হাকালুকি হাওর(Hakaluki Haor) বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওর। এটি মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলায় অবস্হিত। মৌলভীবাজারের বড়লেখা, জুরী, কুলাউড়া এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় এর বিস্তৃতি। হাওরের আয়তন ১৮,১১৫ হেক্টর। উল্লেখ্য হাওর শব্দটি সংস্কৃত শব্দ ‘সাগর’এর বিকৃত রূপ বলে ধারণা করা হয়। অর্থাৎ হাওরের উৎপত্তি হয়েছে এভাবে – সাগর – সাওর – হাওর।
হাওরের নামকরণ নিয়ে বেশক’টি জনশ্রুতি আছে। কথিত আছে ত্রিপুরার মহারাজা ওমর মানিক্যের সেনাবাহিনীর ভয়ে বড়লেখার কুকি দলপতি হাঙ্গর সিং জঙ্গলপূর্ণ ও কর্দমাক্ত এলাকায় ‘লুকি দেয়’ অর্থাৎ লুকিয়ে থাকে। এই পরিপ্রেক্ষিতে কালক্রমে এই এলাকার নাম হয় ‘হাঙ্গর লুকি বা হাকালুকি’। এছাড়া বলা হয় প্রায় দু’হাজার বছর আগে প্রচন্ড এক ভূমিকম্পে ‘আকা’ নামে এক নৃপতি ও তাঁর রাজত্ব মাটির নিচে তলিয়ে যায়। এই তলিয়ে যাওয়া নিম্নভূমির নাম হয় ‘আকালুকি বা হাকালুকি’। শোনা যায় বড়লেখা উপজেলার পশ্চিমাংশে হেংকেল নামে একটি উপজাতি বাস করত। ঐ এলাকার নাম ছিল ‘হেংকেলুকি’ – যা পরে ‘হাকালুকি’ নাম ধারণ করে। অপর একটি জনশ্রুতি মতে, একসময় হাওরের কাছাকাছি বসবাসকারী কুকি ও নাগা উপজাতি তাদের ভাষায় এই হাওরের নামকরণ করে ‘হাকালুকি’- যার অর্থ লুকানো সম্পদ। হাকালুকিকে কাব্যের ছন্দে বর্ণনা নিম্মরূপ:
“কুঞ্জ কানন বন উপবন
গিরি-মালাকার সোচ্ছশির
হাওর সুবিশাল হাকালুকির
যথা তরঙ্গ -সাগরনীর।”
নামকরণঃ
“সাগর” শব্দটি থেকে “হাওর” শব্দের উৎপত্তি বলে ধরে নেয়া হয়।তবে “হাকালুকি” নামের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন লোককাহিনী রয়েছে:
জনশ্রুতিমতে, বহু বছর আগে ত্রিপুরার মহারাজা ওমর মানিক্যের সেনাবাহিনীর ভয়ে বড়লেখার কুকি দলপতি হাঙ্গর সিং জঙ্গলপূর্ণ ও কর্দমাক্ত এক বিস্তীর্ণ এলাকায় এমনভাবে লুকি দেয় বা লুকিয়ে যায় যে, কালক্রমে ঐ এলাকার নাম হয় “হাঙ্গর লুকি”, ধীরে ধীরে তা “হাকালুকি”-তে পর্যবসিত হয়। আরেকটি জনশ্রুতি অনুযায়ী প্রায় দুই হাজার বছর আগে প্রচন্ড এক ভূমিকম্পে “আকা” নামে এক রাজা ও তাঁর রাজত্ব মাটির নিচে সম্পূর্ণ তলিয়ে যায়। কালক্রমে এই তলিয়ে যাওয়া নিম্নভূমির নাম হয় “আকালুকি” বা হাকালুকি। আরো প্রচলিত যে, এক সময় বড়লেখা থানার পশ্চিমাংশে “হেংকেল” নামে একটি উপজাতি বাস করতো। পরবর্তিতে এই “হেংকেলুকি” হাকালুকি নাম ধারণ করে। এও প্রচলিত যে, হাকালুকি হাওরের কাছাকাছি একসময় বাস করতো কুকি, নাগা উপজাতিরা। তাঁদের নিজস্ব উপজাতীয় ভাষায় এই হাওরের নামকরণ করা হয় “হাকালুকি”, যার অর্থ ‘লুকানো সম্পদ’।
গুরুত্ব ও সংরক্ষণঃ
হাকালুকি হাওরকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা বিবেচনা করা হয়। এটি জলাভূমির সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক গুরুত্ব এবং টেকসই ব্যবহারের জন্য রামসার এলাকাহিসেবে এটি সংরক্ষিত।
উদ্ভিদবৈচিত্র্যঃ
হাকালুকি হাওরের স্থায়ী জলাশয়গুলোতে বিভিন্ন জাতের উদ্ভিদ জন্মে। এক সময়ের অন্যতম আকর্ষণীয়, ভাসমান বড় বড় গাছপালা (swamp forest) এখন আর নেই। চাতলা বিল-এ ছোট আকারের এরকম একটি বন আছে (২০০০ খ্রিস্টাব্দ)।
অবস্থানঃ
হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওর। এটি মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলায় অবস্হিত। মৌলভীবাজারের বড়লেখা, জুরী, কুলাউড়া এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় এর বিস্তৃতি