পরিবহন খাতেই যে কোন টুরের সব থেকে বেশি ব্যয় হয়। সে জন্য বাসের টিকিট কাটার ক্ষেত্রে বিভিন্ন অ্যাপ গুলো দেখুন, কোন অফার পেয়েও পেয়ে যেতে পারেন। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশে গেলে সরকারী পরিবহন গুলো ব্যাবহার করুন এতে খরচ কিছুটা কম হবে। খুব ভালো হয় ট্যাক্সি না ব্যাবহার করে মেট্রো রেল বা বাস ব্যাবহার করুন। ভ্রমনে গেলে হাটার বিকল্প নেই।
ভ্রমনের জন্য আপনি যদি বিমানের কথা চিন্তা করেন তবে চেষ্টা করবেন একটু বেশী আগে টিকিট কাটতে। টিকিট কাটার আগে জনপ্রিয় ট্রাভেল ওয়েব গুলো দেখুন, এখানে অনেক কম দামের অফারে টিকিট পেয়েও যেতে পারেন। বাংলাদেশ থেকে যদি বিমানে কোথাও যেতে চান এবং আপনার যদি মনে হয় টিকিটের দাম একটু বেশি তবে আপনার প্রতিবেশি দেশ গুলোর বিমানের ভাড়াটা চেক করুন। যেখানে লাভ পাবেন সেটাই ব্যাবহার করুন।
সব থেকে গুরুত্বপুরন হলো মোবাইলের GPS ও Google Map এর সঠিক ব্যাবহার। কিছু ক্ষেত্রে Google Map এ অনেক সময় আপনি একটু ঘুরিয়ে পেচিয়ে রাস্তা পাবেন, সে জন্য ম্যাপে দেখনো রাস্তা ও আপনার লোকেশনের মধ্যে অন্য কোন শর্ট রাস্তা আছে কিনা সেটা দেখুন। শুধুমাত্র আমাদের সবার Android ফোনে থাকা GPS এর সঠিক ব্যাবহার না জানার কারনেই আমরা অনেক টাকা ক্ষতিপূরণ দেই।
আপনি যদি বাজেট ট্রাভেলার হন তবে স্ট্রিট ফুড খাবার চেষ্টা করুন এতে করে আপনার টাকা বেচে যাবে। যদি আরো টাকা কম খরছ করতে চান তবে শেয়ারে খাবার খাবেন। যেমন ধরুন আপনারা চার জন কোথাও ঘুরতে গেছেন। এক প্লেট মাছ বা মাংশ এক জনের জন্য বেশি হয়ে যায় তবে চার জনের জন্য ২ প্লেট নিয়ে চার ভাগ করে খাবেন। এতে খরছ কমে যায়।
আমরা টুরে গিয়ে ক্লান্তির কারনে বেশি খাবার খেয়ে ফেলি। এতে করে খুব সহজেই আমরা ক্লান্ত হয়ে যাই এবং এতে করে হয়তবা কোন জায়গায় ১ দিনের জায়গায় ২ দিন থাকতে হয়। ফলে খরছ বেশি হয়ে যায়। এজন্য আমার পরামর্শ হলো টুরে গেলে সকালের নাস্তাটা একাটু ভালো ভাবে ও দুপুরের খাবারটা হালকা খাবেন। রাতের খাবার ভারী ও সারাদিন গ্লুকোজ বা মিষ্টি জাতীয় কিছু খান আর প্রচুর পানি পান করুন। এতে করে আপনি এনার্জিও পাবেন আর শরীরটাও বেশ ফুরফুরে থাকবে।
কোন জায়গায় যাবার আগে সেই যায়গা সম্পরকে ভালো ভাবে রিসার্চ করুন। প্রথমে আপনি একটা যায়গা নির্বাচন করুন যেখানে আপনি থাকবেন এর পর সেই জায়গাকে মেইন পয়েন্ট ধরে এর আশেপাশে কি কি দেখবেন সেটা নির্বাচন করুন। এবার সব কিছুকে কয়েকটা রেখার মাধ্যমে সাজান। ধরুন আপনি বিছানাকান্দি, রাতারগুল আর জাফ্লং যাবেন। তবে আপনার রেখা হবে দুটি। প্রথম রেখার শেষ বিন্ধুতে থাকবে সে দিকের সব থেকে দুরের জায়গাটা এবং এভাবে আস্তে আস্তে কাছের গুলো ( বিছানাকান্দি > রাতারগুল > হোটেল)। এভাবে ২য় রেখার প্রথমে থাকবে জাফ্লং এবং আস্তে আস্তে সেদিকের সব দেখার জায়গা গুলো। আমরা ভ্রমনের সময় অনেকেই খুব কাছের জায়গা থেকে দুরের জায়গায় যাই। এতে দূরে গিয়ে আমরা ক্লান্ত হয়ে পরি ও হোটেলে ফেরার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে যায় আর ফিরতি পথটা হয় অনেক বোরিং।
ভ্রমনের সময় হাতে সময় থাকলে বন্ধের দিন অথবা সরকারী ছুটির দিন গুলো পরিহার করুন। এই দিন গুলো ভ্রমনের খরছ বাড়িয়ে দেয়। যাদের বেশি টাকার সমশ্যা বাট ঘুরতে ভালো বাসেন তবে অফসিজনে কোথাও ঘুরতে যেতে পারেন। অফসিজেনে খরছ অর্ধেক আর কোলাহল মুক্ত থাকে।
গ্রুপে টুর দেওয়ার চেষ্টা করুন। একটা হোটেলের এক রুমের ভাড়া যদি হয় ২০০০ আর চার জন মিলে টুর দিলে এক এক জনের ভাগে মাত্র ৫০০ করে পরবে। বুঝুন তবে কই ২০০০ আর কই ৫০০ 😉
দেশের বাহিরে কোথাও ভ্রমনে গেলে হোটেল বুক করার জন্য সে জায়গার জনপ্রিয় বুকিং Apps গুলো ব্যাবহার করুন। এই অ্যাপ গুলো অফ সিজেনে অনেক অফার দেয় যেটা আপনি নিজে গিয়ে হোটেলে রুম বুক করলে হয়তবা পাবেন না।
পরিবার নিয়ে কোথাও যাবার আগে নিজে অন্তত একবার সেই যায়গা ঘুরে আসুন। আর সে সুযোগ না থাকলে খুব বুঝে শুনে সেই জায়গায় ভ্রমন করুন।
ভ্রমনে গেলে নিজেদের মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিং টা ভালো রাখুন। ঠিক সেই সব মানুষের সাথে ভ্রমন করুন যাদের সাথে আপনার মতের মিল হয় এবং একে অপরকে সাপোর্ট দিন। টাকা সবাই খরছ না করে গ্রুপের সবাই কিছু টাকা সৎ বন্ধুটিকে দিন যাতে এটা ভ্রমনের খরছ হিসেবে সে ব্যাবহার করবে এবং হিসেব রাখবে। তবে একবারে সব টাকা দিবেন না, কোন কারনে হারিয়ে গেলে বিপদে পরবেন। অল্প অল্প করে টাকা দিন আর একজন কোথায় কোথায় কি দেখবেন সেটার দায়িত্ব নিন। আর গ্রউপের সব থেকে চালাক মানুষটি কোথাও ঝামেলায় জড়িয়ে পরলে কিভাবে সেখান থেকে বেরিয়ে আসবেন সেই দায়িত্বটা নিজের কাধে নিন। সবাই একে অপরের প্রতি ভরসা রেখে কাজ করলে একটা সুন্দর টুর দিতে পারবেন।
লিখেছেন: রেজওয়ানুল কবীর