পাহাড়ি খাবারের আদ্যোপান্ত

বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল যেন দেশের ভেতর আরেক দেশ। ভূপ্রকৃতি, পোশাক, ভাষা, খাদ্যাভ্যাস সবকিছুতেই আছে বাঙালি সংস্কৃতি থেকে ভিন্নতা।

তাদের সাদাসিধা কিন্তু বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা সত্যিই আকর্ষনীয়। কর্মসূত্রে এবং শখের বশে প্রায়ই যেতে হয় পাহাড়ে। আর অনেকই পাহাড়ে বেড়াতে যাচ্ছেন। সেখানকার স্থানীয় খাবার পরখ করার আগে জেনে নিন কয়েকটি খাবারের নাম।

মুরগির চাটনি:
পাহাড়ি মুরগির চাটনি অসম্ভব মজার একটা খাবার। মুরগির মাংসের সঙ্গে লবণ, হাল্কা হলুদ ও আদা বাটা দিয়ে সিদ্ধ করে পাহাড়ি মরিচ, পেঁয়াজ আর আদা দিয়ে মাখিয়ে দেয়। খুবই সাধারণ প্রস্তুত পদ্ধতিতে মজাদার একটি খাবার। উপজাতি খাবার দোকানগুলিতে ৬০ টাকা প্লেট।

বাঁশমুরগি:
আরেকটি মজাদার মুরগির পদ হল বাঁশ মুরগি। দেশি মোরগের সঙ্গে পাহাড়ি আদা, রসুন, মরিচ এবং সাবারাং পাতা মিশিয়ে কাঁচাবাঁশের ভিতরে ঢুকিয়ে কলাপাতা দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় বাঁশের মুখ। এরপর কয়লার চুলায় পোড়ানো হয় বাঁশটি। স্বাদ আর গন্ধে বাঁশমুরগি অসাধারণ। তবে এটি সব জায়গায় পাওয়া যায় না।

কাঠি-কাবাব:
মাছ বা মুরগির কাঠি কাবাব সন্ধ্যার নাস্তা হিসেবে বিভিন্ন পাহাড়ি রেস্তোরাঁগুলোতে পাওয়া যায়। দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকা

মুণ্ডি:
পাহাড়ের স্থানীয়দের হাতে তৈরি চালের নুডুলস। মুরগি বা মাছের স্টকের সঙ্গে খাওয়া হয়।

তোজাহ:
পাহাড়িরা অনেক বেশি শাকপাতা ও সবজি খায়। তোজাহ তাদের পছন্দের একটি সবজির পদ। নানা রকম পাহাড়ি সবজি সিদ্ধ করে এই খাবার বানানো হয়। দাম প্রতি প্লেট ১৫ থেকে ২০ টাকা।

বাঁশ কোড়লের সবজি:
বাঁশের সবচেয়ে কচি অংশ দিয়ে এই ব্যঞ্জন তৈরি করা হয়। বাঁশ কোড়ল নানা ভাবে ব্যবহার হয়। বাঁশ কোড়ল ভাজি, অন্যান্য সবজির সঙ্গে বাঁশ কোড়ল ইত্যাদি। তবে বাঁশ কোড়লের সঙ্গে চিংড়িশুটকির রসায়নটা সবচেয়ে বেশি উপাদেয় লাগে আমার কাছে।

কাঁকড়া ভুনা:
সাঙ্গুতে পাওয়া কাঁকড়া ভুনা করা হয় হাল্কা মসলা দিয়ে। প্লেট ৩০ থেকে ৩৫ টাকা

বান্দরগুলা দিয়ে চিংড়ি:
নাম শুনে আঁতকে ওঠার কিছু নেই। বান্দরগুলা এক ধরনের পাহাড়ি সবজি। প্রতি প্লেট ৩০ থেকে ৩৫ টাকা

আদাফুল দিয়ে ছোট মাছ:
আদা আমরা সকলেই খাই। তবে আদাফুল খেয়েছেন কি? খেতে দারুণ মজা।

শামুক ও ঝিনুক:
শহরের বড় বড় রেস্তোরাঁগুলোতে আমরা বেশ ভাব নিয়েই ঝিনুক খাই। তবে পাহাড়ে তাদের আমিষের চাহিদা যোগাতে তারা নিত্যদিনই শামুক ঝিনুক খায়।

শুকরের মাংস:
পাহাড়িদের মধ্যে শুকরের মাংস অনেক জনপ্রিয়। আমাদের গরুর মাংসের মতোই শুকরের মাংস তাদের খাদ্যতালিকার অন্তর্ভুক্ত।

গহীন পার্বত্য অঞ্চলের অনেক নৃগোষ্ঠী এখনও শিকার নির্ভর জীবনযাপন করে। পাহাড়ের জুম চাষ আর শিকারে পাওয়া জন্তু এই তাদের খাবার। সেই শিকারের তালিকায় থাকে সাপ, গুই সাপ, হরিণ, বন্য শুকর, ব্যাঙ নানা ধরনের পাখি ইত্যদি।

আগেই বলেছি পাহাড়ের খাদ্যাভ্যাস আমাদের থেকে আলাদা তাই খাবারগুলো দেখে নাক কুচকানোর কিছু নেই। পাহাড়ি খাবারের স্বাদ নিতে চাইলে বান্দরবান বাজারের মধ্য পাড়ায় বেশ কিছু পাহাড়ি রেস্তোরাঁ আছে সেখানে যেতে পারেন।

তথ্যসূত্রঃ https://goo.gl/hH7kSA

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: ভ্রমণ পাগল,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি 17, 2018