কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান (Sholakia Eidgah)। প্রতিবছর এ ময়দানে ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আজহার নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। কালের স্রোতে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানটি পরিণত হয়ে উঠেছে একটি ঐতিহাসিক স্থানে। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় এখানে। এ ময়দানের বিশাল জামাত গৌরবান্বিত ও ঐতিহ্যবাহী করেছে কিশোরগঞ্জকে।
বর্তমানে এখানে একসঙ্গে তিন লক্ষাধিক মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করেন। নামাজ শুরুর আগে শর্টগানের ফাঁকা গুলির শব্দে সবাইকে নামাজের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সঙ্কেত দেওয়া হয়। কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্বে নরসুন্দা নদীর তীরে এর অবস্থান।
ইসলামের ঐশী বাণী প্রচারের জন্য সুদূর ইয়েমেন থেকে আগত শোলাকিয়া ‘সাহেব বাড়ির’ পূর্বপুরুষ সুফি সৈয়দ আহমেদ তার নিজস্ব তালুকে ১৮২৮ সালে নরসুন্দা নদীর তীরে ঈদের জামাতের আয়োজন করেন।ওই জামাতে ইমামতি করেন সুফি সৈয়দ আহমেদ নিজেই।
অনেকের মতে, মোনাজাতে তিনি মুসলি্লদের প্রাচুর্যতা প্রকাশে ‘সোয়া লাখ’ কথাটি ব্যবহার করেন। আরেক মতে, সেদিনের জামাতে ১ লাখ ২৫ হাজার (অর্থাৎ সোয়া লাখ) লোক জমায়েত হয়। ফলে এর নাম হয় ‘সোয়া লাখি’ । পরবর্তীতে উচ্চারণের বিবর্তনে শোলাকিয়া নামটি চালু হয়ে যায়। আবার কেউ কেউ বলেন, মোগল আমলে এখানে অবস্থিত পরগনার রাজস্বের পরিমাণ ছিল সোয়া লাখ টাকা। উচ্চারণের বিবর্তনে সোয়া লাখ থেকে সোয়ালাখিয়া সেখান থেকে শোলাকিয়া।
পরবর্তিতে ১৯৫০ সালে স্থানীয় দেওয়ান মান্নান দাদ খাঁ এই ময়দানকে অতিরিক্ত ৪.৩৫ একর জমি দান করেন।
বর্তমান শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের আয়তন ৭ একর। নরসুন্দা নদীর তীরে শোলাকিয়ার অবস্থান। বর্তমানে শোলাকিয়ার পূর্বপ্রান্তে দু’তলা একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এই ঈদগাহ মাঠটি চারপাশে উচু দেয়ালে ঘেরা হলেও মাঝে মাঝেই ফাঁকা রাখা হয়েছে যাতে মানুষ মাঠে প্রবেশ ও বের হতে পারে।
এছাড়া এই মাঠের প্রাচীর দেয়ালে কোনো দরজা নেই। শোলাকিয়া মাঠে ২৬৫ সারির প্রতিটিতে ৫০০ করে মুসল্লি দাঁড়াবার ব্যবস্থা আছে। ফলে মাঠের ভেতর সবমিলিয়ে এক লাখ বত্রিশ হাজার ৫০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।
তবে ঈদুল ফিতরের সময় দেখা যায়, আশপাশের সড়ক, খোলা জায়গা, এমনকি বাড়ির উঠানেও নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। এভাবে সর্বমোট প্রায় তিন লাখ মুসল্লি ঈদের নামাজ পড়ে থাকেন। এবং এই মুসল্লির এই সংখ্যা প্রতিবছর বেড়ে চলেছে। শোলাকিয়া ঈদগাহ’র ব্যাবস্থাপনার জন্য ৫১ সদস্যের কার্যনির্বাহী কমিটি রয়েছে। ঈদের নামাজের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতিমূলক কর্মকান্ড এই কমিটি করে থাকে।
শোলাকিয়া ঈদগাহে কিভাবে যাবেনঃ
গুলিস্তান থেকে প্রতি ঘণ্টায় কিশোরগঞ্জের বাস ছাড়ে ঈঁশাখা সার্ভিস, মহাখালী থেকে কিশোরগঞ্জ ট্রভেলস, অনন্যা, ডিজিটাল অনন্যা, এগারসিন্দুর, হাওড় বিলাস।
এছাড়া সায়েদাবাদ থেকে গেইটলক ঈশা খাঁ বাস সার্ভিস ভাড়া ১৫০ টাকা। যাতায়াত পরিবহনের বিআরটিসি’র বাস ছাড়ে কমলাপুর গোলাপবাগ থেকে ২০০ টাকা ভাড়ায় আড়াই ঘন্টায় কিশোরগঞ্জ যাওয়া যায়।
তাছাড়া সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে ঢাকা কমলাপুর রেলষ্টশন থেকে এগারসিন্দুর এক্সপ্রেসে কিশোরগঞ্জ যাওয়া যায় ছুটির দিনে তিন ঘণ্টায় পেঁছোনো যায় কিশোরগঞ্জ। ট্রেনে সুভন চেয়ার ভাড়া ১৪০ টাকা, সুভন শ্রেণীর ভাড়া ১২০ টাকা। তারপর মাত্র ১৫/২০ টাকার রিকশা ভাড়ায় শোলাকিয়া ঈদগাহ।