বাংলাদেশের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত নিদর্শন ও স্মারক চিহ্ন সমূহ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য ১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ ঢাকাস্থ সেগুন বাগিচার একটি পুরানো দ্বিতল বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর (Liberation War Museum)। এর প্রবেশ পথেই রয়েছে ‘শিখা চিরন্তন’, প্রস্তরে উৎকীর্ণ করা আছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অঙ্গীকার: সাক্ষী বাংলার রক্তভেজা মাটি/ সাক্ষী আকাশের চন্দ্রতারা/ ভুলি নাই, শহীদদের কোন স্মৃতি/ ভুলবনা কিছুই আমরা।
কতিপয় সমাজ নেতৃ বৃন্দ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও স্মৃতিকে রক্ষার উদ্দেশ্যে নিজেরাই স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে জাদুঘর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রতিষ্ঠাতাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে এটি জনগণ দ্বারা স্থাপিত জাদুঘর। সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য, প্রমাণাদি, বস্ত্তগত নিদর্শন, দলিলপত্র ইত্যাদি সংগ্রহ করে এখানে রাখা হয়।
নিরপেক্ষ ও বস্ত্তনিষ্ঠভাবে ঐতিহাসিক ঘটনাধারা মেলে ধরার এই প্রয়াসে দেশব্যাপী সাড়া জাগে এবং অনেক ব্যক্তি স্মারক প্রদান ও আর্থিক সহায়তাদানে এগিয়ে আসেন।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে (Muktijuddho Jadughar) ছয়টি গ্যালারি রয়েছে। প্রথম গ্যালারিতে প্রদর্শিত হয়েছে বাঙালির ঐতিহ্যের পরিচয় এবং ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের চিত্র। দ্বিতীয় গ্যালারিতে ১৯৪৭ সালের দেশভাগ-পরবর্তী পাকিস্তানি শাসন-শোষণের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। তৃতীয় গ্যালিরিতে প্রদর্শিত হয়েছে একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন, ২৫ মার্চ সংঘটিত গণহত্যা, স্বাধীনতার ঘোষণা, প্রাথমিক প্রতিরোধ ও শরণার্থীদের জীবনচিত্র।
দোতলার তিনটি গ্যালারিতে রয়েছে প্রতিরোধ ও মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দিক, পাকিস্তান সেনা ও তাদের দোসরদের বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং বাঙালির বিজয় দৃশ্য। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস সম্পর্কে দেশের মানুষকে সচেতন করতে জাদুঘর নানা ধরনের কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে। জাদুঘরের ব্যবস্থাপনায় বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবহণ ও পরিদর্শন সুবিধাসম্বলিত কর্মসূচি বা আউটরিচ প্রোগ্রাম পরিচালিত হয়। এছাড়া একটি গাড়িকে ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়েছে, যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে থাকে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে একটি ছোট প্রদর্শনমালা ও উন্মুক্ত মঞ্চ রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন প্রদর্শনী ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
পরিদর্শনের সময়সূচীঃ
- মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পরিদর্শনের সময়সূচি গ্রীষ্মকাল ও শীতকাল এই দুই ভাগে নির্ধারণ করেছেন জাদুঘর কর্তৃপক্ষ।
- গ্রীষ্মকাল: সোমবার থেকে শনিবার, সকাল ১০.০০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬.০০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
- শীতকাল: সোমবার থেকে শনিবার, সকাল ১০.০০ টা থেকে বিকাল ৫.০০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
- রবিবার জাদুঘর বন্ধ থাকে।
- জাদুঘর পরিদর্শনের জন্য দর্শনার্থীরা সাধারণত শুক্রবার ও শনিবার বেশী ভিড় করে। এছাড়া ১লা বৈশাখ, ২৬ শে মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর, ১৭ই মার্চ, ১৫ই আগষ্ট এসব দিনগুলোতে ভিড় হয়। সাধারণত সকল শ্রেণীর লোকজন জাদুঘর পরিদর্শনে আসে।
ফুড কর্ণারঃ
জাদুঘর ভবনের পিছনেই ফুড কর্ণারের অবস্থান। এখানে চিপস ১০ টাকা, চা ৮ টাকা, কফি ১৫ টাকা, সিংগারা ৬ টাকা, সমুচা ১৫ টাকা, আইসক্রিম, কোল্ড ড্রিংকস, মিনারেল ওয়াটার ও বিস্কুট পাওয়া যায়।
কিভাবে যাবেন
৫, সেগুন বাগিচা, ঢাকা – ১০০০। শিল্পকলা একাডেমি থেকে দুই-তিন মিনিটের পায়ে হাঁটার দূরত্বে এটি অবস্থিত।
এখানে গাড়ি পার্কিংয়ের কোন সুবিধা নেই।