তিস্তা নদী ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত একটি নদী। তিস্তা সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি বিভাগের প্রধান নদী। সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর বাংলাদেশে প্রবেশ করে তিস্তা ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। সিকিম হিমালয়ের ৭০২০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত চিতামু হ্রদ থেকে এই নদীটি সৃষ্টি হয়েছে। এটি দার্জিলিং -এ অবস্থিত শিভক গোলা নামে পরিচিত একটি গিরিসঙ্কটের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। দার্জিলিং পাহাড়ে তিস্তা একটি বন্য নদী এবং এর উপত্যকা ঘনবনে আচ্ছাদিত। পার্বত্য এলাকায় এর নিষ্পাশন এলাকার পরিমাণ মাত্র ১২,৫০০ বর্গ কিলোমিটার। পার্বত্য এলাকা থেকে প্রথমে প্রবাহটি দার্জিলিং সমভূমিতে নেমে আসে এবং পরে পশ্চিমবঙ্গের (ভারত) দুয়ার সমভূমিতে প্রবেশ করে। নদীটি নিলফামারী জেলার খড়িবাড়ি সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
অষ্টাদশ শতকের প্রায় শেষ পর্যন্ত এই ধারাটি বিভিন্ন নদীপ্রবাহের মাধ্যমে গঙ্গা নদীতে প্রবাহিত হতো। ১৭৮৭ সালের অতিবৃষ্টি একটি ব্যাপক বন্যার সৃষ্টি করেছিল এবং সেই সময় নদীটি গতিপথ পরিবর্তন করে লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম এবং গাইবান্ধা জেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে চিলমারী নদীবন্দরের দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্র নদে পতিত হয়। তিস্তা নদীর সর্বমোট দৈর্ঘ্য ৩১৫ কিমি, তার মধ্যে ১১৫ কিমি বাংলাদেশ ভূখণ্ডে অবস্থিত। আর ২০০ কিমি ভারতের।
তিস্তার মাসিক গড় পানি অপসারণের পরিমাণ ২,৪৩০ কিউসেক। তিস্তা একসময় করতোয়া নদীর মাধ্যমে গঙ্গার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল এবং এর অংশবিশেষ এখনও বুড়ি তিস্তা নামে পরিচিত।
তিস্তা ব্যারেজঃ
তিস্তা ব্যারেজ(Teesta Barrage) বাংলাদেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প। ১৫শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প নির্মিত। উত্তর জনপদের বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর ও বগুড়া জেলার অনাবাদী জমিতে সেচ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে বাড়তি ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন সরকার তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। মূল পরিকল্পনা গৃহীত হয় ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে। ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রকল্পের কাজ শুরুর উদ্যোগ নেয়া হলেও বিভিন্ন জটিলতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে লালমনিরহাট ও নীলফামারী মহকুমার সীমান্তে তিস্তা নদীর উপর ৪৪টি রেডিয়াল গেট সম্বলিত ৬১৫ মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট ব্যারেজটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এর নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে। একই খ্রিষ্টাব্দের ৫ আগস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এইচ.এম. এরশাদ আনুষ্ঠানিক ভাবে ব্যারেজটি উদ্বোধন করেন। বাই পাস ক্যানেলের উপর নির্মিত গেট সহ এ ব্যারেজের মোট গেট সংখ্যা ৫২টি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প সূত্র জানায়, সেচ প্রকল্প এলাকায় সেচ দেয়া এবং নদীর প্রবাহমাত্রা ঠিক রাখতে তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে স্বাভাবিক প্রবাহমাত্রা থাকা প্রয়োজন ২০ হাজার কিউসেক পানি। শুধু সেচ প্রকল্প চালাতেই প্রবাহমাত্রা থাকা প্রয়োজন ১৪ হাজার কিউসেক এবং নদীর অস্তিত্ব রক্ষার জন্য প্রয়োজন চার হাজার কিউসেক পানি। কিন্তু ডিসেম্বর মাসের পর থেকে তিস্তায় পানি প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে যায়। শুধু তাই নয়, বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানির কারণে ব্যারেজ ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ফসল ও বাসাবাড়ি ঝুঁকির মুখে পড়ে। ভারত তখন সব গেট খুলে দেয়। এতে ব্যারেজের ৪৪টি গেট ২৪ ঘন্টা খুলে দিয়ে পানি সরানো সম্ভব হয় না। এই অতিরিক্ত পানি অপসারণের জন্য প্রকল্পের উত্তরে ৬১০ মিটার একটি খাল নির্মাণ করা হয়। ১৯৯৮ সালে বন্যায় এই খাল ধ্বংস হয়ে অনেক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে বাস অথবা রেলে যেতে পারবেন। কমলাপুর থেকে শুক্রবার ব্যতিত প্রতিদিন রাত ১০.২০ টায় লালমনি এক্সপ্রেস ছেড়ে যায়। গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ , শাহ আলী পরিবহন রয়েছে। লালমনিরহাট সদর হতে সড়কপথে তিস্তা ব্যারেজ্ যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন
ব্যারেজের পাশেই মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে অবসর রেস্ট হাউজ অবস্থিত। পানি উন্নয়ন বোর্ড অবসর রেস্ট হাউজের তত্ত্বাবধান করে থাকে। তাদের অনুমতি নিয়ে এ রেস্ট হাউজে অবস্থান করা যায়। তবে এটি সকলের জন্য উন্মুক্ত নয়।
তিস্তা আমাদের লালমনিরহাট জেলার অনেক উন্নতি করে