোর্স, ব্রাঞ্চ র‌্যাংক কমন কোর্স এবং কম্পিউটার কোর্স পরিচালনা করা হয়। ১২ সপ্তাহের জুনিয়র স্টাফ কোর্সে লেফটেন্যান্ট / লেঃ কমান্ডার পদবীর কর্মকর্তাগণ অংশগ্রহণ করেন। এই কোর্সের উদ্দেশ্য হল অফিসারদের পেশাগত জ্ঞান ও স্টাফ অফিসার হিসেবে দক্ষতা বৃদ্ধি করে উচ্চতর পদে বিভিন্ন স্টাফ-প্রশিক্ষক ও অধিনায়ক পদে নিয়োগের জন্য তৈরি করা। উক্ত জুনিয়র স্টাফ কোর্সে যুক্তরাজ্য, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলংকা, কাতার, সৌদি আরব, তুরস্ক প্রভৃতি দেশের নেভাল অফিসারগণ অংশগ্রহণ করেন। গত কয়েক দশকে নেভাল একাডেমীর ভূমিকা ও অর্জনের সীকৃতি সরূপ ২০০৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর একাডেমী প্রধানমন্ত্রীর নিকট হতে সম্মানসূচক জাতীয় পতাকা লাভ করেছে। নেভাল একাডেমী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ভাবমূর্তি সমুন্নত রেখেছে।

কিভাবে যাবেন

কর্ণফুলী নদীর মোহনায় পতেঙ্গা বন্দর নগরী চট্টগ্রামে অবস্থিত।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: আবদুর রহমান,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি 13, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.