রাজার পাহাড় – শ্রীবরদী

পাহাড় আর নদী ঘেরা শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়। এটি সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি। মেঘালয় ঘেঁষা অবারিত সবুজের সমারোহ নিয়ে এ গারো পাহাড়ের অবস্থান। এখানে রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য টিলা। কত যে মনোমুগ্ধকর না দেখলে হয়তোবা বিশ্বাস হবেনা। যারা দৃশ্যগুলো অবলোক করেছেন তারাই অনুভব করতে পেরেছেন। গারো পাহাড়ের অন্যতম আকর্ষনীয় সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র রাজার পাহাড়(Rajar Pahar)। এখানে কেউ একবার এলে বার বার আসতে মনকে নাড়া দেবে।

এ রাজার পাহাড় নিয়ে কিংবদন্তি রয়েছে। প্রাচীনকালে সম্ভ্রান্ত রাজ বংশের জনৈক এক রাজার অবস্থানের নামে এখানকার নাম হয় রাজার পাহাড়। রাজার পাহাড়ের আগের সেই সৌন্দর্য নেই। তবে এর বৈশিষ্ট্য প্রতিবেশি পাহাড় গুলোর তুলনায় ব্যাতিক্রমী। গারো পাহাড়ের যতগুলো পাহাড় রয়েছে তার মধ্যে রাজার পাহাড়ের উচ্চতা সবচেয়ে বেশি। এর চূড়ায় রয়েছে শতাধিক হেক্টর জমির সমতল ভূমি। সবুজ আর নীলের সংমিশ্রনে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আকাশ ছোঁয়া বিশাল পাহাড়। এর নৈশর্গিক দৃশ্য মনকে করে আবেগ তাড়িত। প্রাকৃতিকভাবেই গড়ে ওঠেছে এ পাহাড়। প্রায় দেড়শ ফুট উচুঁ টিলার ওপর থেকে দেখা যায় ভারতের অনেক কিছু। এখানে প্রায়ই শতশত মানুষের ভিড়ে হয়ে ওঠে কোলাহলপূর্ন। এ পাহাড় পর্যটন কেন্দ্র হলে ভ্রমন পিপাসুদের চাহিদা পূরণে যোগ হবে নতুন মাত্রা। দেশে পর্যটন শিল্প উন্নয়নে আয় হবে বছরে লাখ লাখ টাকা। এখানাকার আদিবাসী বেকারদের হবে কর্মের সংস্থানের নতুন পথ। দেশি বিদেশী পর্যটকদের পদভারে আরো মুখরিত হয়ে ওঠবে এ রাজার পাহাড়। সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে এলাকাবাসী , ভ্রমন পিপাসু, পর্যটক, স্থানীয় জনপ্রনিধি ও প্রশাসনসহ বিভিন্ন সূত্রের সাথে কথা বলে ওঠে আসে এমনি চিত্র।

শ্রীবরদী শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে রাজার পাহাড়। এটি মানুষের জন্য বিনোদন স্পটে পরিচিত। বছরের প্রায় সব সময়ই শহর থেকে এ রাজার পাহাড়ের নির্মল পরিবেশে বেড়াতে আসে শতশত মানুষ। এর পাশে আদিবাসী জনপদ বাবেলাকোনা। এটি যেন অসংখ্য উচু টিলায় ঘেরা অন্যবদ্য গ্রাম। প্রাচীন কাল থেকে এখানে গড়ে ওঠেছে জনবসতি। ঝোঁপ জঙ্গঁলে আবৃত্ত গ্রামটি কালের আবর্তনে পরিচিত। আজ প্রাকৃতিক শোভা মন্ডিত সবার কাছে পরিচিত বাবেলাকোনা রাজার পাহাড়। পাগলা দারোগা নামে জনৈক এক ব্যাক্তি এ রাজার পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে বসবাস করেন। তিনি ১৯৮০ সালে মারা গেছেন। তার ছেলে মেয়েরা এখানেই রয়েছে। তারা টিলার এক কোনায় গড়ে তুলেন কাঠাল , লিচু ও কলার বাগান। অপূর্ব সৌন্দর্য মন্ডিত এ রাজার পাহাড়ের চারিদিকে আছে হরেক রকম প্রজাতির গাছ গাছালি। এর চূড়ার বিশাল সমতল ভূমিতে যেতে সুরু পথ আর অদ্ভুত এক নির্জন পরিবেশ আপনাকে যাওয়ার আগে মুগ্ধ করবেই।

