পরশুরামের প্রাসাদ-বগুড়া

পরশুরামের প্রাসাদ(Parshuram Prashad) ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ের সীমানা প্রাচীর বেষ্টনীর ভিতরে যেসব প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম। স্থানীয়ভাবে এটি তথাকথিত হিন্দু নৃপতি পশুরামের প্যালেস নামে পরিচিত। পরশুরাম ছিলেন বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার। তিনি ত্রেতা যুগে বর্তমান ছিলেন। পরশুরামের পিতা জমদগ্নি ব্রাহ্মণ হলেও, মা রেণুকা ছিলেন ক্ষত্রিয়। কঠোর তপস্যা করে তিনি শিবের নিকট হতে পরশু লাভ করেন এবং যুদ্ধবিদ্যা শেখেন।

পাল রাজাগণ এখানে ৭৫০ থেকে ১১২৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। প্রচলিত মিথ অনুসারে রাজা নলের ছোট ভাই নীল ১০৮২-১১২৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এ রাজ্যের রাজা ছিলেন। সেসময় ভারতের দক্ষিণাত্বের শ্রীক্ষেত্র থেকে এক অভিশপ্ত ব্রাহ্মণ মহাস্থানগড়ে আসেন। এই মাতৃহন্তারক ব্রাহ্মণ প্রথমে পুন্ড্রনগরের প্রধান পুরোহিতের দায়িত্ব পান। পরে নল ও তার ভাইয়ের (নীল) মধ্যে মীমাংসা করেতে তাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেন। পরে নল ও নীলের সাথে প্রতারণা করে সে ব্রাহ্মণ পুন্ড্রনগরের রাজা হন। এ অভিশপ্ত ব্রাহ্মণের নাম ছিল রাম। আর এ রামই মহাস্থানগড়ে পরশুরাম নামে পরিচিত। শাহ সুলতান বলখীর মাজার থেকে প্রায় ২৫০ মিটার এবং মহাকালীর কুণ্ড থেকে আনুমানিক ২০০ মিটার উত্তরে এ এলাকার শেষ হিন্দু রাজা পরশুরামের প্রাসাদ ছিল। এখানে খননের (১৯৬১) ফলে পাল, মুসলিম ও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের নানা সাংস্কৃতিক নিদর্শনের সন্ধান পাওয়া গেছে। খননের নিম্নতর স্তরে পাল আমলের নানা ভবনের ধ্বংসাবশেষ, কিছু পোড়ামাটির নকশি পাতলা ইট (ফলক) এবং এ স্থানের মধ্যস্থলে কিছু ভবনের অবশেষও এ ভবনের বলে অনুমিত কিছু পোড়া মাটির পাত্র পাওয়া গেছে। এগুলি মুসলিম শাসনামলের। খনন এলাকার সর্বোচ্চ স্তরে আঠারো কিংবা উনিশ শতকের গোড়ার দিকে নির্মিত একটি বাসভবনের সন্ধান পাওয়া গেছে। এটিই পরশুরামের প্রাসাদ।

অবকাঠামো

উপরের স্তরে অপেক্ষাকৃত আধুনিককালে নির্মিত একটি বিরাট আবাস বাটির সম্পূর্ন নকশা উন্মোচিত হয়েছে। অন্দর মহলে অবস্থিত ছোট একটি অঙ্গনের দিকে মুখ করে নির্মিত পৃথক পৃথক ৪টি মহল বা অংশের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। মোহগুলোর প্রবেশ পথ সহ বেশ কিছু কক্ষ, সোপান শ্রেণী, সীমানা প্রাচীর এবং পুর্ব ও পশ্চিমে দুটি প্রবেশদ্বার আবিষ্কৃত হয়েছে। মুল প্রবেশদ্বার হচ্ছে পুর্ব পাশের প্রবেশদ্বার। যার দুই পাশে দুইটি প্রহরী কক্ষের নিদর্শন দেখা যায়। উপরিভাগে মোঘল ও ব্রিটিশ আমলে ব্যবহৃত ছোট আকারে ইট, চুন সুরকীর আস্তর, চুনকামের ব্যবহার, গঠনশৈলী ইত্যাদি দেখে অনুমান করা যায় যে, এই ইমারত অষ্টাদশ শতকের শেষদিকে নির্মিত হয়েছিল।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: ভ্রমণ পাগল,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি 21, 2018

পরশুরামের প্রাসাদ-বগুড়া, সম্পর্কে পর্যটকদের রিভিউ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.