ছেঁড়া দ্বীপ (Chhera Island) হলো বাংলাদেশের মানচিত্রে দক্ষিণের সর্বশেষ বিন্দু। দক্ষিণ দিকে এর পরে বাংলাদেশের আর কোনো ভূখন্ড নেই। সেন্ট মার্টিন থেকে বিচ্ছিন্ন ১০০ থেকে ৫০০ বর্গমিটার আয়তনবিশিষ্ট কয়েকটি দ্বীপ রয়েছে, যেগুলোকে স্থানীয়ভাবে ‘ছেঁড়াদিয়া’ বা ‘সিরাদিয়া’ বলা হয়ে থাকে। ছেঁড়া অর্থ বিচ্ছিন্ন বা আলাদা, আর মূল দ্বীপ-ভূখন্ড থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন বলেই এ দ্বীপপুঞ্জের নাম ছেঁড়া দ্বীপ (Chhera Dbip)।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে ৫ কি: মিটার দক্ষিণে এ দ্বীপটির অবস্থান। ছেড়া দ্বীপের আয়তন তিন কি: মিটার। ২০০০ সালের শেষের দিকে এই দ্বীপটির সন্ধান পাওয়া ।
মূলত জোয়ারের সময় সেন্টমার্টিন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বলে এমন নাম হয়েছে দ্বীপটির। নীল জলরাশির মাঝখানে প্রবাল পাথরের তৈরি দ্বীপটি। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, সাগরের মাঝে ভাসমান একটি বন; কাছে গেলেই দেখা মেলে প্রবাল পাথর আর বালু ঢেউ খেলছে ছেঁড়া দ্বীপে (Chhera Island)।
প্রবাহ বঙ্গোপসাগরের ঢেউ ছেড়া দ্বীপের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন ঢোকার পথে একমাত্র ব্রিজের কাছ থেকে ছোট বোটে চড়েই যেতে হয় ছেঁড়া দ্বীপে। ছেঁড়া দ্বীপে যাওয়ার জন্য জোয়ারের অপেক্ষা করতে হয় পর্যটকদের। কেননা সাগরে পূর্ণ জোয়ার না থাকলে সেখানে বোটে চড়া দূরহ হয়ে যায়। বঙ্গোপসাগরের নীল জল পর্যটকদের আকর্ষণ করছে। সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ছে প্রবাল পাথরের ওপর। মুহুর্তেই ঢেউ এসে পরিষ্কার করে দিচ্ছে দ্বীপের বিচ। চিকচিক বালুর ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে উপভোগ করা যায় বঙ্গোপসাগরের ঢেউর খেলা।সেন্টমার্টিনের আরও একটি আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে জোয়ারের সময় যেখান দিয়ে নৌকায় যেতে হয়,সেখানে দুই ঘণ্টা পরে এলেই দেখা যাবে বালু আর প্রবাল পাথর। কাছে না গেলে কারো মনেই হবে না যে এখান দিয়েই দুই ঘণ্টা আগে ছোট নৌকায় চড়ে পার হয়েছি।
ছেড়া দ্বীপে আরো দেখা যাবে অপরুপ প্রাকৃতিক দৃশ্য। সামুদ্রিক ঢেউ আর সারিসারি নারিকেল গাছ। নানা প্রজাতির সামুদ্রিক পাখির আবাসস্থলও ছেঁড়াদ্বীপ।গবেষকরা এখানে ১৮২ প্রজাতির জীব বৈচিত্রের সন্ধান পেয়েছেন যার মধ্যে রয়েছে ৪ প্রজাতির উভচর, ১৩০ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী সামুদ্রিক জীবের উপস্থিতি আছে অনিন্দ্য সুন্দর এই দ্বীপে।প্রায় ৩৩,২৩৮ বছরের পুরান একটি প্রবালের ফসিল যেটি এই দ্বীপেই পাওয়া গিয়েছে।দ্বীপের উত্তর অংশে অবস্থিত জলাধারটি না দেখলে আপনি উল্ল্যেখযোগ্য কিছু দেখা থেকে বঞ্চিত হবেন। জোয়ারের সময় এই জলাধারটি পশ্চিম উপকুলে একটি সরু চ্যানেলের মাধ্যমে সাগরের সাথে যুক্ত হয়।
শীতকালে এই দ্বীপে প্রচুর অতিথি পাখি এসে থাকে। এতে করে দ্বীপের পারিপার্শ্বিক এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বহুগুন বৃদ্ধি পায়।এছাড়া চাঁদনী রাতে ছেড়া দ্বীপ সাজে তার অপরুপ সাজে। চাঁদনী রাতে যে কোনো ভ্রমণকারীর মনভরে যাবে ছেড়া দ্বীপের অপরুপ শোভা অবলোকন করে।ছেড়া দ্বীপের একদম উপরের দিকটাতে ভরা পূর্ণিমাতে ক্যাম্পিং করে থাকার মজাই আলাদা।
সেন্টমার্টিনের ছেঁড়া দ্বীপে একটি মাত্র পরিবার বসবাস করে।হোসেন আলীর পরিবার। হোসেন আলীর এ পরিবারে রয়েছে চার সন্তান। বড় ছেলে সাদ্দাম, মেয়ে মৌসুমী, অন্য দুই সন্তান ও স্ত্রী রহিমা খাতুনকে নিয়ে হোসেন আলীর সংসার। ১৯৯৭ সাল থেকে হোসেন আলী পরিবার নিয়ে ছেঁড়া দ্বীপে বসবাস করছেন। আগত পর্যটকদের ঘিরেই এদের জীবন আচার। একটি দোকান যেখানে পর্যটকদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন আইটেমের জুস ও পানি। এছাড়া কেউ চাইলে এখানে দুপুর ও রাতের খাবারও সেরে আসতে পারেন।
সেন্টমার্টিনসহ ছেঁড়া দ্বীপের চারপাশেই রয়েছে কেওড়া গাছের বিস্তরণ। কেওড়া গাছের শিকড় একটি রেকটিকে যেভাবে জড়িয়ে ধরে আছে, হয়তো এ জন্যই এই গাছের নাম কেওড়া গাছ। এই কেওড়া গাছ ঝড় জলোচ্ছ্বাসকে কিছুটা হলেও দ্বীপবাসীকে রক্ষা করে। তাই দ্বীপবাসীর জীবন রক্ষাকারী হিসেবেও কাজ করছে কেওড়া গাছ।
যেখানে থাকবেন
সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজারে থাকার জন্য অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। যে কোন হোটেলেই রাতযাপন করা যায়।
যেভাবে যাবেন
কক্সবাজার থেকে জাহাজ কিংবা নৌযানে করে সেন্টমার্টিন যেতে হয়। সেন্টমার্টিন থেকে আবার জাহাজে করে ছেড়া দ্বীপে যেতে হয়।