রোজ গার্ডেন(Rose Garden) পুরানো ঢাকার টিকাটুলিতে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক বাড়ি। ১৯৩০ সালের প্রথম দিকে জমিদার হূষিকেশ দাস সাত একর জমির উপরে এই অট্টালিকাটি নির্মাণ করেন এবং বাড়ির চারপাশে ফুলবাগান ও অন্যান্য গাছগাছালিতে দৃষ্টিনন্দিত পরিবেশ সৃষ্টি করেন।
গোলাপের জন্য ভবনটির নাম রোজ গার্ডেন হলেও এখন রোজ গার্ডেনে গোলাপ খুব কমই দেখা যায়। তবে মৌসুমি ফুলের অভাব নেই। সেই সাদা-রঙা বিশাল অট্টালিকা বুক টানটান করে দাঁড়িয়ে। ডানদিকে চমৎকার ঘাটলার পুকুরটি আগের মতোই আছে। বাগানের মার্বেল পাথরের মূর্তিগুলো কতটা ঝকঝকে তকতকে, চোখে না দেখলে বোঝার উপায় নেই।
বাগানের মধ্যেখানে একটি কৃত্রিম ফোয়ারা ছিল, যা এখনো আছে। ফোয়ারা দিয়ে আগের মতো পানি বের হয় না, বলা যায় নষ্ট হয়ে গেছে। ওপরের বা দোতলার নাচঘর, নীচের বৈঠকখানাসহ উপর-নীচের মোট ১৩টি ঘর, আর শ্বেত পাথরের মূর্তি। পেছনের ভবন, আর কর্মচারীদের থাকার কক্ষ। রোজ গার্ডেন লাগোয়া যে বাড়িটি সেখানে থাকেন কাজী রাকিব পরিবার। পুরানো দিনের অনেক সিনেমা লক্ষ্য করলে রোজ গার্ডেনের সঙ্গে এই বাড়িটিও নজর কাড়ে।
নির্মাণশৈলীর অভিনবত্বে এই ভবনটি অনন্য। এর ভিত্তির উপর ছয়টি বিভিন্ন উচ্চতার খাঁজকাটা থাম রয়েছে। এগুলির শীর্ষাংশ লতাপাতার নকশা করা। এই ছয়টি থামকে নিয়ে নির্মিত সম্পূর্ণ অট্টালিকাটি পাঁচটি অংশে বিভক্ত। ভবনের মধ্যভাগের তিনটি অংশের প্রবেশদ্বারের উপরের খিলানগুলি ঢালাইকৃত এবং অর্ধবৃত্তাকারের। দুপাশের দুঅংশের ছাদের নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রায় বৃত্তাকার চাঁদোয়ারীসদৃশ, যা মধ্যবর্তী অংশটিকে ঘিরে রেখেছে। ভবনের মূল বারান্দার সাথে রয়েছে অর্ধচন্দ্রাকৃতির ব্যালকনি, এর অবস্থান প্রবেশপথের তিনটি খিলানের উপরে। প্রাসাদে যানবাহন প্রবেশ করে পূর্বদিক থেকে, সেদিক থেকে রাস্তা এসে মিলেছে পোর্টিকোতে। উদ্যানের শোভা উপভোগের জন্য ভবনের প্রতিটি অংশে ঢালাইকৃত লোহার ব্রাকেটের উপর বর্গাকৃতির অবস্থান। এর শীর্ষ গম্বুজ আকৃতির সেখানে ঝাড়লণ্ঠন ঝুলিয়ে রাখা হয়।
ভবনটির সকল প্রবেশদ্বার কাঠ, রঙিন বেলজীয় কাঁচ ও লোহার সমন্বয়ে তৈরি এবং সেগুলি জটিল জ্যামিতিক নকশা, লতাপাতা ও বিভিন্ন প্রাণীর মোটিফে অলংকৃত। উপর তলায় শ্বেত পাথরের মেঝের পরে রয়েছে এক বিশাল বলরুম। এর সিলিং জুড়ে রয়েছে সবুজ কাচ দিয়ে তৈরি ফুলের নকশা। বলরুমের সামনে ছাদে যাওয়ার জন্য একটি নকশাকাটা পেঁচানো সিঁড়ি বসানো হয়েছে। ঘুরানো সিড়ির সমান্তরালে জমাটবাঁধা সিমেন্টের রেলিং-এ রয়েছে বিভিন্ন জ্যামিতিক নকশা।
প্রায় সাত হাজার বর্গফুট আয়তনের সুউচ্চ প্রাচীরবেষ্টিত পশ্চিমমুখী এই অট্টালিকাটি প্রায় পঁয়তাল্লিশ ফুট উঁচু। এর সম্মুখ ভাগ অন্যান্য সকল দিকের চাইতে আকর্ষণীয়। সাধারণ মানের পার্শ্ববর্তী বর্ধিত অংশের ঢালু ছাদ পূর্ব ও পশ্চিমের ত্রিকোণাকৃতির চাঁদোয়ারীর সাথে মিশেছে যা উপনিবেশিক স্থাপত্যরীতির পরিচায়ক। অট্টালিকাটির বাইরের দেয়ালের অধিকাংশই গোলাপি রঙে রঞ্জিত ছিল। তবে কালের বিবর্তনে সেখানকার রং বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে।
গাড়ি পার্কিংঃ মূল ফটকের প্রবেশপথে ও ভেতরে ১০ টি গাড়ি পার্কিং করা যায়। পার্কিং এর জন্য আলাদা কোন চার্জ দিতে হয় না।
সময়সূচীঃ প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত রোজ গার্ডেন দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। রোজ গার্ডেনের কোন সাপ্তাহিক বন্ধ নেই। তবে শুটিং চলাকালীন সময়ে দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না।
কিভাবে যাবেন-
দেশের যে কোন প্রান্তে থেকে চলে আসুন গুলিস্তান। তারপর রিকশায় টিকাটুলির কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেন। রিকশাওয়ালাকে বলতে হবে হুমায়ূন সাহেবের বাড়ি। রোজ গার্ডেন থেকে অল্প দূরত্বে বলধা গার্ডেন, পাশেই খ্রিষ্টান কবরস্থান। তাছাড়া পুরান ঢাকার অন্যান্য দর্শনীয় স্থান ও বিখ্যাত সব খাবার তো আছেই।