রাজার পাহাড়ের পাশেই বাবেলাকোনায় গারো , হাজং, কোচ অধ্যুষিত আদিবাসীদের সংস্কুতির ভিন্নমাত্রায় বৈচিত্রপূর্ন্য জীবনধারা। প্রাকৃতিক বিরুপতা জংঙ্গল আর জন্তু জানোয়ারের মিতালীতে এ জনপদের চলমান জীবন সংগ্রামের বিরল দৃশ্য। আদিবাসীদের সংস্কৃতি, সংরক্ষন ও চর্চার কেন্দ্র হিসেবে রয়েছে বাবেলাকেনা কালচারাল একাডেমি, যাদুঘর, লাইব্রেরী, গবেষনা বিভাগও মিলনায়তন এর নিদর্শন। বাবেলাকোনা গ্রামে উপজাতীদের কারুকার্য মন্ডিত ধর্মীয় গীর্জা, মন্দির, উপাসনালয় ও অসংখ্য প্রাকৃতিক নির্দশনের সমাহার। এখান থেকে আদিবাসীদের সম্পর্কে জানা যায় অনেক কিছুই। মিশনারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ,সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় হচ্ছে এখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আদিবাসী সম্প্রদায়ের চালচলন, কথাবার্তা, ও জীবন প্রনালী দর্শনার্থীদের আরো আকৃষ্ট করে। ওদের সংস্কৃতিতে রয়েছে ভিন্নতা। ওদের জীবন যেন প্রবাহিত ভিন্ন এক ধারায়। বর্তমানে কর্নঝোড়া ঢেউফা নদীর জোয়ারে কানায় কানায় ভরে ওঠে। কিন্তু দিনের শেষে ভাটা পড়ে শুকিয়ে যায় নদীর পানি। এর বুক জুড়ে রয়েছে বিশাল বালুচর। যার নির্মানকাজে ব্যবহারের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে শহরে। এটি যেন পাহাড়ের কুল ঘেঁষা বিকল্প সমুদ্র সৈকত। এ পাহাড়ের পাশে রয়েছে ওয়ার্ল্ড ভিশন, বিডিআর ক্যাম্প, বিট অফিস, কারিতাস ও রাবার বাগান। রাজার পাহাড়ের এ নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে এসে আদিবাসীদের জীবন যাত্রার নানা দিক জানতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন অনেকেই। ওইসব জানতে পেরে ভ্রমনের চাওয়ার চেয়ে আরো বেশি পেয়ে যান বলে মন্তব্য করেন ভ্রমন পর্যটকরা।

কেউ গারো পাহাড়ে এলে পাশে লাউচাপড়া অবসর কেন্দ্র, রাজার পাহাড় আর গারো পাহাড়ের মনোমুগ্ধকর স্থানগুলো অবলোকনের যেন অপূর্ব সুযোগ। যা মনে আলাদাভাবে স্থান করে নিবে ভ্রমন পিপাসুদের। এখানে যেকোনা যান বাহনে আসা যায়। তাহলে আর দেরি নয়। ঘুরে আসুন গারো পাহাড়।

অবস্থান:শ্রীবরদী, শেরপুর।

শেরপুরের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান গুলো হচ্ছেঃ – ঘাগড়া লস্কর খান মসজিদ, শের আলী গাজীর মাজার, মধুটিলা ইকোপার্ক, গজনী অবকাশ কেন্দ্রে। আপনি চাইলে সময় করে এ গুলো থেকেও ঘুরে আসতে পারেন।

কিভাবে যাবেনঃ

দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে বাসে বা যে কোনো যানবাহনে আসা যায় শেরপুর শহরে। এখান থেকে মাত্র ৩৪ কিলোমিটার দূরে শ্রীবরদীর কর্ণঝোরা বাজার। বাস, টেম্পুসহ যে কোনো যানবাহনে আসা যায় মনোমুগ্ধকর নয়ানিভিরাম স্থান রাজার পাহাড় থেকে বাবেলাকোনায়। পাশেই রয়েছে অবসর কেন্দ্র। রাত হলে সেখানে থাকার জন্য রয়েছে নিরাপত্তাবেষ্টিত আবাসিক ভবন। কম খরচে ,কম সময়ে এ গারো পাহাড় আপনাকে দেবে অনাবিল আনন্দ।

 

তথ্য সংগ্রহ ও উপস্থাপনায়: ভ্রমণ পাগল,
সর্বশেষ আপডেট হয়েছে: ফেব্রুয়ারি 28, 2018

রাজার পাহাড় – শ্রীবরদী, সম্পর্কে পর্যটকদের রিভিউ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.