জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবনের সামনে স্থাপিত একাত্তরের গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি হলো বাংলাদেশের একমাত্র গুচ্ছ ভাস্কর্য যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মরণে নিবেদিত। এ ভাস্কর্যটিতে একাত্তরের গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি তুলে ধরা হয়েছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের(Jagannath Bishwabidyalay) প্রধান গেট থেকে একটু এগিয়ে গেলে নতুন ভবনের সামনে চোঁখে পড়বে ভাস্কর্যটি । এই ভাস্কর্যের সামনে ও পেছনে দুটি অংশ রয়েছে । অত্যন্ত সুনিপুণ হাতে ভাস্কর্যটি তৈরি করেছেন খ্যাতনামা শিল্পী ভাস্কর রাসা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে,ভাস্কর্যটির কাজ শুরু হয় ১৯৮৮ সালে। দীর্ঘ তিন বছর অক্লান্ত প্ররিশ্রমের পর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয় ১৯৯১ সালে। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম খান ২০০৮ সালের ৩১ মার্চ এর উদ্বোধন করেন।
ভাস্কর রাসা বলেন,ভাস্কর্যের এক পাশে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় পাক হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত গণহত্যার দৃশ্য। ইয়াহিয়া খান মাতাল অবস্থায়, পাকিস্তানী হানাদাররা হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, গর্ভবতী মাকে অত্যাচার করে হত্যা করে ফেলে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, যে নারীকে কখনো চার দেয়ালের বাইরে আসতে দেখা যায় না, তার গায়ে লেগে আছে নরপিচাশ পাক হানাদার বাহীনির নির্যাতনের নির্মম চিত্র। একপাশে আছে একটি পত্র-শূন্য বৃক্ষ। তাঁর ওপর একটি শকুন বসা। লাশের ওপর লাশের স্তুপ। দেশটা যেন শশ্মানে পরিণত হয়েছে। যুদ্ধের সময় সাধারণ মানুষ ধরে এনে সারি বদ্ধভাবে দাঁড়করিয়ে হত্যা করে হয় এই তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) অভ্যন্তরে। হত্যা পর লাশের স্তুপ সাজিয়ে গণকবর দেয়া হয় বর্তমান ভাস্কর্যটির নিচে।
ভাস্কর রাশা আরো বলেন,সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর এখান থেকে কয়েক ট্রাক মৃত মানুষের দেহাবশেষ উত্তোলন করা হয়। গণহত্যায় এ সমস্ত ব্যক্তিবর্গের স্মৃতি রক্ষার্থে ভাস্কর্যের এক অংশে নির্মাণ করা হয়েছে ৭১ র গণহত্যা।
যুদ্ধের সময় নিহত ব্যক্তিদের এই সর্ববৃহৎ বদ্ধভূমির স্বাক্ষী স্বরূপ দাড়িয়ে আছে ভাস্কর্যটি জানিয়ে তিনি বলেন, তার বিপরীত পাশেই মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি ভাস্কর্য। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্বালাময়ী ভাষণে বলেছিলেন, ‘তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে’। ভাস্কর্যটির এক অংশে দেখা যায় বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে। বাংলার কামার ,কুমার ,জেলে, কৃষিজীবি মানুষ , মোট কথা সর্বস্তরের মানুষ একত্রিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করে। যার যা কিছু আছে দা, বটি, খুন্তি ,কোচ, বর্শা , সবকিছু নিয়ে যুদ্ধের মুখোমুখি হয়।
কীভাবে যাবেনঃ
গুলিস্থান থেকে থেকে সদরঘাট গামী যে গাড়ীতে অথবা রিক্সা করে আপনি চলে আসতে পারেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবনের সামনেই এ ভাস্কর্যটি আছে।