মসজিদটি দেখার জন্য দেশ-বিদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে-প্রতিদিন এখানে অনেক মানুষের আগমন ঘটে। তবে এই ঐতিহ্যবাহী শাহী মসজিদটি(Shailkupa Shahi Mosjid) কত সালে নির্মিত তার সঠিক তথ্য বলা সম্ভব নয়। লোকমুখে জানা যায়, সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের যোগ্য উত্তরাধিকারী সুলতান নাসির উদ্দিন নুসরত শাহর- শাসনামলে এটি নির্মিত। তবে ইতিহাসবিদদের ধারণামতে, ১৫১৯ সালে পিতার দুঃখজনক মৃত্যুর পর নাসির উদ্দিন নুসরত শাহ বাংলার সিংহাসনে বসেন। ১৫৩২ পর্যন্ত রাজকর্মে রাজধানী গৌড় থেকে ঢাকা যাবার পথে তিনি বেশ কয়েকদিন শৈলকুপায় অবস্থান করেন। সুলতান নাসির উদ্দিনের সঙ্গে তার ধর্মপরায়ণ দরবেশ আরব শাহ ছিলেন। শৈলকুপার পারিপার্শ্বিক অনুপম সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে দরবেশ আরব শাহ এখানে থেকে যাবার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। হাকিম খান ও সৈয়দ আব্দুল কাদের বাগদাদী নামে আরব শাহের দুই শিষ্যসহ তিনজন শৈলকুপা শহরে থাকার পক্ষে মত দেন। সুলতানের নির্দেশে মসজিদ সংস্কার, সংরক্ষণ ও পরিচালনার জন্য কয়েকশ’ বিঘা জমি মসজিদের নামে ওয়াকফ করে দেয়া হয়। ৬ গম্বুজ বিশিষ্ট উত্তর দক্ষিণ-লম্বা মসজিদটির আয়তন ভিতরের দিক ৩১*২১ ফুট এবং বাইরের দিকে ৪৩*৩৬ ফুট। দেয়ালগুলা প্রায় সাড়ে ৫ ফুট প্রশস্থ। পূর্ব দেয়ালের ২টি করে মোট ৭টি করে প্রবেশ পথ আছে। পূর্ব দেয়ালের কেন্দ্রীয় প্রবেশ পথের উত্তর পাশে ১টি করে সরু মিনার আছে। এগুলো কোণের মিনারের চেয়ে কিছুটা বাঁকানো। ভিতরে পশ্চিম দেয়ালে ৩টি মেহরাব আছে। পাশের ২টি থেকে কেন্দ্রীয় মেহরাবের আকারে একটু বড়। ভিতরে ৫ ফুট উঁচু- ২টি প্রস্তর স্তম্ভ ও চার পাশের দেয়ালের ওপর নির্মিত হয়েছে- ৬টি গম্বুজ। চারকোণে আছে ৪টি মিনার। এগুলো গোলাকার এবং বলয় রেখা দ্বারা অলংকৃত। এ মসজিদে এত সংস্কার ও সংযোজন হয়েছে যে, এর আদি কাঠামো কি ছিল তা সঠিকভাবে নিরুপণ করা সহজ নয়। কেন্দ্রীয় প্রবেশ পথ ও কোণের মিনারগুলো সম্ভবতঃ পরবর্তীকালের সংযোজন। তবে এটি যে সুলতানী আমলের মসজিদ তা সহজেই বোঝা যায়। মসজিদের পূর্ব দিকে অনুচ্চ প্রাচীর বেষ্টিত (৪৫/৩০ ফুট) একটি মাজার আছে। স্থানীয় লোকদের মতে এটি শাহ্ মোহাম্মদ আরিফ-ই-রব্বানী ওরফে আরব শাহ্’র মাজার। এ মাজারের কাছে আরও ছয়জন আউলিয়ার মাজার আছে।
অবস্থানঃ
ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া জেলার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত হাজার বছরের পুরার্কীতি ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ।