সিপ্পি আরসুয়াং (Sippi Arsuang) পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলার পূর্বপ্রান্তে ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষে মোটামুটি দুর্গম অঞ্চলে রোয়াংছড়িতে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের ১০ম সর্বোচ্চ চূড়া। যার উচ্চতা ২৯৩৯ ফুট।
বিভিন্ন আদিবাসীর ভাষায় এর নাম ভিন্ন ভিন্ন। বম জাতি বলে সিপ্পি, তঞ্চঙ্গারা বলে রামেতং, মার্মারা বলে রামাতং, পাংখোয়ারা বলে আরসুয়াং- যার অর্থ মোরগের ঝুঁটি। এ ছাড়া রামজুমসহ অনেক নামে ডাকে।
সিপ্পি পাড়া থেকে যে তিনটি চূড়া দেখা যায় তার দক্ষিণের চূড়াটি (বাম পাশের) সিপ্পি। মাঝেরটি আরসুয়াং। ডানেরটির নাম নেই। কেউ কেউ আবার দক্ষিণের টিকে সিপ্পি আরসুয়াংও বলে। তবে যত নামই থাকুক আমাদের কাছে এই পাহাড় পরিচিত সিপ্পি আরসুয়াং নামেই।
সিপ্পি যেতে আসতে সব মিলিয়ে আট ঘণ্টা লাগে। এখানে নাকি আগে ব্রিটিশদের একটা ক্যাম্প ছিল। রনিনপাড়ার আগমুহূর্তে একটা খাড়া পাহাড় বেয়ে নামতে হয়, ওটা থেকে সিপ্পি দেখা যায়। সিপ্পির চূড়া থেকে আশপাশের বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত পাহাড়রাজির সৌন্দর্য মন ভরে দেখা যায়।
সিপ্পি আরসুয়াং যাওয়ার রুট প্লান
যেহেতু শুধু পাহাড় সামিটই মূল লক্ষ্য তাই বর্ষায় না যাওয়াই ভাল। নভেম্বর থেকে মার্চ এর মধ্যে যাওয়া ভাল। এই পাহাড়ে যাওয়ার তিনটি রাস্তা আছে। যে কোনোটি দিয়ে গিয়ে অন্যটি দিয়ে ফেরা যাবে।
বান্দরবান – রোয়াংছড়ি- পাইক্ষ্যাং পাড়া – রনিন পাড়া – সিপ্পি ।
বেশীর ভাগই এই পথে যায়। এই পথটি পরিচিত ও একটু সহজ। বান্দরবান থেকে প্রথমে রোয়াংছড়ি যেতে হবে। রোয়াংছড়ি থেকে পাইক্ষ্যাং পাড়া যেতে হবে সময় লাগবে ৩ ঘন্টার মত। পাইক্ষ্যাং পাড়া থেকে রনিন পাড়া ২.৪০ ঘন্টার মত লাগবে। রনিনপাড়া থেকে সিপ্পি চুড়ায় যেতে ৪ ঘন্টার মত লাগবে।
বান্দরবান – রোয়াংছড়ি – ব্যাঙছড়ি পাড়া – ব্যাঙছড়ি বাজার – অংজাই পাড়া – লুংলাইন পাড়া – তারাছা পাড়া – প্রতিক্যা কারবারী পাড়া – নাইন স্টেপ পাহাড় – পুরান ফাংপুড়ি পাড়া – সিপ্পি পাড়া – সিপ্পি
বান্দরবান থেকে প্রথমে রোয়াংছড়ি যেতে হবে। রোয়াংছড়ি থেকে ফরেস্ট অফিস হয়ে ব্যাঙছড়ি পাড়া যেতে হবে সময় লাগবে ১.৩০ ঘন্টার মত। ব্যাঙছড়ি পাড়া থেকে ব্যাঙছড়ি বাজার ১০ মিনিটের পথ। ব্যাঙছড়ি বাজার থেকে অংজাই পাড়া ১৫ মিনিট। অংজাই পাড়া থেকে লুংলাইন পাড়া ১.৪০ ঘন্টার মত। লুংলাইন পাড়া থেকে তারাছা পাড়া ১.৪০ ঘন্টার মত। তারাছা পাড়া থেকে প্রতিক্যা কারবারী পাড়া ১ ঘন্টার মত। প্রতিক্যা কারবারী পাড়া থেকে পুরান ফাংপুড়ি পাড়া ৩ ঘন্টার মত। পুরান ফাংপুড়ি পাড়া থেকে সিপ্পি পাড়া ৩০ মিনিটের মত। সিপ্পি পাড়া থেকে সিপ্পি পাহাড়ের চুড়ায় উঠতে সময় লাগবে ১.৪০ ঘন্টার মত।
বান্দরবান – রুমা – মুন নৌয়াম পাড়া- পাইন্দু খাল – বিল পাড়া – সাইজাম পাড়া- সিপ্পি পাড়া – সিপ্পি
বান্দরবান থেকে প্রথমে রুমা বাজার যেতে হবে। বাসে বা চাঁদের গাড়িতে যেতে পারবেন। রুমা বাজার থেকে মুন নৈয়াম পাড়া হয়ে যেতে হবে।
প্ল্যান একঃ
