কেশবপুরের ভরতের দেউল – যশোর

কেশবপুর উপজেলা সদর হতে ১৯ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব কোন ভদ্রানদীর তীরে গৌরিঘোনা ইউনিয়নের ভরতভায়না গ্রামে ভরতের দেউল(Keshabpur  Bharata deula) অবস্থিত। ১২.২০ মিটার উঁচু ২৬৬ মিটার পরিধি বিশিষ্ট দেউলটিকে একটি টিলার মত দেখায়। দেউলটি গুপ্ত যুগের খ্রিষ্টীয় ২য় শতকে নির্মিত হয়েছে বলে অনুমান করা হয়। ১৯২৩ সালের ১০ জানুয়ারী তদানীন্তন সরকার এটাকে পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করেন। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৯৮৪ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দেউলের খনন কাজ চালাই। এর প্রথম অংশে আকারের স্থাপনা, দ্বিতীয় অংশে একটি মঞ্চ, তৃতীয় অংশে মূল মন্দির। খননের ফলে দেউলের ভিত থেকে চূড়া পর্যন্ত ৯৪টি কক্ষ দৃষ্ট হয়। স্থাপনাটির ৪ পার্শ্বে বর্ধিত আকারে ১২পিট কক্ষ। বাকী ৮২টি কক্ষ ক্রমান্বয়ে উপরের দিকে উঠে গেছে। দেউলটির চূড়ায় ৪পিট কক্ষ এবং পার্শ্বে ৮টি কক্ষ রয়েছে। স্থাপনাটির গোড়ার দিকে ৪ পার্শ্বে ৩ মিটার চওড়া রাস্তা রয়েছে। খনন কালের মধ্যে পোড়া মাটির তৈরী নারীর মুখমন্ডল, দেবদেবীর নৃত্যের দৃশ্য সম্বলিত টেরাকোটার ভগ্নাংশ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের এ যাবত প্রাপ্ত টেরাকোটার মধ্যে এটি বৃহৎ আকৃতির। তাছাড়া নকসা করার ইট, মাটির ডাবর, পোড়া মাটির গহনার মূর্তি পাওয়া গেছে। এ অঞ্চলে অন্য কোন পুরকীর্তিতে এত বড় আকারের ইট ব্যবহৃত হয়নি।

স্থানীয়দের কাছে দীর্ঘদিন ধরে ভরতের দেউল, ভরত রাজার দেউল নামে পরিচিত। এ প্রত্নস্থানে খ্রিস্টিয় বিশ শতকের গোড়ার দিকে ১২ দশমিক ২২ মিটার উঁচু এবং ২৬৬ মিটার পরিধি বিশিষ্ট একটি ঢিবির অস্তিত্ব ছিল। ১৮৮৯ সালে বৃটিশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুপারিন্টেন্ডেন্ট কাশিনাথ দীক্ষিত এ দেউল পরিদর্শনে এসে মন্তব্য করেন যে এটি ৫০ ফুটের অধিক উঁচু এবং ব্যাস ৯০০ ফুটেরও অধিক।নির্মাণে যে ইট ব্যবহার হয়েছে এতো বড় আকারের ইট এতদঞ্চলের অন্য কোনো পুরাকীর্তিতে ব্যবহার করা হয়নি।

১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে এ দেউলের উপরিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ১৯৮৪ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে সাত অর্থ বছরের বরাদ্দ পেয়ে এ দেউলে খননের কাজ চালায়। খননের ফলে দেউলটির পূর্ণ অবয়ব মানুষের দৃষ্টিতে আসে।

খননে সমগ্র প্রাসাদটির ভিত থেকে শেষ পর্যন্ত মোট ৯৪টি কক্ষ পাওয়া যায়। চারপাশে ৪টি উইং ওয়াল। এর মধ্যে ১২টি কক্ষ। বাকি ৮২টি কক্ষের সমন্বয়ে এ বৌদ্ধ স্ত‍ুপটি তৈরি। স্তুপটির চূড়ায় ৪টি কক্ষ। এ কক্ষের দু’পাশে আরও ৮টি ছোট ছোট কক্ষ রয়েছে। অধিকাংশ কক্ষগুলো মাটি দ্বারা পরিপূর্ণ।

কীভাবে যাবেনঃ

ভরতের দেওল দেখতে হলে আপনি যেখানে থাকেন না কেন, আপনাকে প্রথমে খুলনার জেলার চুকনগরে আসতে হবে। সেখান থেকে ভ্যান, ইঞ্জিনচালিত ভ্যান অথবা মোটরসাইকেলে করে আপনাকে ভরত ভায়না নামক স্থানে যেতে হবে।

সেখানে যাওয়ার পর যে কাউকে জিজ্ঞেস করলে বলে দেবে ভরতের দেউল কোথায়। সৌন্দর্যের দিক থেকে কোনো কমতি নেই স্থাপনাটির।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: সাফায়েত,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি 25, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.