দ্বীপের রানী ভোলায় সম্ভাবনাময় পর্যটন এলাকা চরফ্যাশনে নির্মিত হচ্ছে উপমহাদেশের সর্বোচ্চ ওয়াচ টাওয়ার(Watch Tower)। এই টাওয়ারের স্বপ্নদ্রষ্টা ভোলা-৪ আসনের এমপি বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের নামানুসারে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য, ভোলা-৪ আসনের এমপি ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এর নাম রেখেছেন ‘জ্যাকব টাওয়ার’।
এ টাওয়ারের উচ্চতা ২২৩ ফুট। স্থানীয় সংসদ সদস্য পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের উদ্যোগে চরফ্যাশন শহরের প্রাণকেন্দ্র খাসমহল মসজিদ ও ফ্যাশন স্কোয়ারের পাশে এ টাওয়ারটি নির্মিত হচ্ছে। টাওয়ারটিতে লিফটের সংযোজনও করা হয়েছে। থাকছে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বাইনোকুলার, যাতে ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকার নানা কিছু দেখা যাবে অনায়াসে।
প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯তলাবিশিষ্ট এই দৃষ্টিনন্দন টাওয়ারটি পর্যটকদের দারুণভাবে আকর্ষণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে চরকুকরি-মুকরি, ঢালচরসহ আশপাশের বনাঞ্চলে ইকোপার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। আর ইকোপার্ক সংলগ্ন স্থানেই ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে পর্যটকদের জন্য অত্যাধুনিক বিলাসবহুল রেস্টহাউসও নির্মাণ করা হচ্ছে।
জ্যাকব টাওয়ারে দাঁড়ালেই পশ্চিমে তেঁতুলিয়া নদীর শান্ত জলধারা, পূর্বে মেঘনা নদীর উথাল-পাতাল ঢেউ, দক্ষিণে চরকুকরি-মুকরিসহ বঙ্গোপসাগরের বিরাট অংশ নজরে আসবে। চরফ্যাশন উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন জানান, বিশ্বখ্যাত আইফেল টাওয়ারের আদলে নির্মিত হচ্ছে এই জ্যাকব টাওয়ার। এটি চরফ্যাশনসহ ভোলাকে আলাদা পরিচিতি দেবে বলে আশা করছি। চরফ্যাশনের দক্ষিণে সাগর মোহনার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ কুকরি-মুকরি, ঢালচর, তারুয়া সৈকত প্রকৃতির এক অপার সৃষ্টি।
কয়েক বছরে এই স্পটগুলো ভ্রমণপিপাসুদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসছে ওইসব এলাকায়। চরকুকরী-মুকরীর ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে রয়েছে হরিণ, বানর, বনমোরগসহ নানা জাতের সাপ ও বণ্যপ্রাণী। রয়েছে বন বিভাগের গবেষণা কেন্দ্র কিন্তু পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো কোনো স্থাপনা গড়ে ওঠেনি সেখানে। প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা অপার সৌন্দর্যের পাশাপাশি আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে চরফ্যাশনে নির্মিত হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন এই টাওয়ারটি।
চরফ্যাশন পৌরসভার মেয়র বাদল কৃষ্ণ দেবনাথ জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে চরফ্যাশন পৌরসভা খাসমহল মসজিদ ও ফ্যাশন স্কোয়ার সংলগ্ন স্থানে ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। টাওয়ারটির ডিজাইনার হচ্ছেন বিশিষ্ট স্থপতি কামরুজ্জামান লিটন। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এর কাজ শুরু হয়। এর মধ্যেই প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের শেষদিকে টাওয়ারটি উদ্বোধন করার সম্ভাবনা রয়েছে।
চরফ্যাশন পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ৭৫ ফুট মাটির নিচ থেকে ৭০টি পাথর ঢালাই পাইলিং ফাউন্ডেশনের ওপর নির্মিত টাওয়ারটি সম্পূর্ণ স্টিলের তৈরি। ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় ওই টাওয়ারের চূড়ায় ওঠার জন্য সিঁড়ির পাশাপাশি থাকবে ১৬ জন ধারণক্ষমতার অত্যাধুনিক ক্যাপসুল লিফট। টাওয়ারের চারদিকে অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ৫ মিলি ব্যাসের স্বচ্ছ গ্লাস থাকবে। এক হাজার বর্গফুটের ১৭তম তলায় থাকবে বিনোদনের নানা ব্যবস্থা।
একসঙ্গে দুইশ’ পর্যটক সেখান থেকেই শক্তিশালী বাইনোকুলারের সাহায্যে কুকরি-মুকরি, তারুয়া দ্বীপসহ চারপাশের একশ’ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত দেখতে পাবেন। এ ছাড়াও তাকবে বিশ্রাম, প্রাথমিক চিকিৎসা ও খাবারের সুব্যবস্থা। তিনি জানান, চরফ্যাশনের টাওয়ারটির মূল উচ্চতা ১৮৫ ফুট। এর ওপর রয়েছে ৩০ ফুট দীর্ঘ সুদৃশ্য ফলক। ঢাকার কারওয়ান বাজার হাসনা টাওয়ারের আর্কিটেক্ট ফোরাম নামের একটি প্রতিষ্ঠান ওই প্রকল্পের কনসালটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ইউনুছ-আল মামুন জয়েন্ট ভেঞ্চার সরকার স্টিল কারওয়ান বাজার, ঢাকা।
চরফ্যাশন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ কয়ছর আহাম্মেদ দুলাল জানান, এই টাওয়ারের স্বপ্নদ্রষ্টা ভোলা-৪ আসনের এমপি বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হিসেবে চরফ্যাশন ও মনপুরাকে সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত করে তুলতে চান। সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কুকরি-মুকরি, ঢালচরসহ আশপাশের বনাঞ্চলে ইকোপার্ক গড়ে তুলছেন। সেখানে ১০ কোটি ঢাকা ব্যয়ে পর্যটকদের জন্য অত্যাধুনিক বিলাসবহুল রেস্টহাউস করা হচ্ছে। সম্ভাবনাময় পর্যটন এলাকা চরফ্যাশনের প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগাতে পারলে শুধু বাংলাদেশই নয়, বিদেশ থেকেও বহু পর্যটক এখানে আসবেন। পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে সরকারও এখান থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে পারবে বলে মনে করছে এখানকার মানুষ।
দৃষ্টিনন্দন এই টাওয়ারের রূপকার পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপির কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে সুউচ্চ এই টাওয়ারের ৯০ ভাগ নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে টাওয়ারের মধ্যভাগে স্বচ্ছ গ্লাস যুক্ত ব্লু কালার লিফটের কাজ চলছে। টাওয়ারের স্ট্রাকচারে ত্রিমুখী ব্লু গ্লাসের কাজ চলমান। আগামী ৬ মাসের মধ্যে টাওয়ারের শতভাগ নির্মাণ কাজ শেষ হবে।