ঢাকার সদরঘাট সংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁসে ফরাশগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত মোগল স্থাপত্যরীতির সঙ্গে ইউরোপীয় কারুকাজের সংমিশ্রণে গড়া প্রাচীন ও সৌন্দর্যমণ্ডিত একটি স্থাপনা নর্থব্রুক হল(Northbrook Hall)। যা বর্তমানে স্থানীয়ভাবে লালকুঠি নামে পরিচিত। ১৮৭৪ সালে ভারতের গভর্নর জেনারেল জর্জ ব্যরিং নর্থব্রুক ঢাকা সফরে আসেন এবং তার এ সফরকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য এই ভবনটি টাউন হল হিসেবে নির্মাণ করেন। এখানে একটি নাট্যলয় রয়েছে। তৎকালিন ঢাকার স্থানীয় ধনাঢ্য ব্যক্তিরা গভর্নর জেনারেল নর্থব্রুকের সম্মানে এই ভবনের নাম দেন নর্থব্রুক হল।
পরবর্তীকালে হলটিকে একটি গণগ্রন্থাগারে রূপান্তর করে এর সাথে জনসন হল নামে একটি ক্লাবঘর সংযুক্ত করা হয়। স্বল্পসংখ্যক বই নিয়ে পাঠাগারটির যাত্রা শুরু হলেও কয়েক বছরের মধ্যে এর বই সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। ১৮৮৭ সালে এই পাঠাগারের জন্য বিলেত থেকে বই আনা হয়েছিল। ১৯২৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি এখানে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ঢাকা পৌরসভা সংবর্ধনা দেয়।
বর্তমানে ভবনটির দায়িত্ব রয়েছে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। জরাজ্বীর্ণ হওয়ায় এটি আর মিলনায়তন হিসেবে বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে না। এ ভবনটি সংলগ্ন সড়কটি নর্থব্রুক হল রোড নামে পরিচিত।
এক বিঘা জমির ওপর নির্মাণ করা চমকা লালে রাঙা এ ভবনের দুই পাশে দুটি করে মোট চারটি সুশোভিত মিনার আছে। অষ্টভুজাকৃতির মিনারগুলো বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ও কারুকার্যখচিত। ভবনের উত্তর দিকে রয়েছে প্রবেশ দরজা। সবগুলো দরজাই অশ্বখুরাকৃতি ও অর্ধ-বৃত্তাকার। মুসলিম ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে এ ভবনের চূড়া বেশ উঁচু। চূড়া থেকে অনেক নিচে নকশামণ্ডিত, অলঙ্কারিক নিচু পাঁচিলের অবস্থান। তখনকার দিনে ভবনটি দক্ষিণ দিক থেকে দেখতে একরকম এবং উত্তর দিক থেকে দেখতে ছিল সম্পূর্ণ অন্যরকম। ফলে নতুন কোনো দর্শনার্থী হঠাৎ ভবনটি দেখে ঠিক বুঝে উঠতে পারতো না। বুড়িগঙ্গা নদীর তীর থেকে পরিদৃষ্ট হয় ভবনটির একধাপবিশিষ্ট গায় লাল রঙের বিশাল গম্বুজ, সুউচ্চ চূড়া ও নিচু পাঁচিল। ভবনের বুড়িগঙ্গার পাশের অংশটি দেখতে ছিল অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
কীভাবে যাবেনঃ
গুলিস্তান থেকে থেকে সদরঘাট গামী যে গাড়িতে করে আপনি চলে আসতে পারেন সদরঘাট । সদরঘাট থেকে রিক্সা করে লালকুঠি বা নর্থব্রুক হল। চাইলে গুলিস্তান থেকেও রিক্সা নিয়ে চলে আসেতে পারেন।