বাংলাদেশের শীর্ষ পর্বত শৃঙ্গ হিসেবে মাথা উঁচু করে আছে বান্দরবানের সাকাহাফং পর্বত যা মদক তং বা মোদক তুয়াং নামেও পরিচিত। কিছুদিন আগেও কেওক্রাডং বা তাজিংডং কে বাংলাদেশের শীর্ষ পর্বত শৃঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করা হলেও ইউএস টপোগ্রাফি ম্যাপ, রাশিয়ান টপোগ্রাফি ম্যাপ, গুগল ম্যাপ, গুগল আর্থসহ বিভিন্ন অভিযাত্রীদের নেওয়া জিপিএস রিডিংয়ের মাধ্যমে জানা গেছে এখন সাকহাফং-ই বাংলাদেশের অন্যতম সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ। মাপজোকের হিসাব অনুসারে কোনোটা ৩৪৫৪, ৩৪৪৫ বা ৩৪১০ ফুট।
থানচি বাজার থেকেই সাকাহাফং পর্বতের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু। মানুষের বসতি পেরিয়ে ক্রমশ পাহাড়ি ট্রেইল। পাহাড় ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই এখানে। কেবল পার হতে হবে দানবের মতো এক এক পাহাড়। বসতি মনুষ্যহীন এমন জনপথে সঙ্গী কেবল পাহাড়ের কালো-সাদা মেঘ, হঠাৎ হঠাৎ বৃষ্টি, জুমের ক্ষেত, সবুজ ঘ্রাণ আর পাহাড়ি ঝিরির মিষ্টি জল! অরণ্যের পথে পথে মিলবে নগর সভ্যতাহীন এক অন্য কোনো জনপদ। কখনও বুনো প্রজাপতি, কখনও বা অচেনা পতঙ্গ কিংবা বিলুপ্ত প্রায় পাখির ঝাঁক। উড়ে যাচ্ছে চোখের সামনে। শুনশান বাতাসের শব্দ যেন এই পবর্তঘেরা পরিবেশের চিরকালীন সঙ্গী! এসব না থাকলে হয়ত এত দীর্ঘ ট্র্যাকিং একঘেয়েমিতে পেয়ে বসতেও পারে।
পাহাড়ের চড়াই-উতরাই, ঝিরিপথ, বুনোফুলের দল এসব পেরিয়ে ২ দিন ট্রাকিং করে ঝিরি তীরের বোডিং পাড়া, শেরকর পাড়া, তান্দুই পাড়া, নেপিউ পাড়া হয়ে সাকাহাফং। এরপর বাংলাদেশের এই অংশে আর কোনো পাড়া নেই। আছে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। পাহাড় পেরিয়ে মিয়ানমারের সীমান্ত শুরু। সাকাহাফং’য়ের পাদদেশে এই নেপিউ পাড়া। সেখান থেকে বাঁশের ট্রেইল ধরে চূড়ায় উঠতে হবে। পথটা খুব কঠিন। ট্রেইলের পথ বলতে কিছু নেই এখানে। বাঁশের জঙ্গল পেরিয়ে যেতেই সাকাহাফং’য়ের চূড়া স্পর্শ করা হাতছানি। চূড়া থেকে এই সভ্যতার কোনো কিছুই চোখে পড়ে না। চোখ জুড়ে কেবল পাহাড় আর পাহাড়। রং বদলানো মেঘের দৃশ্যপট, সবুজের অমলিন রূপ, মিয়ানমারের আরও উঁচু উঁচু বিরতিহীন বন্ধন পাহাড়, শরীর ভিজিয়ে দেওয়া মেঘের শিহরণ!
যেভাবে যাবেন
বিভিন্ন পরিবহনের বাসে ঢাকা/চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি বান্দরবানে যাওয়া যায়। সপ্তাহের প্রতিদিন বান্দরবান থেকে থানচি পযর্ন্ত বাস যায়। অথবা রির্জাভ জীপে করেও থানচি যাওয়া যাবে। থানচি থেকে সাকাহাফং যাওয়ার একমাত্র পথ ট্র্যাকিং অর্থাৎ হাঁটা। থানচি থেকে গাইড নেওয়া বাধ্যতামুলক। যাওয়ার পথে থানচি ক্যাম্পে নিজেদের নাম-ঠিকানা অন্তর্ভুক্ত করে নিতে হবে।
কোথায় থাকবেন
বান্দরবানের পাড়াগুলোতে রাতে থাকার ব্যবস্থা আছে। তারপরও চাইলে তাবু নিতে পারেন।
প্রয়োজনীয় তথ্য
সাকাহাফং’য়ের পথ বেশ দুর্গম তাই প্রস্তুতিও নিতে হবে। ট্র্যাকিং ‘সু’ সম্ভব না হলে প্ল্যাস্টিকের জুতা, প্রয়োজনীয় ওষুধ, ওডোমাস ক্রিম(মশা পোকামাকড় প্রতিরোধক মলম), ফাস্ট এইড, পযার্প্ত খাবার, স্যালাইন এবং ট্রেকিংয়ে রান্না করতে চাইলে প্রয়োজনীয় উপকরণ নিজেদের সঙ্গে করে নিতে হবে।