ঋজুক ঝর্না – বান্দরবান

বান্দরবন জেলার রুমা বাজার থেকে নদীপথে থানছি যাওয়ার পথে পড়বে ঋজুক ঝর্না(Rijuk Jhorna) । মার্মা ভাষায় একে রী স্বং স্বং বলা হয়। রুমা বাজার থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার এবং বান্দরবন সদর হতে ৬৬ কিঃমিঃ। সাঙ্গু নদীর পাড়ে প্রায় ৩০০ ফুট উচু থেকে সারা বছরই এ জলপ্রপাতটির রিমঝিম শব্দে পানি পড়ে।

এই জলপ্রপাতে সারা বছর পানি থাকে। তবে বর্ষার সময় ঋজুক সাঙ্গুর বুকে এত বেশি পানি ঢালে যে প্রবল স্রোতের তোড়ে জলপ্রপাতের ধারে পৌঁছতে এমনকি বড় ইঞ্জিনের নৌকাগুলোরও বেগ পেতে হয়। তখন ঋজুকের সৌন্দর্য একেবারেই অন্য রকম। তবে শুকনো সময়েও বেশ ভালো পরিমাণেই যৌবন থাকে তার। গতি, উদ্দমতা কোনো কিছুতেই কমতি থাকে না তখন।

জলপ্রপাতের কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই বর্ষার ফলার মতো শরীরে এসে বিঁধে ঠান্ডা পানির ফলা। মিষ্টি একটা অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ল শরীরে। যেখান থেকে নামছে পানির ধারা, সেখানে পাহাড়ের গায়ে গভীর হয়ে জন্মেছে গাছপালা। সবুজের আস্তর যেন চারিপাশে যা এই ঝর্নাকে দিয়ে ভিন্ন মাত্রা।

সাঙ্গুতে পানি একবারেই কম। নিচের বালি দেখা যায় পরিষ্কার। টলটলে পানির নিচে ছোট ছোট নুড়িপাথরের রাজত্ব। এখানে নদীর হাঁটুজলে শামুক খুঁজছে মারমা কিশোরীরা। ডানে পাহাড়, বাঁয়ে বেশ কিছুটা জায়গা জুড়ে ফসলের ক্ষেত। এখন খুব একটা দেখা না গেলেও রুমা বাজারের দিকে আসার সময় প্রচুর বাঁশের চালি (ভেলা) চোখে পড়ছে সাঙ্গুর বুকে। ভেলা বানিয়ে নদীর স্রোতে ভাসিয়ে দূর-দূরান্তে নিয়ে যাওয়া হয় বাঁশ।

ঋজুকের উল্টো পাশে নতুন ঋজুকপাড়া নামে মারমাদের একটা পাড়া আছে। আর এ পাশে পাহাড়ের ওপর বমদের যে পাড়াটি এর নামও ঋজুকপাড়া। সময় করে ঋজুক দেখার সাথে সাথে এসব আদিবাসীদের জীবনধারাও অবলোকন করে আসতে পারেন। আতিথেয়তা আর আন্তরিকতার দিক থেকে বম বা মারমারা অতুলনীয়।

কিভাবে যাবেন বান্দরবানের ঋজুক ঝর্না –

প্রথমে আপনাকে বান্দরবান শহরে যেতে হবে। ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন বান্দরবানের উদ্দেশ্যে কয়েকটি পরিবহন কোম্পানির গাড়ি ছেড়ে যায়। যেমন শ্যামলি, হানিফ, ইউনিক, এস আলম, ডলফিন- এর যেকোনো একটি বাসে চড়ে আপনি বান্দরবানের যেতে পারেন। রাত ১০ টায় অথবা সাড়ে ১১টার দিকে কলাবাগান, সায়েদাবাদ বা ফকিরাপুল থেকে এসব বাস বান্দরবানের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। নন এসি বাসে জন প্রতি ভাড়া ৫৫০ টাকা। এসি ৯৫০ টাকা।

চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান যেতে পারেন। বদ্দারহাট থেকে বান্দারবানের উদ্দেশে পূবালী ও পূর্বানী পরিবহনের বাস যায়। এসব বাসে জনপ্রতি ২২০টাকা ভাড়া রাখা হয়।

রিজুক দেখতে চাইলে বান্দরবান থেকে আপনাকে রুমায় আসতে হবে। লোকবল বেশি থাকলে বান্দরবন থেকে নিজেরা গাড়ি ভাড়া করে সোজা রুমা চলে আসাই সুবিধাজনক। ঋজুক ঝরনায় যেতে রুমাবাজার এলাকার নদীর তীরে নৌকা কিংবা ইঞ্জিনচালিত নৌকা পাওয়া যায়। তবে কেউ যদি পায়ে হেঁটে যেতে চান তবে খুব সকালে উঠে রওনা দিতে হবে। রুমা বাজার থেকে নৌকা ভাড়া করে যাওয়া যায়। নৌকা ভাড়া ৫০০ টাকা।

কোথায় থাকবেনঃ

রুমায় রাত্রিযাপনের জন্য উঠতে পারেন হোটেল হিলটনে।

কিছু টিপ্সঃ

১) You never know – কখন কি লাগবে। তাই পানিতে নামার জিনিসপত্র সাথে রাখুন (হাফ পেন্ট, স্যান্ডেল)
২) রোদের জন্য ক্যাপ (গরম কালে), শীত হলে মাফলার দিয়ে এক ঢিলে ২ পাখি পারতে পারবেন।
৩) ট্র্যাকিং বা অনেক হাটা চলার অভ্যাস না থাকলে নৌকা করে যাবেন। নাহলে পায়ের খবর হয়ে যাবে। মাসল পুল করে কান্না কাটি করতে কবে।
৪) কস্ট করলে কেস্ট মেলে। ট্র্যাকিং করে গেলে অনেক অজানা জিনিস জানা যায়, দেখা যায়।
৫) বাইক করে গেলে অবশ্যই বাইকের কন্ডিশন খুব ভালো করে চেক করে নেবেন (ব্রেক শু, চেইন, ফুয়েল, ইত্যাদি)
৬) বর্ষায় গেলে প্রচুর জোক ধরবে। তাই রবারের জুতা পরে নিন। ওখানে কিনতে পাওয়া যায়। রেইন কোট নিন। বর্ষায় প্রকৃতি কিন্তু আসল রুপ মেলে ধরে।
৭) নিবন্ধিত কোণ সেন্টার থেকে গাইড নিন। অচেনা কারো সাথে যাবেন না/ খাবেন না। আগে জিজ্ঞাসা করে নেবেন – টোটাল কত দিতে হবে। পরে আর কোণ কিছু দিতে হবে কিনা। নাহলে পরে বলবে – এই ফি, ওই ফি দিতে হবে।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: ভ্রমণ পাগল,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি 16, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.