ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়নের প্রতাপপুর গ্রামে প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি (Pratappur Zamindar Bari) এর অবস্থান। দাগনভূঞায় কয়েকটি চৌধুরী, ভূঞা এবং জমিদার বংশের মধ্যে প্রতাপপুর জমিদারদের অবস্থান ছিল শীর্ষে। তারা ছিল আশপাশের এলাকার জন্য প্রভাবশালী। ব্রিটিশ আমলে বাড়ির জমিদার রাজকৃঞ্চ সাহা এ বাড়িতে বসেই অত্র এলাকার শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। তিনি এবং তার ৫ ছেলে জমির খাজনাদি আদায় করতেন।
জানা যায়, ১৮৫০ মতান্তরে ১৮৬০ সালে জমিদার রাজকৃঞ্চ সাহা ৮শ’ শতক জায়গায় দৃষ্টিনন্দন করে বাড়িটি নির্মাণ করেন। নিজ নামেই তিনি নির্মাণ করে যান রাজপ্রাসাদসম বাড়ি। রামনাথরা ছিলেন পাঁচ ভাই। তারা থাকতেন পাঁচটি দ্বিতল ভবনে। বাড়িতে রয়েছে মোট ১৩টি পুকুর যাতে মাছ চাষ হতো জমিদারের তত্ত্বাবধানে। বাড়ির ভেতরে পাঁচটি পুকুরের ৫টি পাকা ঘাটে স্নান করতেন বউ-ঝিরা। এতো পুকুর বাংলাদেশের আর কোন জমিদার বাড়িতে নেই। এখানকার পুকুর পুরো বাড়িকে করেছে আকর্ষণীয়। ওই সময়ে বাড়িটি ছিল আশপাশের এলাকার জন্য দর্শনীয়। তৎকালীন অন্যান্য স্থানের জমিদাররা এ বাড়িতে সফরবিরতি করতেন। একপর্যায় জমিদার প্রথার বিলুপ্ত ঘটলে ওই বাড়ির প্রভার প্রতিপত্তি কমতে শুরু করে।
জমিদার বাড়িতে ঢুকতেই স্বাগতম জানাবে বিশাল এক চালতা গাছ। এতো বৃহৎ আকৃতির চালাত গাছ হয়তো প্রথমবার দেখছেন আপনি। প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি এলাকায় রাজবাড়ি, বড় বাড়ি হিসেবে ও পরিচিত। এখনো প্রতি বছর বৈশাখে সনাতন ধর্মালম্বীরা এ বাড়িকে ঘিরে তিন দিনব্যাপী উৎসব পালন করেন। দেখতে পারেন প্রতাপপুরের জমিদারদের তৈরী করা প্রতাপপুর হাইস্কুল।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে ট্রেনে ফেনী নামলে টমটম কিংবা শহর বাস সার্ভিসে চলে যাবেন ফেনীর মহিপাল। আর বাসে আসলে মহিপালেই নেমে যেতে পারেন। মহিপাল থেকে উঠবেন নোয়াখালীগামী বাসে। বলবেন সেবারহাট বাজারে নামিয়ে দিতে। সেবারহাট বাজার পড়েছে নোয়াখালী জেলায়, ফেনী জেলার শেষ সীমানা থেকে দুরত্বমাত্র এক কিলোমিটার।
সেবারহাট বাজারে বাস থেকে নেমে বাজারের বাঁপাশ (উত্তরপাশে) চলে আসুন। একটা লোহার ব্রিজ আছে, কাউকে প্রতাপপুর যাওয়ার সিএনজির কথা বললেই বলে দিবে। সিএনজিতে উঠে পড়ুন। রাস্তার দুপাশে ধানক্ষেত, গ্রাম্য বাড়িঘর, অপূর্ব সুন্দর গ্রামের হাজারগুনে দেখতে দেখতে পৌঁছে যাবেন প্রতাপপুর বাজারে। বাজারের পাশেই প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি।