ধানুকার মনসা বাড়ি – শরীয়তপুর

৬শ বছরের প্রাচীন এ বাড়িটিকে ঘিরে রয়েছে নানান অলৌকিক ও কিংবদন্তী লোক কথা। জেলার প্রাচীন ব্যক্তিগণ এ বাড়িকে ময়ুর ভট্টের বাড়ি নামে চিনে থাকেন।। সুলতানী ও মোগল আমলের নির্মাণ শৈলিতে নির্মিত এ বাড়িতে ৫টি ইমারত আছে ।

তৎকালীন সময়ে এখানে পূজা দেয়ার জন্য ভারতবর্ষের বহু লোকের আগমন ঘটতো বলে বাড়িটি মনসা বাড়ি(Dhanukar Manasa Bari) হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এ বাড়ির পাশে স্থাপিত ছিল মহিলা মনসা মন্দির ও শিব মন্দির। আরেক কিংবদন্তি থেকে জানা যায় ভারতের কৌনজ থেকে তৎকালিন সময়ে ধনাঢ্য ভট্রাচার্য পরিবার ধানুকা অঞ্চলে বসবাস শুরু করে। তারা শিক্ষা, ধর্ম পরায়নতা, অর্থ বৃত্তে সমৃদ্ধ ছিল বলে জানা যায়। আর তাদেরই পূর্ব পুরুষ ছিলেন ময়ুর ভট্ট। ময়ুর ভট্টের জন্ম বৃত্তান্ত জানতে গিয়ে জানা যায় তিনি যখন মাতৃগর্ভে ছিলেন তখন তার পিতা মাতা তীর্থের জন্য কাশিধামে যাত্রা করেন। সে সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা কি রূপ ছিল তা আজকের শরীয়তপুরবাসী অবশ্য কল্পনাও করতে পারবেনা।

দীর্ঘ যাত্রা পথে ময়ুর ভট্ট এক বনের ধারে জন্মগ্রহন করেন। তার ধর্মের জনক জননী ধর্ম ও দেবতাকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে তারা পুত্রকে শাল পাতায় আচ্ছাদিত করে কাশিতে যাত্রা করেন। গন্তব্যে পৌছে পূজো দিয়ে রাতে ঘুমিয়ে তারা স্বপ্ন দেবতার মাধ্যমে জানতে পারে তাদের পূজা দেবতার নিকট গ্রহণযোগ্য হয়নি। তারা শিশুটি ফেলে যাওয়ার সময় ভূলে গিয়েছিল মানুষের জন্য ধর্ম, ধর্মের জন্য মানুষ নয়। তারা তাদের ভূল বুঝতে পেরে দ্রুত ফিরে এসে দেখেন নির্দিষ্ট স্থানে এক ঝাক ময়ুর শিশুটিকে আচ্ছাদন করে রেখেছে। ময়ুরের আশ্রয়ে বেঁচে ছিল বলে ঐ শিশুর নাম রাখা হয়েছিল ময়ুর ভট্টো। তাঁর নামে বাড়ির নাম করন করা হয়।

ময়ুর ভট্টের বাড়ী মনসা বাড়ি নাম করনের বিষয় অনুসন্ধ্যান করে জানা যায়, সম্ববত এ বাড়ীর কিশোর একদিন প্রত্যশে বাগানে ফুল কুড়াতে গিয়ে বাগানে মস্তবড় সাপ দেখে আসেন। পর দিনও তাই অবস্থা। তৃতীয় দিনে সাপটি তার পিছন পিছন বাড়ি এসে নৃত্য করতে থাকে। বাড়ির লোকজন ভয়ও বিস্ময়ে বিষয়টি অনুধাবন করতে থাকেন। রাতে মনসা দেবীর মাধ্যমে আদৃষ্ট হয়ে নতুন করে মনসা মন্দির স্থাপন করে পূজা শুরু করা হয়। এখনও এ বাড়িতে মনসা পূজার সময় সাপের সমাগম হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবী। এ বাড়িতে রয়েছে পিতলের মূর্তি। যে মূর্তিটি তৎকালিন সময় কীর্তিনাশা নদীতে মাছ ধরার সময় জালে মূর্তিটি পেয়ে জেলে অলৌকিক ভাবে এ মন্দিরে রেখে যান। যা আজঅবধি এ মন্দিরে আছে।

ঐতিহাসিক এ বাড়ি থেকে ১৯৭৩ সালে ভাষা সৈনিক ও জেলার ইতিহাস গবেষক মাস্টার জালাল উদ্দিন আহম্মেদ কাঠের বাধাই করা ও তুলট কাগজে লিখিত পুথি উদ্ধার করেন। যা কয়েকটি কপি নেপালে পাঠানো হয়। আজ ও বেশ কয়েকটি কপি এখনো শরীয়তপুর জেলার বেসরকারি পাবলিক লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত আছে।

কিভাবে যাবেনঃ

শরীয়তপুর পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের ধানুকা গ্রামে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ৬শ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ধানুকা মনসা বাড়ি।

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: সাফায়েত,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি 19, 2018

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.