ঔপনিবেশিক আমলে মহারাণী ভিক্টোরিয়ার সময় যশোর থেকে রায় গোবিন্দ ও সুর নারায়ণ নামে দুই জমিদার বংশধর গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার উজানী গ্রামে বসতি স্থাপন করেন এবং তেলিহাটি পরগণা পত্তনি নিয়ে শুরু করেন জমিদারি। সেই সুবাদে উজানীতে নির্মিত হয় কারুকার্যখচিত জমিদারদের বসতের জন্য দালানবাড়ি, যা বর্তমানে উজানী রাজবাড়ি (Uzani/Ujani Rajbari) নামে পরিচিত। সেইসঙ্গে জমিদাররা নির্মাণ করে পাকা বৈঠকখানা, শান বাঁধানো ঘাট, সমাধি মঠ ও মন্দির।জমিদারদের এসব ভবন এ দেশের স্থাপত্য শিল্পের অনুপম নির্দশন।
জমিদার সুর নারায়ণের প্রোপৌত্র সমরেন্দ্র চন্দ্র রায় এসব দর্শনার্থীর কাছে বলে যান সেই জমিদারী আমলের ইতিহাস। সমরেন্দ্র চন্দ্র রায় জানান, ভারত বিভাগ ও জমিদারি প্রথা বিলুপ্তি হওয়ার পর এখানকার জমিদাররা ভারতে চলে গেলেও তিনি পৈতৃক নিবাস ছেড়ে যাননি। জমিদাররা চলে গেলেও থেকে যায় তাদের স্মৃতিচিহ্নগুলো।
সব প্রাচীন আমলের অনুপম টেরাকোটা শৈলীতে নির্মিত জমিদারদের মঠটির ছাদ ভেঙ্গে পড়েছে। এছাড়া গুপ্তধনের সন্ধানে খোঁড়াখুঁড়ি, ভাংচুর করে কতিপয় লোক মঠটিকে বিকৃত করে ফেলেছে। মঠটি প্রায় ৩০ হাত মাটির নিচে দেবে গেছে। জমিদার বাড়ির সন্নিকটে কালীমন্দিরটিরও ভগ্নদশা। এই মন্দিরের কষ্টিপাথরের কালীমূর্তিটি অনেক আগেই বিলীন হয়ে গেছে। জমিদারবাড়ি সংলগ্ন বিশাল দীঘিটিও দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার করা হয়নি। উজানীর অদূরে মহাটালী গ্রামে রয়েছে জমিদার আমলের আরও একটি প্রাচীন মন্দির ও ধর্মরায়ের বাড়িতে আছে বিশাল দীঘি। দীর্ঘদিন এগুলো কোন সংস্কার না করায় ক্রমে বিলুপ্ত হওয়ার পথে।
পুরনোদিনের স্মৃতিচারণ করে সমরেন্দ্র বলেন, তত্কালীন চান্দার বিলসহ প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর এলাকা নিয়ে ছিল তাদের জমিদারি আর এই জমিদারি এলাকা বিভিন্ন অংশে এখনও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে নানা স্থাপনা, নিদর্শন। উজানীর ১৫ কি.মি. পূর্বে রাজৈর উপজেলার খালিয়াতেও রয়েছে অনুরূপ জমিদার বাড়ি, টেরাকোটা মন্দির, শান বাঁধানো ঘাট ইত্যাদি। উজানীর জমিদার বাড়ি, মন্দির, মঠের যথেষ্ট মিল রয়েছে। উজানীর জমিদার বাড়ির মত খালিয়ার জমিদার বাড়ির নিদর্শনগুলোও বর্তমানে ধ্বংসের মুখে।
উজানীর রাজবাড়ী কিভাবে যাবেন –
ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ যাওয়ার জন্য ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ, ফুলবাড়িয়া থেকে টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস, পান্না ডিলাক্স, গ্রিন লাইন পরিবহন, কমফোর্ট পরিবহন, আমিন পরিবহন, সেবা ইত্যাদি পরিবহনের বাস চলাচল করে । ভাড়া ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা।
তথ্যসূত্র – https://goo.gl/jmfHa5