- দিন ০. ঢাকা – বান্দরবান
- দিন ১. বান্দরবান – রোয়াংছড়ি- পাইক্ষ্যাং পাড়া- রনিন পাড়া
- দিন ২. রনিন পাড়া- সিপ্পি – রনিন পাড়া
- দিন ৩. রনিন পাড়া – পাইক্ষ্যাং পাড়া – রোয়াংছড়ি –বান্দরবান – ঢাকা
প্ল্যান দুইঃ
- দিন ০. ঢাকা – বান্দরবান
- দিন ১. বান্দরবান – রোয়াংছড়ি – ব্যাঙছড়ি পাড়া- ব্যাঙছড়িবাজার – অংজাই পাড়া- লুংলাইন পাড়া – তারাছা পাড়া- প্রতিক্যা কারবারী পাড়া
- দিন ২. প্রতিক্যা কারবারী পাড়া – নাইন স্টেপ পাহাড়- পুরান ফাংপুড়িপাড়া – সিপ্পি পাড়া – সিপ্পি -রনিনপাড়া
- দিন ৩. রনিন পাড়া – পাইক্ষ্যাং পাড়া – রোয়াংছড়ি –বান্দরবান – ঢাকা
প্ল্যান তিনঃ
- দিন ০. ঢাকা – বান্দরবান
- দিন ১. বান্দরবান – রুমা- মুন নৌয়াম পাড়া- পাইন্দু খাল – বিল পাড়া – সাইজাম পাড়া
- দিন ২. সাইজাম পাড়া- সিপ্পি পাড়া – সিপ্পি – রনিন পাড়া
- দিন ৩. রনিন পাড়া – পাইক্ষ্যাং পাড়া – রোয়াংছড়ি –বান্দরবান – ঢাকা
ঢাকা থেকে বান্দরবান বাস ভাড়া নন এসি ৬২০টাকা। এসি ৭৫০-৯৫০ টাকা । ঢাকা থেকে শ্যামলী ,সেন্ট মার্টিন্স , সাউদিয়া , বি আর টি সি ,ডলফিন সহ অনেক বাস যায়। চট্রগ্রাম থেকে বাসে বান্দরবান যেতে পারবেন। বহদ্দারহাট থেকে পূরবী ও পূর্বানী বাস যায়। ভাড়া ১১০ টাকা।
সিপ্পি আরসুয়াং কিভাবে যাবেন ?
বান্দরবান থেকে রোয়াংছড়ির দুরত্ব ১৯ কিঃমিঃ । বান্দরবান শহর থেকে বাস বা সি এন জিতে করে যেতে পারবেন। বাস জন প্রতি ৬০ টাকা । সকাল ৮ তা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রতি ঘন্টা পরপর উভয় দিক থেকে বাস ছেড়ে যায়। সময় লাগবে ১.৩০ ঘন্টার মত।। সি এন জিতে ৫ জন বসতে পারবেন । তবে পাঁচ জন বসলে পাহাড়ী উচু নিচু রাস্তার কারনে দুই জনকে দুইবার কিছু জায়গা হেঁটে পার হতে হবে। ভাড়া নিবে ৫০০-৬০০টাকা। সময় লাগবে ১ ঘন্টার মত।
গাইডঃ
গাইড মূলত রোয়াংছড়ি থেকে নিতে হবে। এখানে রুমা বা থানছির মত গাইড নেই। আগে যোগাযোগ করে আসলে ভাল। রনিন পাড়া হয়ে গেলে সিপ্পি সামিটের দিন এই পাড়া থেকেও ১ দিনের জন্য গাইড নিতে হবে। আর সিপ্পি পাড়া হয়ে গেলে সামিটের জন্য সিপ্পিপাড়া থেকে গাইড নিতে পারবেন। সিপ্পি পাড়ার কারবারীর ছেলে রুনরেম সাং – ০১৮৬২০১১৮৫২ বা রাওউয়াক ভাইকে নিতে পারেন। গাইড এর টাকা আলোচনা সাপেক্ষ্যে। আর রুমা হয়ে গেলে রুমা বাজার থেকে গাইড নিতে পারবেন। এই দিকে গাইডের হিসেব আলাদা। টাকার ব্যাপার আলোচনা করে নিবেন। রোয়াংছড়ি থেকে গাইড হিসেবে নিতে পারেন: জোসেফ – ০১৫৫৩৬৪৮১৬৯, লালক্রোস – ০১৫৫৭৩৭৫৭০৬, আইডম – ০০০০০০, রুয়াল ১ – ০১৫৫৮৬১৪৩৬৩, রুয়াল ২- ০০০০০০, জেমসন – ০১৮৭৯৫১৫০৮২।
কোথায় থাকবেনঃ
বান্দরবান শহরে থাকার অনেক আবাসিক হোটেল আছে। রোয়াংছড়িতে দুইটি আবাসিক হোটেল আছে। রুমা বাজারে কয়েকটি আবাসিক হোটেল আছে। পাহাড়ের ভিতরে আদিবাসীদের ঘরে থাকতে পারবেন।
কোথায় খাবেনঃ
বান্দরবান শহরে,রোয়াংছড়ি ও রুমা বাজারে খাবার হোটেল আছে । পাহাড়ে আদিবাসীদের ঘরে নিজেদের রান্না করে খেতে হবে । যাবার সময় তেল মসলা আলু পিঁয়াজ নিয়ে যেতে হবে।
এত সুন্দর করে, বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।