খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ – ঢাকা

খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ বা দোতলা মসজিদ প্রাচীন শহর ও মসজিদের শহর ঢাকার মুকুটের একটি পালক। প্রাচীনকাল থেকে এ ঢাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য মসজিদ। যাদের রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। কালের বিবর্তনে ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিভিন্ন মসজিদ হারিয়ে গেলেও কালের সাক্ষি হয়ে আজো দাড়িয়ে আছে পুরানো ঢাকার লালবাগের (আতশখানা) খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ(Khan Mohammad Mridha Masjid)। যা স্থানীয় লোকজনের কছে দোতলা মসজিদ হিসেবে  পরিচিত।

প্রাচীন এ মসজিদটি ১৭০৬ খ্রিস্টাব্দে নায়েবে নাযিম ফররুখশিয়ারের শাসনামলে নির্মিত হয়। ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনের মতে, ঢাকার প্রধান কাজী ইবাদুল্লাহের আদেশে খান মহম্মদ মির্ধা দোতালা এই মসজিদটি নির্মান করেন।বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এই মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে।

৩৮ মিটার উচ্চতার প্রাচীন এ মসজিদটি দেয়াল দিয়ে ঘেরা। মসজিদ কম্পাউন্ডে মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করলে হাতের বাম দিকে রয়েছে মূল মসজিদ কাঠামো। মূল মসজিদের কাঠামো তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এবং এর চারিদিকে ছোট ছোট প্রায় বিশ-পঁচিশটি মিনারের মত কাঠামো রয়েছে। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটির ভিত্তি প্রায় ১৭ ফুট উঁচু একটি প্ল্যাটফর্মের ওপর। প্ল্যাটফর্মের নীচে রয়েছে টানা করিডোর, এরপাশে রয়েছে ছোট ছোট প্রকোষ্ঠ। এখানে আলো বাতাসের খেলা এক মনোমুগ্ধকর।

নামাজ ঘরের উত্তর-পূর্ব দিকে মাদ্রাসা। মসজিদ ও মাদ্রাসা ছাড়া বাকি অংশ উন্মুক্ত। ধারণা করা হয়, এখানেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হতো। আর নীচের ঘরগুলো থাকার জায়গা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। নীচের ঘরগুলো ছিল থাকবার জায়গা।

মসজিদের চারপাশে আছে আদি লাল ইটের প্রাচীর। ছোট্ট একটি ফোকর দিয়ে মসজিদের ভেতরে ঢুকতে হয়। দোতলা মসজিদটির নিচতলার ঘরগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে লালবাগ কেল্লার কর্মচারীদের থাকার ঘর হিসেবে। মসজিদের দোতলার প্রধান ঘরটিতে নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। ঘরটির দেয়ালের ওপরের দিকে আছে কালো পাথরের একটি ফলক। দোতলায় আছে ইমামের থাকার ঘর। খাদেমদের থাকার জন্যও একটি ঘর রয়েছে। আর অতিথিদের থাকার জন্য একটি বিশ্রামঘর রয়েছে।

মসজিদের ডানদিকে রয়েছে বিস্তৃত বাগান। সেখানে আছে তিলোত্তমা বা হুরহুরে ফুলের বাহার। বাগানের কাছে একটি পরিত্যাক্ত কুয়া রয়েছে। একসময় সেই কুয়ার পানি দিয়ে মুসল্লিদের অজু এবং অন্যান্য ব্যবহার্য পানি সরবরাহ করা হত। মসজিদের মূল প্রবেশ পথ দক্ষিণ পাশ দিয়ে। মসজিদে প্রবেশ করতে হলে সিড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠতে হবে। কেননা, মূল মসজিদটি উপরে, দোতলায়।

কীভাবে যাবেনঃ

প্রাচীন এই মসজিদটি দেখতে হলে লালবাগ কেল্লার মেইন গেইট থেকে ৫ মিনিট হাঁটবেন। তাহলেই দেখা পেয়ে যাবেন নিশ্চিত। আরও সহজ করে বললে, লালবাগ কেল্লা থেকে ২০০ গজ পশ্চিমে এই মসজিদের অবস্থান। তবে স্থানীয়রা একে খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ— এতো বড় নামে চেনে না। তারা দোতলা মসজিদ হিসেবেই চিনে থাকেন প্রাচীন এই স্থাপনাটিকে।

লালবাগ কেল্লায় যেতে হলে, গুলিস্তান গোলাপ শাহ্ এর মাজার থেকে টেম্পুযোগে মাত্র ৬ টাকায় যাওয়া যাবে। ইসলামবাগ ও কিল্লার মোড়গামী দু’ধরনের টেম্পো দিয়ে দিন রাত সব সময় যাওয়া যায় লালবাগ কেল্লায়। এছাড়াও নিউমার্কেট কিংবা গুলিস্তান এলাকা থেকে সরাসরি রিক্সায় যাওয়া যায় লালবাগ কেল্লায়। ভাড়া পড়বে ৩০-৪০ টাকা।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: সাফায়েত,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি 7, 2018

খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ – ঢাকা, সম্পর্কে পর্যটকদের রিভিউ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.