দুবলার চর – সুন্দরবন

সুন্দরবন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘ম্যানগ্রোভ’। সুন্দরবনের গহীন অরণ্যের পার্শ্বে সাগরের মাঝে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য মনোমুগ্ধকর। যা যে কোন কারো মনকে রূপময় করে তুলে। এই সাগরস্নাত সুন্দরবনের মধ্যে অপূর্ব সৌন্দর্যমন্ডিত আর একটি স্থানের নাম দুবলারচর(Dublar Char)। ধু-ধু বালুকাময় এই চর সংলগ্ন বনে শত শত চিত্রা হরিণের অবাধ বিচরণ এবং অন্যাদিকে সমুদ্রের তরঙ্গমালার হাতছানি যে কোন পর্যটককে বিমুগ্ধ ও আনমনা করে তোলো।

বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণাধীন-এ দুবলার চর। এটির অবস্থান মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে সুন্দরবনের দক্ষিণে, সমুদ্রের কোল ঘেঁষে এবং কটকার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং হিরণ পয়েন্টের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি দ্বীপ যা চর নামেও পরিচিত।  দুবলার চর সুন্দরবনের ৪৫ এবং ৮ নম্বর কম্পার্টমেন্টে অবস্থিত। এই চরের মোট আয়তন ৮১ বর্গমাইল, আলোরকোল, কোকিলমনি, হলদিখালি, কবরখালি, মাঝেরকিল্লা, অফিসকিল্লা, নারকেলবাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয়া, মেহের আলির চর এবং শেলার চর নিয়ে দুবলার চর গঠিত।

সুন্দরবনের এই দুবলারচরটি বিভিন্ন কারণে খ্যাতি লাভ করেছে।শীত মৌসুমের শুরুতে হাজার হাজার জেলে দলে দলে এই চরে মাছ ধরতে এসে অস্থায়ী আবাস গড়ে তোলে। জেলেরা দিনভর সাগরে মাছ ধরে সন্ধ্যায় আগেই তারা ফিরে আসে।চরে মাছ শুকিয়ে তারা শুঁটকি মাছ তৈরি করে। এ দৃশ্যও অত্যন্ত উপভোগযোগ্য।

রাসমেলা

রাসমেলা এবং পূণ্যস্নানের জন্যও দ্বীপটি বিখ্যাত । প্রতি বছর কার্ত্তিক মাসে (খ্রিস্টীয় নভেম্বর) দুবলার চরে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় ‘রাসমেলা’। রাসমেলা মনিপুরিদের প্রধান উৎসব, এটি রাসলীলা নামেও পরিচিত।এ অঞ্চলের রাসমেলার প্রধান দিক হলো চিরাচরিত মনিপুরি পোশাকে শিশুদের রাখাল নাচ ও তরুণীদের রাসনৃত্য। মনিপুরি সংগীত ও নৃত্যনাট্যের মাধ্যমে কৃষ্ণ-অভিসার রাধা-গোপী অভিসার-রাগ আলাপন ইত্যাদি অভিনীত হয়।

কেউ কেউ আবার এমেলাকে মগদের মেলা বলে থাকেন। মূলত হিন্দু পৌরানিক মতে রাস হচ্ছে রাধা-কৃষ্ণের মিলন। প্রতি বছরপ্রতি বছর বাংলা কার্তিক ইংরেজী নভেম্বর মাসের রাস পূর্ণিমা তিথিতে পুন্যস্নানের উদ্দেশ্যে অসংখ্য হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ দুবলার চরে আসেন। আর এই নভেম্বর মাসে তিন দিনব্যাপী এ রাসমেলা মেলা অনুষ্ঠিত হয়। রাসমেলায় বহু দূ্র-দূরান্ত থেকে নৌকা, ট্রলার ও লঞ্চ যোগে স্থানীয় লোকজন ছাড়াও দূর-দূরান্তের হাজার হাজার শহরবাসী এমনকি বিদেশি পর্যটকেরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়ে থাকেন।

তিনদিনব্যাপী এ মেলায় অনেক বিদেশী পর্যটকেরও সমাগম হয়।হিন্দু শাস্ত্র মতে , দু্বলারচরে রাসমেলা অনুষ্ঠিত হয়।সারারাত স্রষ্টার নাম স্মরণ করা এবং নৃত্য, বাদ্য ও গীত চলে। সকালে সবাই বের হন সমুদ্র স্নানে। শত শত বছর ধরে এভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাসমেলা।

 

কীভাবে যাবেন :

দুবলার চর যেতে হলে প্রথমেই আপনাকে ঢাকা থেকে বাগেরহাটে যেতে হবে। তারপর বাগেরহাট থেকে মংলা পোর্টে যেতে হবে। এরপর সেখান থেকে আপনাকে ট্রলার কিংবা লঞ্চ ভাড়া করে যেতে হবে দুবলার চর|

ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে করে বাগেরহাটে পৌছাতে পারবেন। ঢাকা থেকে বাগেরহাটে চলাচলকারী বাসগুলোর মধ্যে রয়েছে – মেঘনা পরিবহন ( ০১৭১৭১৭৩৮৮৫৫৩ ), পর্যটক পরিবহন ( ০১৭১১১৩১০৭৮ ) যা সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়। এছাড়া ঢাকার গাবতলি বাস টার্মিনাল থেকে ছাড়ে – সাকুরা পরিবহন ( ০১৭১১০১০৪৫০ ), সোহাগ পরিবহন ( ০১৭১৮৬৭৯৩০২ ) ।

কোথায় থাকবেনঃ

ট্যুরিস্ট ভেসেল বা নৌযান ছাড়াও সুন্দরবনের (Sundarbans) অভয়ারণ্যে হিরণপয়েন্টের নীলকমল এবং টাইগার পয়েন্টের কচিখালী ও কাটকায় বন বিভাগের রেস্টহাউজে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। যার ফি নীলকমলে দেশি পর্যটকদের জন্য প্রতি কক্ষ তিন হাজার টাকা,চার কক্ষ ১২ হাজার টাকা। কচিখালী প্রতি কক্ষ তিন হাজার টাকা, চার কক্ষ ১০ হাজার টাকা। কটকা প্রতি কক্ষ দুই হাজার টাকা, দুই কক্ষ চার হাজার টাকা। বিদেশিদের ক্ষেত্রে নীলকমলে পাঁচ হাজার ও ২০ হাজার টাকা, কচিখালীতে পাঁচ হাজার ও ১৫ হাজার টাকা এবং কাটকায় পাঁচ হাজার ও ১০ হাজার টাকা।

এছাড়া সুন্দরবনের পাশে সাতক্ষীরা শহরে সাধারণ মানের হোটেল ও শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জে এনজিও সুশীলনের রেস্টহাউস ও ডরমেটরিতে একক,পরিবার ও গ্রুপ নিয়ে থাকার সুবিধা রয়েছে।

থাকার জন্যে মংলায় আছে পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল, পশুর বন্দরে সাধারণ হোটেল আছে পর্যটকদের জন্য। খুলনা মহানগরে হোটেল রয়েল, ক্যাসেল সালাম, হোটেল টাইগার গার্ডেন, হোটেল ওয়েস্ট ইন্, হোটেল সিটি ইন, হোটেল মিলিনিয়াম ইত্যাদি মানসম্পন্ন হোটেল ছাড়াও সাধারণ মানের হোটেল রয়েছে।

 

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: ভ্রমণ পাগল,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি 23, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.