মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর অনেক নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এমনি একটি দর্শনীয় স্থান ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের বারোবাজার। কালের বিবর্তনে টিকে থাকার পাশাপাশি গৌরব ভরে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে এখানকার কীর্তিগুলো। এগুলোর একটি সাতগাছিয়া মসজিদ।
সাতগাছিয়া আদিনা মসজিদ(Satgachia Mosjid) বা সাতগাছিয়া গায়েবানা মসজিদ বাংলাদেশের প্রাচীন মসজিদ ও প্রত্নতাত্তিক স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম। আয়তকার এ মসজিদটি বারোবাজারে আবিষ্কৃত মসজিদগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ।
সাতগাছিয়া মসজিদ ঝিনাইদহ জেলার বারোবাজার এ অবস্থিত (কালিগঞ্জ উপজেলার কষ্টভঙ্গ ইউনিয়ন থেকে প্রায় ৬ কিমি পশ্চিমে)। সম্ভবত পনেরো শতকের শেষভাগে নির্মিত বা মুগলপূর্ব যুগের এ মসজিদটি ১৯৭৮ সালের প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে সাতগাছিয়ার গ্রামবাসীর সামনে উন্মোচিত হয়। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এ অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য চলে এবং বর্তমানে সাতগাছিয়া মসজিদটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর – এর অধীনে একটি সংরক্ষিত ইমারত।
আয়তাকার সাতগাছিয়া মসজিদটির প্রতি দেয়ালের পুরুত্ব ১.৫ মিটার এবং দেয়ালের প্রতি বাহুর দৈর্ঘ্য উত্তর-দক্ষিণে ২৪.২৫ মি. ও পূর্ব-পশ্চিমে ১৮.৫৫ মিটার। মসজিদের পূর্বদিকে ছিল সাতটি খিলান বিশিষ্ট প্রবেশদ্বার। এ ছাড়াও দক্ষিণে ছিল পাঁচটি, উত্তরে ছিল তিনটি প্রবেশদ্বার ও দু’টি কুলুঙ্গি এবং পশ্চিমদিকে ছিল একটি বন্ধ প্রবেশদ্বার। মসজিদের মূল ইমারতটি ৩৫ গম্বুজ বিশিষ্ট ছিল বলে প্রতীয়মান হয়। এর প্রার্থনা কক্ষটি ৭টি আইল ও পাঁচটি বে তে বিভক্ত এবং ৬ সারিতে মোট চারটি করে ২৪টি নিরাবলম্ব স্তম্ভে বিন্যাস্ত। চারকোণের চারটি স্তম্ভ ছিল গোলাকার টারেটে আচ্ছাদিত। ৩৫ গম্বুজ বিশিষ্ট সাতগাছিয়া মসজিদটির সঙ্গে ষাটগম্বুজ মসজিদের সাদৃশ্য বিদ্যমান।
মসজিদের সাতটি মিহরাবের মধ্যে চারটি এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়েছে এবং এগুলি শেকল ও ঘন্টা, সূর্যমুখী ফুল, গোলাপ প্রভৃতির সমৃদ্ধ নকশা দ্বারা অলংকৃত। কেন্দ্রীয় মিহরাবের উত্তর দিকে একটি বন্ধ প্রবেশদ্বার রয়েছে। এটি ষাটগম্বুজ মসজিদের প্রবেশদ্বারের সঙ্গে খুবই সাদৃশ্যপূর্ণ।
কিভাবে যাবেন
রাজধানী থেকে খুব সহজে এখানে যাওয়া যায়। যশোর থেকে বারোবাজারের দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। রাজধানী থেকে বিভিন্ন পরিবহনের এসি ও নন-এসি বাসে চড়ে সরাসরি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় পৌঁছানো যায়। ঝিনাইদহ হয়ে কালীগঞ্জ যাওয়ার দূরপাল্লার বাসের মধ্যে রয়েছে ঝিনাইদহ লাইন, দর্শনা ডিলাক্স, চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স, রয়েল ও সোনার তরী। চাইলে ট্রেন কিংবা বিমানযোগেও যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে যশোর নামতে হবে। যশোর থেকে সরাসরি বাস বা সিএনজি অটোরিকশায় বারোবাজার যেতে পারেন। বারোবাজার থেকে পাঁচ কিলোমিটার পশ্চিমে সাতগাছিয়া গ্রামে মসজিদটি অবস্থিত।