সুনামগঞ্জ উপজেলার অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে নারায়ণতলা(Narayanatola) ও এর আশেপাশের অঞ্চল। শহর থেকে ১২ কি. মি. দূরে একদম সীমান্ত ঘেঁষে মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশে এর অবস্থান। নারায়ণতলায় গেলে আপনাকে প্রথমেই স্বাগত জানাবে বিশাল বিশাল সবুজ পাহাড়। তবে পাহাড়গুলো দু’চোখ জুড়িয়ে দেখার সুযোগ পেলেও চড়ার সুযোগ কিন্তু হবে না। কারণ- বড় পাহাড়গুলোর অবস্থান সীমান্তের ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে। এজন্যে অবশ্য মন খারাপ করার কিছু নেই। সীমান্তে দাঁড়িয়ে অন্য একটি দেশ দেখার মজাও কিন্তু কম নয়। সীমানা নির্ধারক পিলারের এপার-ওপারে পা রাখার আনন্দও এখানে বোনাস হিসেবে পাওয়া যাবে। নারায়ণতলা যে শুধু সৌন্দর্যের দিক দিয়ে অনবদ্য তা কিন্তু নয়, ঐতিহাসিক দিক দিয়েও এ স্থানের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ, নারায়ণতলার ডলুরায় বৃক্ষরাজীর শীতল ছায়াতলে ৪৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। মুক্তিযুদ্ধে বালাট সাব সেক্টরের অধীন যোদ্ধাদের গণ কবর ডলুরার শহীদ মাজারে গিয়ে শ্রদ্ধা জানাতেও অসংখ্য দর্শনার্থী প্রতিদিন ভিড় জমান। নারায়ণতলার, মুগাইর পাড় গ্রামটি গারো অধ্যুষিত। এখানে এলে পাবেন গারো সমাজ ও সংস্কৃতির সংস্পর্শ।
এছাড়া নারায়ণতলায় রয়েছে খ্রিস্টান মিশনারী পরিচালিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। মিশনটি পরিচিত সাধু টমাসের গির্জা নামে। এছাড়া ডলুরার পাশ ঘেঁষে বয়ে চলা চলতি নদীও পর্যটকদের জন্যে বেশ আকর্ষণীয়।চলতি নদীর তীরবর্তী বিশাল বালুকাময় প্রান্তরকে মনে হয় বেলাভূমি। সব মিলিয়ে নারায়ণতলার সৌন্দর্য অনবদ্য। চমৎকার এ স্থানটিতে যেতে হলে প্রথমে নৌকায় সুরমা নদী পার হয়ে যেতে হবে হালুয়া ঘাট, এখান থেকে রিক্সায় নারায়ণতলায় যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেনঃ
হোটেল প্যালেস: একটাই মোটামুটি মানের হোটেল সুনামগঞ্জ-এ রয়েছে। এখানে আবার একটি এ.সি. রুম-ও আছে। ফোন নম্বর: ০৮৭১-৫৫৩৪১ (ল্যাণ্ড লাইন), ০১৭১-৯০৪৮২৮২ (জনাব মনোজ কান্তি, ম্যানেজার)।
সানক্রেড (এন জি ও): ঠিকানা: হাছন নগর, সুনামগঞ্জ। ফোন: জনাব রেমা: ০১৭১৮৫২৩২০৪
ওয়ার্ল্ড ফিশ: ঠিকানা: ষোলঘর, আলীপাড়া, সুনামগঞ্জ। সরাসরি হালিম ভাইয়ের সাথে রুম এর ব্যাপারে কথা বলতে পারেন : ০১৯১৮-২৭৩৪৮৫। আর ০৮৭১ ৫৬২০১ নম্বরে ওয়ার্ল্ড ফিশ, সুনামগঞ্জ-তেও কথা বলতে পারেন।
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থানঃ
- বারেকটিলা ও যাদুকাটা
- লাউড়ের গড়
- হাছনরাজা মিউজিয়াম
- টাঙ্গুয়ার হাওর
কিভাবে যাবেনঃ
শ্যামলী নন এ.সি বাসে সরাসরি ঢাকা টু সুনামগঞ্জ যেতে পারেন। ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত শ্যামলীতে ৩৩০ টাকা নেবে। অথবা ভালো হয়, যদি ঢাকা থেকে গ্রীন লাইন বা সোহাগ (ঢাকা-সিলেট রুটে সোহাগের সার্ভিস চরম হতাশাজনক) এসি বাসে ৫৮০ টাকা দিয়ে টিকেট কেটে আনুমানিক ৫ ঘন্টায় সিলেট হুমায়ূন রশিদ চত্ত্বরে নামবেন। সেখান থেকে বিশ টাকা দিয়ে একটা রিক্সা ভাড়া করে কীন ব্রীজ পার হবেন। তারপর শেয়ার/রিজার্ভ সিএনজিতে কুমারগাঁও বাস স্ট্যাণ্ড। সেখান থেকে ৭০ টাকা দিয়ে ‘বিরতিহীন’ বাসের টিকেট কেটে বাসে উঠে হালকা ঝাঁকি খেতে খেতে ২ ঘন্টায় সুনামগঞ্জ। ফেরার পথেও একইভাবে ফিরতে পারেন। আর নন এ.সি নাইট কোচ শ্যামলীতে ঢাকা ফিরতে ৩০০ টাকা নেবে।
সুনামগঞ্জ ট্রাফিক পয়েন্ট থেকে ৫০ টাকায় রিজার্ভ টমটমে পনের মিনিটে পৌছে যাবেন হলদিয়া ঘাটে। সেখান থেকে ট্রলারে ওপারের বাজারে নেমে মোটরসাইকেল করে যেতে হবে নারায়ণতলা শহীদমিনার। এক মোটরসাইকেলে চালকসহ তিনজন। আপ-ডাউন ভাড়া ১৬০ টাকা। সময় লাগবে বিশ থেকে ত্রিশ মিনিট।