জমিদার নারায়ণ চন্দ্র চৌধুরী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে নানারকম ফুলগাছ ও অনান্য উদ্ভিদ এনে রোপন করেছেন নিজের তৈরী এ গার্ডেনটিতে। বলধা গার্ডেন(Baldha Garden) প্রকৃতপক্ষে ফুল ও উদ্ভিদের একটি মিউজিয়াম। তবে সত্যিকারের একটি মিউজিয়ামও ছিল বলধা গার্ডেনে। তাতে কয়েকটি ধাতব মূর্তি ছিল। বলধা গার্ডেনে যেমন দেশ বিদেশের বিভিন্ন উদ্ভিদ রয়েছে ঠিক তেমনি দেশ বিদেশের খ্যাতিমান লোকেরা বলধা গার্ডেন দেখতে আসতেন।
এখনো বলধা গার্ডেন নিয়ে ঢাকাবাসীর আগ্রহের কমতি নেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও বলধা গার্ডেন পরিদর্শন করেছিলেন। তখন তিনি এ গার্ডেনের বহু বিদেশী ফুলের বাংলা নামকরণ করেছিলেন।বলধা গার্ডেন (ইংরেজি: Baldha Garden) ঢাকার ওয়ারী এলাকায় অবস্থিত একটি উদ্ভিদ উদ্যান।
বিখ্যাত এই গার্ডেনের মালিক ছিলেন তদানীন্তন ঢাকা জেলা, বর্তমান গাজীপুর জেলার বলধার জমিদার নরেন্দ্রনারায়ণ রায় চৌধুরী ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে ৩.৩৮ একর জায়গার উপর বলধা গার্ডেনের সূচনা করেন। এটি ছিল তার বাগানবাড়ি। নরেন্দ্রনারায়ণ এখানে একটি পারিবারিক জাদুঘরও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখানে তখন ঢাকার উচ্চবিত্তদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। নিয়মিত সেখানে বসতো গান বাজনার আসর। ধারণা করা হয় বলধা নাম থেকেই বলধা গার্ডেনের নামকরণ হয়েছে।
তিনি দুটি উদ্যান তৈরি করেন। প্রথম উদ্যানটির নাম রাখেন “সাইকী”। পরবর্তিতে তৈরি করা হয় দ্বিতীয় উদ্যান “সিবলী”।
চওড়া রাস্তা দিয়ে বাগানটি দুভাগে বিভক্ত। ঢুকে কিছুদূর গেলেই হাতের বামে পড়বে শঙ্খনদ-পুকুর। চারধারে বসে আড্ডা দেওয়ার মতো বেশ জায়গা। আছে পাকাসিঁড়ি, ধাপ নেমে গেছে পানি পর্যন্ত। অনেকেই পুকুরের পানিতে গোড়ালি ডুবিয়ে সেখানে বসে গল্প করছেন।
শঙ্খনদ লাগোয়া দোতলা বাড়ির নাম ‘জয় হাউজ’। পুরনো কাঠামোতে দোতলায় উঠার সিঁড়িটা লোহার, সামনে তিন দিকে খোলা বারান্দা। সেখানে প্রকৃতির নির্মল বাতাসে জিরিয়ে নেওয়ার মতো পরিবেশ।
বর্তমানে এটি জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের একটি স্যাটেলাইট ইউনিট। এই বাগানে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে প্রায় ৮শ প্রজাতির ১৮ হাজার উদ্ভিদ সংরক্ষণ করা আছে।
অসংখ্য বিরল ও দুষ্প্রাপ্য প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে আছে অর্কিডের বৃহৎ ভাণ্ডার। নানা প্রজাতির জলজ উদ্ভিদের মধ্যে শাপলা, নীলপদ্ম, হলুদশাপলা, কচুরিপানা এবং সুদৃশ্য আমাজান লিলি। ২ মিটারের বেশি ব্যাসার্ধের থালার মতো দেখতে এর পাতা অনেক পুরু ও শক্ত। লিলি ফুল খুবই আকর্ষণীয়, সন্ধ্যায় ফোটে।
ক্যাক্টাস হাউজে রয়েছে বিচিত্র ধরনের মনোমুগ্ধকর ফণিমনসা গাছ।
এছাড়াও বাগানে রয়েছে দুর্লভ পামপ্রজাতির উদ্ভিদের এক বিশাল সংগ্রহ। রয়েছে হরেক রকমের লতা, গুল্ম, ঔষধি ও সৌন্দর্যবর্ধক গাছ।
বাগানে দেখা যাবে দুষ্প্রাপ্য প্রজাতির গাছ শারদমল্লিকা, লতাজবা, ক্যানাংগা, কনক সুধা, কন্টক লতা, প্যাপিরাস, ধূপগাছ, শ্বেত শিমুল, হিং, উভারিয়া, রুপেলিয়া, কর্ডিয়া, অঞ্জন, গড়শিঙ্গা, অক্রকারপাস, পোর্ট ল্যান্ডিয়া, ওলিয়া ইত্যাদি।
বলধা বাগানে ভাড়ায় চিত্রায়ন ও সাইকি অংশে শিক্ষার্থীদের গবেষণার ব্যবস্থা আছে। ছাত্রছাত্রীরা আগে থেকে আবেদন করলে বিনামূল্যে বাগান দেখার সুযোগ করে দেওয়া হয়।
টিকিট কাউন্টারঃ
মূল গেটের বাম পাশে ১টি টিকেট কাউন্টার আছে। লাইন ধরে টিকেট কাটার প্রয়োজন হয় না, তবে সরকারী ছুটি বা বিশেষ দিনে লাইন ধরতে হবে দুপুর বেলায়। সবার জন্য টিকেটের মূল্য একই যেমন ১৫ টাকা। ২ বছর বয়সের শিশুদের জন্য টিকেট লাগে না। শুক্রবার ও শনিবার ভিড় বেশী হয়। দুপুরের দিকে ভিড় বেশী হয়।
খোলার সময়ঃ
প্রতিদিন সকাল ৮.০০ টা থেকে দুপুর ১২.৩০ টা এবং দুপুর ২.০০ টা থেকে বিকাল ৬.২০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এই বাগান সবার জন্য উন্মুক্ত।
কিভাবে যাবেনঃ
যাত্রাবাড়ীর দিকে যাওয়া বা সেখান থেকে ছেড়েআসা ৮ নম্বর গাবতলী পরিহন, বলাকা সিটিং সার্ভিস, ৩৬ নম্বর আর্ক পরিবহনের বাসে চড়ে রাজধানী সুপার মার্কেটে নামতে হবে। এখান থেকে হাটখোলা রোড ধরে পাঁচ মিনিট হাঁটলেই যাওয়া যায় বলধা গার্ডেন।
৩০ থেকে ৪০ টাকা ভাড়ায় গুলিস্তান থেকেও রিকশা দিয়ে সরাসরি যাওয়া যায়।
আমার বাড়ি খুলনা। সবুজ প্রকৃতি আমার ছোট বেলা থেকেই প্রিয়। তাই যেখানেই সবুজের সমাহার সেখানেই আমার বিচরণ। এরজন্য ছাদে একটা সুন্দর বাগান ও করেছি। যাইহোক, কাজের স্বার্থে অনেকবার ঢাকা আসা হয়েছে, তবে বলধা গার্ডেনে যাওয়া হয়নি। আপনার ব্লগ পরে সত্যিই আমি মুগ্ধ হয়েছি। এবার ঢাকা গেলে অবশ্যই সেখানে একবার যাব।