বড় কাটরা – ঢাকা

বড় কাটরা(Bara Katra) রাজধানী ঢাকার চক বাজারের দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে অবস্থিত মুঘল আমলের নিদর্শন। সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহ সুজার নির্দেশে ১৬৪১ খ্রিস্টাব্দে (হিজরী ১০৫৫) বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে এই ইমারতটি নির্মাণ করা হয়। এর নির্মাণ করেন আবুল কাসেম যিনি মীর-ই-ইমারত নামে পরিচিত ছিলেন। প্রথমে এতে শাহ সুজার বসবাস করার কথা থাকলেও পরে এটি মুসাফিরখানা হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

এক সময় স্থাপত্য সৌন্দর্যের কারনে বড় কাটরার সুনাম থাকলেও বর্তমানে এর ফটকটি ভগ্নাবশেষ হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে।

একটি আয়তাকার প্রাঙ্গণকে চারদিক থেকে বেষ্টন করে বাইশটি কক্ষ নিয়ে এটি নির্মিত। এর প্রধান তোরণ ছিলো দুটি- একটি উত্তরে ও একটি দক্ষিণে। দক্ষিণ তোরণটি নদীর দিকে থাকায় এ অংশ বৃহৎ ও বিশেষ পরিকল্পনায় নির্মিত হয়েছিলো। পূর্ব-পশ্চিম অংশের মাঝামাঝি অংশে তিনতলা উঁচু ফটক। তার দুপাশে দোতলা ঘরের সারি। একেবারে দুপ্রান্তে আটকোণা দুটি বুরুজ। চুনসুরকি দিয়ে মজবুত করে তৈরি সম্পূর্ণ রাজকীয় মুগল স্থাপত্য শৈলীর এই ইমারতটি ১৬৪৩ থেকে ১৬৪৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নির্মিত হয়েছে বলে অনুমান করা হয়।

বলা হয়ে থাকে, মুগল শাহজাদা শাহ সুজা নিজের জন্য ঢাকায় একটি প্রাসাদ নির্মাণ করতে মীর-ই-ইমারত বা প্রধান স্থপতি মীর আবুল কাসেমকে দায়িত্ব দেন। কিন্তু নির্মিত হওয়ার পর প্রাসাদটি পছন্দ না হওয়ায় এটি আবুল কাসেমকেই কাটরা হিসেবে ব্যবহার করার জন্য দিয়ে দেন। শর্ত ছিলো যে দানকৃত ওয়াকফ ইমারতের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ কোন অবস্থাতেই ব্যবহারের জন্য অনুমতিপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তির কাছ থেকে কোন প্রকার ভাড়া নিতে পারবে না। এর মধ্যে বাইশটি দোকানির নিকট ওয়াকফ করা দোকান কাটরার খরচ বহনের জন্য দেওয়া হয়। বর্তমানে পুরো কাটরা ইমারতের অর্ধেকেরও বেশি অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে, বাকি অংশও ধ্বংসপ্রায়। প্রয়োজনীয় সংরক্ষণের জন্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এটিকে অধিগ্রহণ করতে চাইলেও এর মালিকদের চরম বাধার কারণে তা সম্ভব হয়নি।

বড় কাটরা ভ্রমনে সময়

মাদ্রাসার প্রবেশ দরজা দিয়ে বিনা পয়সায় এক সময়ের বড় কাটরাতে প্রবেশ করা যায়। দর্শনার্থীরা স্বাচ্ছন্দে এই ঐতিহাসিক স্থান দেখতে পারে।

এটি প্রতিদিনই সকাল ৮.০০ টা থেকে বিকাল ৫.০০ টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। বর্তমানে বড় কাটরা হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম মাদ্রাসার তত্ত্বাবধানে রয়েছে।

বিশেষ দিনগুলোতে বিদেশী ও দেশী দর্শনার্থীরা এই স্থাপনা ঘুরে দেখেন। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ঘুরে দেখতে পারে বড় কাটরা।

 

বড় কাটরা কীভাবে যাবেনঃ

বড় কাটরা যেতে হলে আপনাকে প্রথমে গুলিস্তান আসতে হবে।  তারপরে সেখান থেকে রিক্সায় করে বড় কাটরা। যা চক বাজারের দক্ষিণে বাবু বাজার এলাকায় অবস্থিত।

 

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: সাফায়েত,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি 7, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.