সেদিন ছিল ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। কঠিন রাজনৈতিক অবস্থার মুখোমুখি থেকে ও আইয়ুবী শাসক গোষ্ঠির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে জীবন বাজি রেখে সে সময় নোয়াখালী জেলার হাতেগোনা কয়েকজন স্কুলপড়ুয়া ছাত্র ও তরুণ মিলে এক অজপাড়াগাঁয়ে কাদামাটি দিয়ে শহীদ মিনার(Shaheed Minar) স্থাপন এবং শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যদিয়ে প্রথম শহীদ দিবসটি পালন করেন। বেগমগঞ্জ হাইস্কুলের ম্যাট্রিক পরীক্ষার্থী কয়েকজন ছাত্র ‘নুরূল আমিনের কল্লা চাই’, ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’— ‘শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’— এ শ্লোগান দিয়ে বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কমরেড নুরুল হক চৌধুরী মেহেদীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক জিএম মরহুম আবদুল জলিল, টিএন্ডটি এসডিই মরহুম মোঃ হানিফ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা প্রয়াত শান্তি রঞ্জন কর্মকার ও চৌমুহনীর চক্ষু চিকিত্সক মরহুম আবুল খায়েরসহ আরো কয়েকজন কাজীর হাইস্কুলের মাঠে একুশের রাতে জড়ো হন। তারা সকলে মিলে কাজিরহাট হাইস্কুলের মাঠে কাদামাটি দিয়ে তৈরি করেন শহীদ মিনার। এটিই ছিল জেলার প্রথম শহীদ মিনার ও শহীদ দিবস পালন। সেদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তখনকার তরুণ ছাত্র ও আজকের বয়োবৃদ্ধ কমরেড মেহেদী আবেগাপ্লুত হয়ে স্মরণ করেন তার এক শিক্ষক মরহুম মাস্টার আবদুল করিমকে। এ শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় তিনি ও তার সহপাঠিরা নানা প্রতিকূল অবস্থার মধ্যদিয়ে প্রথম শহীদ মিনারটি স্থাপন করে শহীদ দিবস পালন করেছিলেন।
পরবর্তী সময়ে ১৯৬৯ সালে ইট-সিমেন্ট দিয়ে ঐ শহীদ মিনারটি স্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয়েছিল। তিনবার স্থান পরিবর্তনের পর এটি কাজীরহাট শহীদ আমানউল্যাহ উচ্চ বিদ্যালয় সম্মুখে স্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয়েছে। জেলার প্রবীণ রাজনীতিবিদ সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মোঃ হানিফ জানিয়েছেন, ‘৫২-‘৫৩ সালের দিকে কাজিরহাট এলাকার মানুষ রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত সচেতন ও সংগঠিত ছিল। সেজন্য সম্ভব হয়েছিল শহীদ মিনার তৈরি ও শহীদ দিবস পালন। চৌমুহনী কলেজের একসময়ের মেধাবী ছাত্র, সাবেক সচিব ও পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোঃ সিরাজউদ্দিন জানিয়েছেন, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির পর বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষায় প্রতিষ্ঠার দাবিতে ছাত্র-জনতাকে সংগঠিত করার জন্য চৌমুহনী কলেজের আইএ ২য় বর্ষ মানবিকের ছাত্র ফজলুল করিম চৌমুহনী বাজারে সমাবেশ করতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। গ্রেফতারের পর তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে একবছর বন্দী রাখা হয়। ‘৫৩ সালের শেষের দিকে তিনি মুক্তি পান। মরহুম ফজলুল করিম জেলায় ভাষা আন্দোলনকারীদের মধ্যে প্রথম একমাত্র গ্রেফতারকৃত ভাষা সৈনিক। তিনি পরে অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলা পত্রিকার ঢাকা সিটির প্রধান প্রতিবেদক ছিলেন।